মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর আদর্শ ও জীবনচরিত্র - M.A IT FIRM

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর আদর্শ ও জীবনচরিত্র

 মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( স.) এর আদর্শ ও জীবনচরিত্র

হযরত মুহাম্মদ  ( সঃ) এর দেখানো পথ অনুসরণ করে যারা শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন এবং তাদের জীবন আদর্শ দ্বারা মানবজাতিকে সঠিক পথ চলতে অনুপানিত ও উৎসাহিত করেছেন, তাদের জীবনের ভালো দিকগুলোই হল আমাদের জন্য আদর্শ। আদর্শ জীবন চরিত্রের বৈশিষ্ট্য দুই প্রকার (১) গ্রহণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য(২) বর্জনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।


গ্রহণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলো হল মানুষের মাঝে সততা, বিশ্বস্ততা, উদারতা ও সমন্বয় থাকা কি খবর, আত্ম সংযম, পরোপকারিতা, স্বমর্মিতা, সহনশীলতা, বিনয় ও নম্রতা থাকা। বর্জনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলো হল মানুষের মাঝে হিংসা, বিদ্বেষ, হয় জিজ্ঞাসা ও গোড়ামী থাকা, আরম্বরতা, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, পরনিন্দা অশোক থাকা, অসনশীলতা, দলাদলি, সাম্প্রদায়িকতা,অন্যায়, অত্যাচার, ব্যভিচার বেহায়াপনা সহ অশোভন সকল খারাপ আচরণে লিপ্ত থাকা। 

পোস্টস সূচিপত্র:মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর আদর্শ ও জীবনচরিত্র

ভূমিকা

মানুষের সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহতালার প্রেরিত নবী ও রাসূলগণের মধ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ( সঃ) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল। তার আবির্ভাব এর পূর্বে আরবের মানুষ চরম বড় বড় তা ও অজ্ঞেতায় ডুবে ছিল। তাদের সামাজিক, সংস্কৃতিক ,রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল চরমভাবে অধিপতিত। তারা অসংখ্য মূর্তি তৈরি করত এবং মূর্তির পূজা করত। 

গোত্রের ভিন্নতার কারণে তাদের মূর্তি ও ভিন্ন ভিন্ন ছিল। তারা পবিত্র কাবা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি স্থাপন করেছিল। কালের এই চরম অবক্ষয়ের কারণে একজন পদপ্রদর্শক হিসেবে আল্লাহতালা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবী হযরত মুহাম্মদ( সঃ) কে প্রেরণ করেন। আল্লাহ তার নিকট মহাগ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ করেন। মহানবী( সঃ) মানুষকে মুক্তির পথ প্রদর্শন কর

আরো পড়ুন: আখ চাষের প্রয়োজনীয়তা এবং আখের গুড় তৈরি প্রক্রিয়া

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর সমকালীন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর সমকালীন সামাজিক ও সংস্কারক অবস্থা যেমন ছিল তা হল নিম্নরুপ

 সামাজিক অবস্থা: মহানবী( সঃ) এর আবির্ভাব এর পূর্বে আরব সমাজের লোকেরা নবী ও রাসূলের শিক্ষা ভুলে অসামাজিক কার্যালাপে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের আচার-আচরণ ও চালচলন ছিল বর্বর ও মানবতা বিরোধী। তাই সেই যুগকে আইয়্যামে জাহিলিয়্যা বা অজ্ঞতার যুগ বলা হয়। সুষ্ঠ ও সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিল না।  মানুষের জানমাল ইজ্জতের কোন নিরাপত্তা ছিল না। নরো হত্যা, রাহাজানি, খুন, ডাকাতি, মারামারি কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া, জুয়া খেলা, মদ্যপান, সুদ, ঘুষ ব্যাভিচার ছিল তখনকার প্রচলিত ব্যাপার। তৎকালীন সমাজে নারীর কোন মর্যাদা ছিল না। নারীদের সামাজিক জীব মনে করা হতো না; বরং দাসী হিসেবে তাদের বিক্রি করা হতো, ভোগবিলাসের বস্তু মনে করা হতো। 


 যার বর্ণনা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ভাবে এসেছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সংবাদ দেওয়া হয় তখন তাদের মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসমনীয় মনস্তাপে কৃষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় থেকে আত্মগোপন করে। তা চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে। সাবধান তারা যা সিদ্ধান্ত পরে তা খুবই নিকৃষ্ট। এক কথায় অপরাধের এমন কোন দিক ছিল না যা তারা করত না।

আরো পড়ুন:আখ চাষের প্রয়োজনীয়তা এবং আখের গুড় তৈরি প্রক্রিয়া

সাংস্কৃতিক অবস্থা: জাহিলি যুগে আরবের অধিকাংশ লোক নিরক্ষর ও অশিক্ষিত থাকলেও সাহিত্যের প্রতি তাদের খুব অনুরাগ ছিল। তাদের অনেকেই মুখে মুখে গীতি কবিতা চর্চা করতো। তৎকালীন আরবে উকাজ মেলা নামে বাৎসরিক একটা মেলা হত। মেলায় তৎকালীন সময়ে প্রসিদ্ধ কবিগণ তাদের স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতো। যে সব কবিতা সেরা বিবেচিত হতো তা সোনালী বর্ণে লিখে পবিত্র কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। 

আরবি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ আস-সাবউল মুআল্লাকাত জাহিলি যুগে রচিত। কবিতা রচনা কারণে আরব জাহিলি যুগেই বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছিল। তাদের কবিতা মানেই দিক থেকে ছিল খুব উন্নত। হযরত ইবনে আব্বাস(রা.) বলেন, যখন তোমরা আল্লাহর কিতাবের কোন কিছু বুঝতে না পারো তবে তার অর্থ আরবদের কবিতায় তালাশ করে। কারণ কবিতা তাদের জীবনালেখ্য। এতে বোঝা যায় প্রাচীন আরবের সাংস্কৃতিক জীবন অসংখ্য প্রবাদ প্রবচন, নানা কিংবদন্তি ও মুখরোচক কাহিনী প্রচলন ছিল। তবে তাদের সংস্কৃতিক চর্চার প্রধান মাধ্যম ছিল কবিতা।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর জন্ম, শৈশব ও কৈশোর

জন্ম ও শৈশব:আরব যখন চরম জাহেলিতে নিমজ্জিত তখন আরবের কুরাইশ বংশে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর জন্ম হয় তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ। দাদার নাম আব্দুল মোতালিব। মাতার নাম আমিনা। নানার নাম ওয়াহাব। জন্মের পূর্বেই তার পিতা ইন্তেকাল করেন। দাদা আব্দুল মোতালিব তার নাম রাখেন মুহাম্মদ। আর তার মাতা নাম রাখেন আহমাদ। জন্মের পর মহানবী হযরত মুহাম্মদ  ( সঃ) ধাত্রী মা হালিমার ঘরে লালিত পালিত হন। হালিমা বনু সাদগোত্রের লোক ছিলেন। আর বনু সাদ গোত্রে বিশুদ্ধ আরবিতে কথা বলতো। 

ফলে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) ও বিশুদ্ধ আরবি ভাষা কথা বলবেন। শৈশবকাল থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর মাঝে ন্যায় ও ইনসাফের নজির দেখা যায়। তিনি ধাত্রী হালিমার একটি স্তন পান করতেন অন্যটি তার দুধ ভাই আব্দুল্লাহর জন্য রেখে দিতেন। হালিমা মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) কে পাঁচ বছর লালন পালন করে তার মা আমিনের নিকট রেখে যান। তার বয়স যখন ছয় বছর তখন তার মাতা ইন্তেকাল করেন। প্রিয় নবী ( সঃ) অসহায় পড়লে তার লালন পালনের দায়িত্ব নেন দাদা আব্দুল মোতালিব। আর আট বছর বয়সে তার দাদা ও মারা যান। এরপর লালন পালনের দায়িত্ব নেন চাচা আবু তালিব।

আরো পড়ুন: কেন শসা খাবেন এবং এর প্রয়োজনীয়তা কি

 কৈশোর: চাচা আবু তালিব অত্যন্ত আদর স্নেহ দিয়ে হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) কে লালন পালন করতেন। আবু তালিব আর্থিক অবস্থা ছিল অসচ্ছল। হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর অবস্থা অবলোকন করে চাচার সহযোগিতায় কাজ করা শুরু করেন। তিনি মেষ চড়াতেন। মেষেপালক রাখাল বালকদের জন্য তিনি ছিলেন উত্তম আদর্শ। তাদের সাথে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতেন। কখনোই তাদের সাথে কলহ বা ঝগড়া-বিবাদ করতেন না।

 তিনি ১২ বছর বয়সে ব্যবসার উদ্দেশ্যে চাচার সঙ্গে সিরিয়া যান। যাত্রাপথে বুহায়রা নামক এক পাদ্রির সাথে দেখা হলে বুহায়রা মোহাম্মদকে অসাধারণ বালক বলে উল্লেখ করেন এবং ভবিষ্যৎ বাণী করে বলেন যে এই ভালোকই হবে শেষ জামানার আখেরি নবী( শেষ নবী)। শৈশবকাল থেকেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) ছিলেন সত্যবাদী ও শান্তিকামী। সিরিয়া থেকে ফিরে এসে তিনি ফিজার যুদ্ধে বিভীষিকা দেখালেন। যুদ্ধটি শুরু হলো নিষিদ্ধ মাসে। তাছাড়া কায়ুস গোত্র অন্যায় ভাবে কোরাইশদের ওপর এই যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। এজন্য একে হারবুল ফিজার বা অন্যায় যুদ্ধ বলা হয়। পাঁচ বছর যাবত এই যুদ্ধ স্থায়ী হয়। হযরত মুহাম্মদ  ( সঃ) এর যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেননি তবে যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এই যুদ্ধ বহু মানুষ আহত ও নিয়ত হয়। তাতে তার কোমল হৃদয়ে কেঁদে ওঠে। আহতদের আর্তনাদ শুনে তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন। 



শান্তি কামিনী মানুষ হিসেবে এই অশান্তি তার সহ্য হলো না। তাই তিনি আরবের শান্তি কামি যুবকদের নিয়ে ’হিলফুল ফুজুল’ গঠন করলেন। এই সংঘের উদ্দেশ্য ছিল আর্তের সেবা, অত্যাচারীতকে প্রতিরোধ ও অত্যাচারীতকে সাহায্য করা শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠান করা এবং গোত্রে গোত্রে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখা। হযরত মুহাম্মদ  ( সঃ) এর চারিত্রিক গুণাবলী আমানতদারি, সত্যবাদিতা, ন্যায় নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার কারণে তৎকালীন আরবের লোকজন তাকে আল আমিন (বিশ্বাসী)উপাধি দিয়েছিল। নবুয়ত প্রাপ্তির পর যারা তাকে অস্বীকার করেছিল তারাও তাকে মিথ্যাবাদী বলতে পারেনি।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর যৌবন কাল, নবয়ত প্রাপ্তি ও ইসলাম প্রচার

যৌবনকাল: যুবক মোহাম্মদ ( সঃ) এর সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, ও চারিত্রিক গুণাবলী সংবাদ মক্কার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লো। তখনকার আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী বিদুষী ও বিধবা মহিলা হযরত খাদিজা ( রাঃ) তার ব্যবসার দায়িত্ব হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর উপর অর্পণ করেন।হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) তার ব্যবসায়িক কাজে সিরিয়া যান। তিনি এ ব্যবসায় আশাতীত লাভবান হয়ে দেশে ফিরে আসেন। যুবক হয়ে ও খাদিজা( রাঃ) ব্যবসায় হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) যে দায়িত্বশীলতা ও সততার পরিচয় দিয়েছিলেন তা সর্বকালের সকল যুবক এর জন্য আদর্শ। 

খাদিজা হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর গুণাবলী পর্যবেক্ষণ করার জন্য তার অত্যন্ত বিশ্বস্ত কর্মচারী মাইসারা কে হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর সাথে সিরিয়া পাঠান। মাইসারা সিরিয়া থেকে ফিরে এসে হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) চারিত্রিক গুণাবলী বর্ণনা করেন। তাতে মুগ্ধ হয়ে খাদিজা নিজেই হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর নিকট তার বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। চাচা আবু তালিবের অনুমতি নিয়ে হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) খাদিজাকে বিবাহ করেন। এ সময় হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর বয়স ছিল ২৫ বছর এবং খাদিজা (রাঃ) এর বয়স ছিল ৪০ বছর। বিবাহের পর খাদিজা আন্তরিকতায় ও সৌজন্যে হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) প্রচুর সম্পদের মালিক হন। কিন্তুহযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এই সম্পদ নিজের ভোট বিলাসে দেয় না করে অসহায় দুঃখী ও পীড়িত গরিব মানুষ মিসকিনদের সেবায় ব্যয় করতেন।

আরো পড়ুন: ফুলকপি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং বিভিন্ন জাতের ফুলকপি চাষের নিয়মাবলী

নবুয়ত প্রাপ্তি: হযরত খাদিজা(রাঃ) এর সাথে বিবাহের পরহযরত মুহাম্মদ ( সঃ) মক্কার অদুরে হেরা পর্বতের গুহায় গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। দীর্ঘদিন ধ্যানে মগ্ন থাকার পর ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র রমজান মাসের কদরের রাতে হযরত জিব্রাইল(রাঃ) তার নিকট ওহী নিয়ে আসেন এবং তিনি নবুয়াত প্রাপ্ত হন। এই বিষয়গুলো হতে আমরা জানতে পারলাম হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) নবুয়তপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) কেমন ছিলেন তার জীবন যাপন কেমন ছিল আমাদের উচিত তাকে অনুসরণ করে আমাদের জীবন পরিচালনা করা।



ইসলাম প্রচার: নবুয়াত প্রাপ্তির পর মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) বিপথগামী মতবাসীর নিকট ট্রাম প্রচার আরম্ভ করেন। তিনি ঘোষণা করেন, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর রাসূল। তিনি আরো ঘোষণা করেন, ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম, আল -কুরাআন এ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ। আল্লাহ সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা নিয়ামক এবং সবকিছুর মালিক। তিনি সকল সৃষ্টির জীবন ও মৃত্যু দানকারী। প্রথম তিন বছর তিনি গোপনে তারা আত্মীয়-স্বজনকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। পরে আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ্যে ইসলামের পথে দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন।

 এতে মূর্তি পূজারীরা তার বিরোধিতা করতে শুরু করলো। নবীকে তারা ধর্মদ্রোহী, পাগল বলে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে লাগলো। তারা তার ওপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চালায়, পাথর করে আঘাত করল, আবর্জনা নিক্ষেপ করল, অপমানিত ও লাঞ্ছিত করল।হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) কে নেতৃত্ব, ধন সম্পদ, সুন্দরী নারীর লোভ দেখালো। তিনি বলেন, আমার এক হাতে চন্দ্র আর অন্য হাতে সূর্য এনে দিলেও আমি এই সত্য প্রচার করা থেকে বিরত হব না। সত্য প্রচারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) যে আত্মত্যাগ, ধৈর্য এর পরিচয় দিয়েছেন তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সত্য ও ন্যায়ের পথে আত্মত্যাগী ধৈর্যশীল হওয়া উচিত।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর মাদানী জীবন

মক্কার কাফিররাহযরত মুহাম্মদ ( সঃ) কে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত রাখতে না পেরে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করলেন। মক্কার তুলনায় মদিনায় শান্ত ও নির্মল পরিবেশে এসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করলেন আওস ও খাজরাজ বৌদ্ধদের মধ্যে চলমান দীর্ঘদিনের যুদ্ধ বন্ধ করলেন।

 মুজাহির (ইসলামের উদ্দেশ্যে মক্কা হতে মদিনায় হিজরতকারী) ও আনসারদের(মুজাহিদদের সার্বিকভাবে সাহায্যকারী মদিনা বাসী) মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ও সোহার্দ্য স্থাপন করলেন। সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হলো। গড়ে তুললেন ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সুশৃংখল সমাজ ব্যবস্থা। সকল মুসলিমদের মিলন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললেন মসজিদে নববী। আমাদেরও উচিত রাষ্ট্রের কল্যাণে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সাম্পদায়িকতা পরিহার করে সুন্দর সমৃদ্ধ গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র গঠন করা।

আরো পড়ুন: ১০টি পুষ্টিগুণ খাবার যা আমাদের শরীরের নিত্য প্রয়োজনীয়

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর মক্কা বিজয় ও বিদায় হজ্ব

মক্কা বিজয়: অনুকূল পরিবেশে পাওয়ায় মদিনায় ইসলাম প্রচারের ও পোষার খুব দ্রুত ঘটতে লাগলো। ষষ্ঠ হিজরীতে মক্কার কুরাইশরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) ও মুসলমানদের সাথে হুদাইবিহার সন্ধি করে। কুরাইশরা সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করলে রাসূল ( সঃ) ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে ১০০০০ মুসলিম নিয়ে মক্কা অভিমুখে অভিযান পরিচালনা করেন। মক্কার অদূরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) তার তাবু স্থাপন করেন। কুরাইশরা মুসলিমদের এই বাহিনী দেখে ভীতু হলো। তারা কোন প্রকার বাধা দেওয়ার সাহস করলো না। বিনা রক্তপাতে ও বিনা বাধায় মুসলিম বাহিনী মক্কা বিজয় করল মক্কা বিজয়ের পর মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন।



বিদায় হজ ও এর ভাষন: মক্কা বিজয়ের পর দলে দলে লোক ইসলাম গ্রহণ করতে লাগলো। আরবের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসলাম পৌঁছে গেল।মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) বুঝলেন আর বেশিদিন পৃথিবীতে তার থাকা হবে না। তাই তিনি৬৩২ খ্রিস্টাব্দে দশম হিজরীতে হজ করার ইচ্ছা করলেন। এই উদ্দেশ্যে উক্ত সালের জিলকদ মাসে লক্ষাধিক সাহাবী নিয়ে হজ করতে গেলেন, যা বিদায় হজ নামে পরিচিত। এই হজে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর সহধর্মিনী গণ তার সঙ্গে ছিলেন। জুল হুলাইফা নামক স্থানে এসে সকলে ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ এর উদ্দেশ্যে রওনা হন। জিলহজ মাসের নবম তারিখে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত জন সমুদ্রে উদ্দেশ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এক যুগান্তরী ভাষণ দেন এই ভাষণে বিশ্ব মানবতার সকল কিছুর দিকনির্দেশনা ছিল। আরাফাতের ময়দানের পার্শ্বে জাবালে রহমত নামক পাহাড়ে উঠে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করে বলেন,

  1. হে মানব সকল আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো আমি আগামী বছর এখানে তোমাদের সাথে সমবেত হতে পারব কিনা আমি জানিনা
  2. আজকের এদিন এই স্থান এই মাস যেমন পবিত্র তেমনই তোমাদের জীবন ও সম্পদ পরস্পরে নিকট পবিত্র
  3. মনে রাখবে অবশ্যই একদিন সকলকে আল্লাহর সামনে উপস্থিতি হতে হবে। সেদিন সকলকে নিজ নিজ কাজের হিসাব দিতে হবে।
  4. হে বিশ্বাসীগণ স্ত্রীদের সাথে সদয় ব্যবহার করবে। তাদের ওপর তোমাদের যেমন অধিকার আছে তেমনি তোমাদের ওপর তাদের অধিকার রয়েছে
  5. সর্বদা অন্যের আমানত রক্ষা করবে এবং পাপ কাজ হতে বিরত থাকবে ওষুধ খাবে না
  6. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না আর অন্যায় ভাবে একে অন্যকে হত্যা করবে না
  7. মনে রেখো দেশ বর্ণ গোত্র সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মুসলমান সমান। আজ থেকে বংশগত শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হলো। শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি হল আল্লাহ ভীতি ও সৎকর্ম। যে ব্যক্তি সবচাইতে সেরা সে নিজের সৎকর্ম দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
  8. ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না পূর্বের অনেক জাতি এ কারণেই ধ্বংস হয়েছে। নিজ যোগ্যতা বলে ক্রীতদাস যদি নেতা হয় তার অবাধ্য হবে না বরং তার অনুগত্য করবে।
  9. দাস দাসীদের প্রতি সদা ব্যবহার করবে। তোমরা যা আহার করবে ও পরিধান করবে তাদেরকেও তা আহার করাবে ও পরিধান করাবে। তারা যদি কোন অমারজনীয় অপরাধ করে ফেলে, তবে তাদের মুক্ত করে দেবে, তবুও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করবে না। কেননা তারাও তোমাদের মতই মানুষ, আল্লাহর সৃষ্টি। সকল মুসলিম একে অন্যের ভাই এবং তোমরা একই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।
  10. যাইলি যুগের সকল কুসংস্কার ও হত্যার প্রতিশোধ বাতিল করা হলো। তোমাদের পথ-প্রদর্শনের জন্য আল্লাহর বাণী এবং তার রাসূলের আদর্শ রেখে যাচ্ছি। এগুলো যতদিন তোমরা আঁকড়ে থাকবে ততদিন তোমরা বিপথগামী হবে না।
  11. আমি শেষ নবী। আমার পর কোন নবী আসবেনা।
  12. তোমরা যারা উপস্থিতি আছো তারা অনুপস্থিতদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দেবে।

তারপর হযরত মুহাম্মদ সাঃ আকাশের দিকে তাকিয়ে আওয়াজ করে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ আমি কি তোমার বাণী সঠিকভাবে জনগণের নিকট পৌঁছাতে পেরেছি, সাথে সাথে উপস্থিত জনসমুদ্র হতে আওয়াজ এলো, হ্যাঁ। নিশ্চয়ই পেরেছেন। অতঃপর মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো।

উপসংহার

উপরোক্ত বিষয় হতে আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) জীবনী সম্পর্কে জানলাম এবং উনার জীবন কিভাবে পরিচালনা করে গেছেন সেই সম্পর্কে জানলাম। এই বিষয় হতে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবন তাকে অনুসরণ করে পরিচালনা করতে পারলে আমাদেরও সুন্দর একটি জীবন উপভোগ করার সাধ্য সৃষ্টিকর্তা তৈরি করে দিবেন। আমরাও তার মত সহনশীলতা মানবতা সামাজিকতা ভদ্রতা সমস্ত কিছু বজায় রেখে নিজেদের জীবন উপভোগ করব।

No comments:

Post a Comment