আল কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন করা - M.A IT FIRM

আল কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন করা

 আল কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন করা

আল কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানী কিতাব। কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সকল মানুষের সার্বিক জীবন বিধান ও দিকনির্দেশনা এতে বিদ্যমান। সুতরাং এর সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ স্বয়ং এর সংরক্ষণের ভার গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমি এর সংরক্ষক। 


আল কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন করা

আল্লাহ তাআলা স্বয়ং আল কুরআন এর সংরক্ষক। তিনি তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই কিতাব সংরক্ষণ করেন। এজন্য আজ পর্যন্ত এই কিতাবে একটি হরফ বা অক্ষর হরকত বা নুকতার ও পরিবর্তন হয়নি। এটি যেভাবে নাযিল হয়েছিল আজও ঠিক সেভাবেই বিদ্যমান। আর কিয়ামত পর্যন্ত অভিকৃত থাকবে।

পোস্ট সূচীপত্র: আল কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন করা

ভূমিকা

আল কুরআন আরব দেশে মহানবী (স.) এর উপর নাযিল হয় এই সময় মহানবী (স.) সাথে সাথে নাযিলকৃত আয়াত মুখস্ত করে নিতেন। এরপর বার বার তিলাওয়াতের মাধ্যমে তার স্মৃতিতে ধরে রাখতে চেষ্টা করতেন। আল কুরান মুখস্ত করনে রাসুল  (স.) এর দ্রুত পাঠ ও ব্যাকুলতা দেখে আল্লাহ তাআলা তাকে সান্তনা দেন আল্লাহ বলেন, তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি দ্রুত আপনার জিহবা তার সাথে সঞ্চালন করবেন না। এটা সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমার ওই। এরপর রাসূল  (স.) এর ব্যাকুলতা দূরীভূত হয় এবং তিনি সহজেই কুরআনের আয়াতগুলো মুখস্ত করে সংরক্ষণ করতে লাগলেন

আল কুরআন সংরক্ষণ ও গুরুত্ব

আল কুরআন নাজিল হলো রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবীগণকে তা মুখস্থ করতে বলতেন। সাহাবীগন্তা মুখস্ত করতেন, দিনরাত্রি লাভ করতেন, নামাজে পাঠ করতেন এবং পরিবার-পরিজন স্ত্রী সন্তান ও বন্ধুবান্ধবদের মুখস্থ করাতেন। গভীর রাতে তাদের ঘর থেকে কুরান তেলাওয়াত এর গুনগুন আওয়াজ শোনা যেত। অনেক সময় রাসুলুল্লাহ (স.) স্বয়ং তাদের গৃহপ্রাসে গিয়ে তেলাওয়াত শুনতেন। কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষা দেওয়ার জন্য নবী করীম (স.) গনকে নানা স্থানে প্রেরণ করতেন। 

আল কুরআন সংরক্ষণ ও গুরুত্ব



যেমন হিজরতের পূর্বে তিনি হযরত মুসআব ইবনে উমাইর (রা.) ও আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) কে কোরআন শিক্ষা দানের জন্য মদিনায় প্রেরণ করেন। এভাবে মুখস্ত করার মাধ্যমে আল কুরআন সর্বপ্রথম সংরক্ষণ করা হয়। উল্লেখ্য, তৎকালীন আরবদের স্মৃতিশক্তি ছিল খুবই তীক্ষ্ণ। তারা কোন জিনিস শিখলে তা আর কখনো ভুলতো না। ফলে এই অসাধারণ স্মরণশক্তির কারণে পবিত্র কুরআন সহজেই তাদের স্মৃতিতে সংরক্ষিত হয়। এছাড়া সে সময় লিখিতভাবে ও আল কুরআন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। 
আরবদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক লোকই শিক্ষিত। তাছাড়া সেসময় লেখার উপকরণ ছিল দুষ্প্রাপ্য। এজন্য সে সময় আল কুরআন গ্রন্থাকারে  লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়নি। তবে আল কুরআনের কোন অংশ বা আয়াত নাযিল হলে সাথে সাথেই লিখে রাখা হতো। খেজুর গাছের ডাল, পশুর চামড়া ও হার, পাথর, গাছের পাতা ইত্যাদি ছিল তখনকার লেখনীয় উপকরণ। সাহাবীগণ এগুলোতে আল কুরআনের আয়াত লিখে তা সংরক্ষণ করতেন। যেসব সাহাবীগণ লেখাপড়া জানতেন তারা প্রায় সকলেই কুরআন লিখার মর্যাদা লাভ করেছিলেন। কে বলা হয় খাতিবে ওহী বা ওহী লেখক। 

আল কুরআন সংরক্ষণ ও গুরুত্ব

তারা ছিলেন সংখ্যায় মোট ৪২ জন। এদের মধ্যে প্রধান ছিলেন হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রা.)। এছাড়া হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রা.) হযরত ওমর ফারুক (রা.) হযরত ওসমান (রা.) হযরত আলী (রা.) হজরত মুআবিয়া (রা.) হযরত উবাই ইবনে কা ’ব (রা.) হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা  (রা.) হযরত আমর ইবনে আস (রা.) হযরত জুবায়ের ইবনে আওয়াম (রা.) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আরকাম (রা.) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য। এদের কেউ না কেউ সর্বদা রাসূল (স.) এর সঙ্গে থাকতেন এবং কুরআনের কোন অংশ বা আয়াত নাজিল হলে সাথে সাথে তা লিখে নিতেন। এভাবে লেখনীয় মাধ্যমে আল কুরআন কে সংরক্ষণ করা হয়।

আল কুরআন সংকলন ও গুরুত্ব

মহানবী (স.) এর সময়ে আল কুরআন মুখস্ত ও লেখনীয় মাধ্যমে পুরোপুরি সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু সে সময় তা একত্রে গ্রন্থ বদ্ধ করা হয়নি। বরং তার তথ্য বদনে লিপিবদ্ধ টুকরোগুলো নানাজানের নিকট সংরক্ষিত ছিল। হযরত আবু বক্কর (রা.) ই সর্বপ্রথম কুরআন সংকলনের উদ্যোগ নেন।হযরত আবু বক্কর (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। তার সময়ে নবুয়তের কতিপয় মিথ্যা দাবিদার বা ভন্ড নবী ও যাকাত অস্বীকারকারীর আবির্ভাব ঘটে। তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। 

আল কুরআন সংকলন ও গুরুত্ব

এরূপ একটি যুদ্ধ ছিল ইয়ামামার যুদ্ধ। এটি মুসালিমা কাজ্জাব নামক ভন্ড নবীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। এই যুদ্ধে বউ সংখ্যক কুরআনের হাফেজ সাহাবী শাহাদত বরণ করেন। এতে হযরত ওমর (রা.) উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি ভাবলেন যে, এভাবে হাফিদ সাহাবীগণ শাহাদাত বরণ করতে থাকলে একসময় কুরআন মুখস্থ কারী লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলে কুরআন বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দেবে। সুতরাং তিনি হযরত আবু বক্কর (রা.) কে কুরআন সংকলন করে গ্রন্থকারে লিপিবদ্ধ করার পরামর্শ দান করেন।

 পরামর্শ শ্রবণে হযরত আবু বক্কর (রা.) বলেন হে ওমর! রাসূলুল্লাহ (স.) যে কাজ করে যাননি তা আপনি কিভাবে করতে চাচ্ছেন। হযরত ওমর (রা.) বললেন, আল্লাহর শপথ! এতে কল্যাণ রয়েছে। এভাবে হযরত ওমর (রা.) বারবার অনুরোধ করায় হযরত আবু বক্কর(রা.) কুরআন সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি প্রধান ওহী লেখক সাহাবী হযরত যায়দ ইবনে সাবিত(রা.) কে এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন। হযরত যায়দ (রা.) কুরআন সংকলনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নিমুক্ত চারটি পন্থা অবলম্বন করেন

  1. হাফেজ সাহাবীদের তিলাওয়াতের মাধ্যমে প্রতিটি আয়াতের বিশুদ্ধতা ও নির্ভুলতা যাচাই করেন
  2. হযরত ওমর (রা.) এর হিফযের সাথে মিলে আয়াত বিশুদ্ধতা যাচাই করেন
  3. রাসূলুল্লাহ ে(স.) এর উপস্থিতিতে লিখিত হওয়ার ব্যাপারে ন্যূনতম দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ।
  4. চূড়ান্তভাবে লিখিত আয়াতগুলো অন্যান্য সাহাবীর সংরক্ষিত পান্ডলিপির সাথে তুলনা ও যাচাই করুন


এভাবে চরম সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে হরযত যায়দ ইবনে সাবিত (রা.) পবিত্র কুরআন সর্বপ্রথম গ্রন্থাকারে সংকলন করেন। এটাই ছিল সর্বপ্রথম গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ আল কুরআন। কুরআনের এই কপিটি হযরত আবু বক্কর(রা.) এর নিকট সংরক্ষিত ছিল। তার ইন্তিকালের পর একটি হরযত ওমর (রা.) এর তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত ছিল। হযরত ওমর(রা.) এর শাহাদাতের পর পবিত্র কুরআনের এই পান্ডলিপিটি কন্যা, উন্মুল মমিনিন হযরত হাফসা(রা.) এর নিকট সংরক্ষিত ছিল। তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান(রা.) এর খেলাফতকালে কুরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে নানা মতানৈকা দেখা দেয়। এর মূল কারণ ছিল বিভিন্ন গোত্রেও রীতিতে কুরআন পাঠ। মহানবী(স.) সহজ করণার্থে আরবদের সাতটি রীতিতে কুরআন পাঠ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। 


আরব গণ এই সাত রীতিতে ক পাঠের বিষয়টি জানতেন বলে প্রথমদিকে কোন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু ইসলামী খেলাফতের ব্যাপক বিস্ততির ফলে আরব গণ মুসলমান হতে লাগলো। তারা আরবি ভাষার এসব আঞ্চলিক কৃতি সমূহ সম্পর্কে সচেতন ছিল না। ফলে ভিন্ন ভিন্ন রীতিতে কুরআন পাটে তাদের ভিন্ন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এমন এক ঘটনা ঘটে আর্মেনিয়া আজারবাইজান অঞ্চলে জিহাদের সময়। এ সময় ভিন্ন রীতিতে কুরআন পাঠে মুসলমানদের মধ্যে ঝগড়া সূত্রপাত  ঘটে।

আল কুরআন সংকলন ও গুরুত্ব

 হযরত হুজাইফা ইবনে ইয়ামান(রা.) ঘটনাটি খলিফা হযরত ওসমান(রা.) কে অবহতি করেন। এমত অবস্থায় হযরত ওসমান (রা.) প্রধান সাহাবি গনের পরামর্শক্রমে কুরআন সংকলনের জন্য চারজন সাহাবীর একটি বোর্ড গঠন করেন। এরা ছিলেন হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর(রা.), সাঈদ ইবনে আস(রা.) এবং আব্দুর রহমান ইবনে হারিস(রা.) এই বোর্ডের নেতৃত্ব হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রা.) এর ওপর ন্যস্ত করা হয়। এভাবেই কোরআনের সংকলন করা হয় আর এর গুরুত্ব হিসেবে তখন গুরুত্ব সহকারে এই কাজগুলো করা হয়েছিল বলেই আমরা আল কুরআনের সঠিক এবং শুদ্ধ ভাবে পড়তে পারছি্

উপসংহার

আল কুরআন আসমানী কিতাবের সর্বশেষ কিতাব আল কোরআন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। সরাসরি আল্লাহ আল কুরআন নাযিল করেছেন বলেই একদম নির্ভুল ভাবে আল কুরআন নাযিল হয়েছে। এবং কোন প্রকার ভুল ব্যাখ্যা বা ভুল উচ্চারণ আল-কোরআনে নেই। উল্লেখ্য, পরবর্তী সময়ে পবিত্র কোরান আরও নবতর ও সহজ উপায়ে সংকলন করা হয়। মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত হাতের লিখার মাধ্যমে আল কুরআন সংকলন করা হতো।
 মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার এর পরবর্তীতে অন্তত সতর্কতার সাথে আল কুরআনের লক্ষ লক্ষ কপি মুদ্রণ করা হয়ে থাকে এমনকি বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ভাষায় এর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উপরোক্ত বিষয় হতে আমরা আল কোরআনের সংকলন এবং সংরক্ষণ বিষয়বস্তু বিষয়ে আমরা জেনেছি। কিভাবে আল কুরআন সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং কিভাবে তা সংকলন করা হয়েছে

No comments:

Post a Comment