করোলা খাওয়ার উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা এবং চাষাবাদের নিয়মাবলী
করলা একটি তেতো জাতীয় খাবার হলেও এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং সুস্বাদু। আমরা করলা নানাভাবে খেয়ে থাকি যেমন করলার ঝোল ভাজি চিংড়ির সঙ্গে ভাজি এবং মচমচে ভাজি করে করলা খাওয়া যায়। করলা যেমন একটি সুস্বাদু খাবার তেমনি করলাতে রয়েছে শারীরিক সুস্থতার ওষুধ। করলা চাষে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে কৃষক যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন।
এছাড়াও বাড়িরআনাচে কানাচে এই সবজির চাষ করা যায়। এর জন্য অধিক জায়গার প্রয়োজন হয় না অধিক খরচ হয় না যে কারণে আমাদের প্রায় সকলেরই আনাচে-কানাচে এই সবজির নিম্নমানের চাষ করা হয় যা পারিবারিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়।
পোস্ট সূচিপত্র: করোলা খাওয়ার উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা এবং চাষাবাদের নিয়মাবলী
- ভূমিকা
- করলার উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা
- হাইব্রিড জাতের করোলা চাষ
- যেভাবে করলা চাষে অধিক ফলন পাওয়া যায়
- করলা চাষের সঠিক পদ্ধতি ও নিয়মাবলী
- উপসংহার
ভূমিকা
করলা আমাদের সকলের প্রিয় একটি খাবার। বাণিজ্যিকভাবে করলার চাষ হলেও আমরা আমাদের বাড়ি আনাচে-কানাচে বা ফাকা জায়গাতে করলা চাষ করে থাকি। বর্তমানে করলা চাষ করে চাষিরা খুবই লাভবান হচ্ছেন কেননা বাজার মূল্য এবং গ্রামে করলা চাষ করে বা গ্রামের চাহিদা পূরণ করে বর্তমানে করলা শহরে বাজারজাত করা হচ্ছে যে কারণে ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে কৃষকেরা করলা চাষের উপরে আগ্রহী বাড়াচ্ছেন।
করলা
চাষে যেমন আগ্রহী বাড়ছে তেমনি এর চাহিদাও বাড়ছে করলাতে রয়েছে বিভিন্ন রোগের
প্রতিশোধক। করোলা সব ভাবেই খাবার হিসেবে খাওয়া যায় এ কারণে খাবারের তালিকায়
করলার ভূমিকা অপরিহার্য|। দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিদিনই করলা খেতে পারি করলা
খাওয়ার কোন সঠিক সময় বা নির্দিষ্ট সময় বলে কোন কিছু নেই। করলা স্বাস্থ্যের
জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার, যদিও এটি তেতো তবুও এ খাবারটি আমাদের সকলেরই
প্রিয়।
আরো পড়ুন: সিফিলিস রোগের লক্ষণ কি কি ও প্রতিকার
করলার উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা
করলা একটি তেতো সাবযুক্ত খাবার হলেও এটি সকলের পছন্দ নাও হতে পারে তবে এতে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ। তরলাতে রয়েছে পালং শাকের চাইতে দ্বিগুণ ক্যালসিয়াম ও
কলার থেকে দ্বিগুণ পটাশিয়াম। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার তালিকায় করলা রাখতে
পারেন।
ওজন কমায়: শরীরের ওজন কমাতে পরলার ভূমিকা অপরিহার্য নিয়মিত করোলা খেলে শরীরের
ওজন কমতে বাধ্য। যদিও এটা তেতো সাবযুক্ত একটি খাবার করলা তে রয়েছে লো
ক্যালোরি যা শরীরে ফ্যাট তৈরি হতে বাধা সৃষ্টি করে এবং শরীরের ওজন বৃদ্ধি হতে
দেয় না।
হজমে সহায়তা: করলাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
এবং খাবার হজম হতে সহায়তা করে। নিয়মিত করোলা খেলে পেট পরিষ্কার থাকে এবং
এসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
ডায়াবেটিকস রোগী: ডায়াবেটিস রোগীর জন্য করল্লা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা
পালন করে। কেননা দেখবেন ডায়াবেটিস রোগীদেরকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করলাকে
প্রধান খাবার হিসেবে দিয়েছেন ডায়াবেটিস রোগীর করলা খুবই উপকারী একটি খাবার যা
তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: করলা রয়েছে ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত করোলা খেলে শরীরের
নানারকম রোগ প্রতিরোধ করে এবং সুস্থ শরীর পাওয়া যায়।
ত্বকের জন্য: করলাতে থাকা মিনারেল ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী উজ্জ্বল রাখতে এবং
ত্বকের নানা রকম দাঁত চোখ থেকে দূরে রাখতে করলা খুবই উপকারী হিসেবে কাজ করে। এ
ক্ষেত্রে অনেকেই করলার জুস করেও খেতে পারেন অথবা করলা বিলিন্ডারে পিছে নিয়ে
ত্বকের উপরে মেসেজ করলে ত্বকের নানা রকম দাগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে।
হাইব্রিড জাতের করোলা চাষ
তাই হাইব্রিড জাতের করল চাষে আগ্রহী কৃষক বেশি তবে হাইব্রিড জাতের
করলা চাষ করার জন্য এক্সট্রা কিছু চাষাবাদের নিয়মাবলী রয়েছে। এসব নিয়মাবলী
মেনে করলা চাষ করলে অবশ্যই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশীয় করল যেমন
বাড়ির আনাচে-কানাচে এখানে সেখানে রোপন করা যায় তেমনি করে হাইব্রিড জাতের করলাও
বাড়িতে ব্যক্তিগত খাবার জন্য চাষাবাদ করা যায়। শুধুমাত্র যে বাণিজ্যিকভাবে
হাইব্রিড করলা চাষ করা যায় এমনটি নয়।
আরো পড়ুন: যক্ষা হলে করণীয় কি এবং এর প্রতিকার
যেভাবে করলা চাষে অধিক ফলন পাওয়া যায়
আমরা সকলেই জানি কিভাবে করলা চাষ করতে হয়। বা সবাই কমবেশি বাড়ির আনাচে-কানাচে করলার গাছ রোপণ করে থাকি বা বীজ রোপন করে থাকি। এটা শুধুমাত্র আমাদের ব্যক্তিগত পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য। কিন্তু যখন বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করা হবে তখন যদি ভালো ফলন না পাওয়া যায় তাহলে করলা চাষে কৃষকের আগ্রহ নষ্ট হবে এবং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এজন্যই আগে জানতে হবে কিভাবে।
এবং এ সকল নিয়ম মেনে করলা চাষ করলে অবশ্যই করলার অধিক ফলন পাওয়া যায়। আমরা জানবো কিভাবে করলো চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যায়, করলা চাষের জন্য প্রথম একটি জমি নির্বাচন করতে হবে সে জমিটি অবশ্যই ভালো জমি হতে হবে। করলার অধিক ফলন পাওয়ার জন্য অবশ্যই ভালো বীজ সংগ্রহ করা জরুরি। কেননা ভালো বীজ ভালো ফসল।
করলার বীজ যদি ভালো না হয় তাহলে সেই ব্রিজ থেকে ভালো ফলন কখনোই আশা করা সম্ভব নয় বা আশা করা যায় না। এ কারণে করলা চাষের পূর্বে অবশ্যই ভালো বীজ নির্বাচন করতে হবে। ভালো বীজ নির্বাচনের জন্য কৃষি অধিদপ্তর বা কৃষি অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ করে ভালো বীজ ক্রয় করতে হবে। এবং ভালো ব্রিজেই ভালো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব সেইসঙ্গে ভালোভাবে পরিচর্যা পাশাপাশি ভালো উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করা যায়।
আরো পড়ুন:কমলা লেবু খাওয়ার উপকারিতা কি
করলা চাষের সঠিক পদ্ধতি ও নিয়মাবলী
করলা চাষের বিভিন্ন নিয়মাবলী রয়েছে। একেক জন বা একেক কৃষক একেক নিয়মাবলী অনুযায়ী করলা চাষ করেন তবে সঠিক নিয়ম মেনে করলা চাষ করলে তবেই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে আমাদেরকে জানতে হবে করল চাষের সঠিক নিয়ম। করলা দুই পদ্ধতিতে চাষ করা যায় প্রথমত সরাসরি মাটিতে পড়লার বীজ রোপন করে মাটিতে রেখে করলা উৎপাদন করা যায়। আবার করলার জন্য জমির উপরে দুই থেকে তিন ফিট উঁচু করে মাথা করে সেখানে করলা চাষ করা যায় তবে করলা চাষের সঠিক পদ্ধতি হিসেবে আমরা জমির উপরে মাচা করে করলো চাষকেই বলবো কেননা এতে রোগ বালাই আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং করলার উৎপাদনে বেশি হয়। নিম্নরূপ দেখব কিভাবে করোলা চাষ করা যায়।
প্রথমত জমিতে : জমিতে করলা চাষের জন্য জমিটি ভালো হবে চাষাবাদ করার পর সেখানে তিন থেকে পাঁচ ফিট পর পর সারিবদ্ধ ভাবে ড্রেন তৈরি করতে হবে এবং ড্রেনের সম্পূর্ণ মাটি উপরে রেখে দিতে হবে সমান করে এই ড্রেনটি সাধারণত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বা প্রয়োজনীয় পানি রাখার জন্য করা হয়। এরপরে করলার বীজ রোপন করে দিতে হবে, করলার বীজ রোপন হয়ে গেলে কিছুদিন পর চারা গাছের উৎপাদন হয় এবং এই গাছগুলো মাটিতেই পড়ে থাকে।
এভাবেই করলা গাছে ধরে এবং এখান থেকে পরবর্তীতে করলা হলে তোলা যায়। এছাড়াও মাটিতে করলা চাষের জন্য আরও পরিচর্যা করতে হয় যেমন নিয়মিত শেষ ব্যবস্থা করা রাখা আগাছা মুক্ত রাখা পোকামাকড় অথবা কোন রোগ দেখা দিলে তার জন্য ওষুধ স্প্রে করা অথবা সার প্রয়োগ করার মাধ্যমে করলার জমিতে পরিচর্যা করতে হয় তবে অবশ্যই করলা মাটিতে রোপন করলে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। তবে একটি ভালো ফলন উৎপাদনের আশা করা যায়। মাটিতেও হাইব্রিড জাতের করলা চাষ করা যায় এবং দেশীয় করলাও চাষ করা যায়।
আরো পড়ুন: বসন্ত রোগের ঔষধের নাম এবং লক্ষন কি
দ্বিতীয়ত জমির উপরে মাচা তৈরি করে: একই নিয়মে করলার বীজ রোপণ করে চারা উৎপাদন হওয়ার পরে জমির উপরে মাটি থেকে দুই থেকে আড়াই ফিট উচ্চতায় মাথা তৈরি করে করলা চাষ করা যায় এক্ষেত্রে করলার উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং নানা রকম রোগ বালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়ার একটি সুযোগ রয়েছে। এবং করলা সংগ্রহ করার মাধ্যমে। বর্তমানে প্রায় বেশিরভাগ কিছু কই জমিতে মাচা করে করলা রোপণ করেন কেননা জমিতে মাচা করে করলার উপরে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে কৃষকের পরিচর্যাও তেমন একটা করতে হয় না। নারাবি সুযোগ-সুবিধা থাকার কারণে জমির উপরে মাচা তৈরি করে করলা চাষের দিকে কৃষকেরা আগ্রহী বেশি।
উপসংহার
যদিও আমাদের সকলের প্রিয় খাবার নয় তবে এটি সকলেরই খাওয়া উচিত। কারণ করলাতে রয়েছে শরীরের জন্য ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে নিয়মিত করলা খাওয়ার বিশেষ গুণ রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ না করলেও পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা বাড়ির আনাচে-কানাচে করলার চাষ করতে পারি।
এতে আমাদের
পারিবারিক চাহিদা পূরণ করতে পারি। এবং এই করলা চাষে তেমন কোন খরচ নেই। উপরোক্ত
বিষয় হতে আমরা জেনেছি কিভাবে করলা চাষ করতে হয় এবং করলা চাষের
প্রয়োজনীয়তা উপকারিতা বিভিন্ন বিষয়ে আমরা জেনেছি। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী বলা যায় নিয়মিত যদি কোন ব্যক্তি করলা খেয়ে থাকেন তাহলে তার বিভিন্ন
রোগ হতে মুক্তি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে
No comments:
Post a Comment