ইসলামে রিসালাত শব্দের অর্থ এবং এর গুরুত্ব কি
রিসালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ বার্তা, চিঠি পৌঁছানো, পয়গাম সংবাদ বা কোনো ভালো কাজের দায়িত্ব বহন করা। ইসলামী পরিভাষায়, মহান আল্লাহতালার পবিত্র বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কে রিসালাত বলা হয়। আর যিনি এই দায়িত্ব পালন করেন তাকে বলা হয় রাসুল।
রাসূল শব্দের বহুবচন রসূল। সৃষ্টিকর্তা এই দায়িত্বটি হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উপরে দিয়েছিলাম। তার মাধ্যমেই আমাদের মাঝে আল্লাহর সমস্ত বার্তা প্রেরণ করতেন।
পোস্ট সূচিপত্র: ইসলামে রিসালাত শব্দের অর্থ এবং এর গুরুত্ব কি
ভূমিকা
নবী রাসূলগণ ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। সকল সদগণ তারা অনুশীলন করতেন।
তারা ছিলেন অত্যন্ত সৎ সত্যবাদী ন্যায় পরায়ণা। দয়া ক্ষমা ধৈর্য ইত্যাদি সব
ধরনের মানবিক গুণ তাদের চরিত্রের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। মিথ্যা প্রতারণা পরনিন্দা
হিংসা বিদ্বেষ ইত্যাদি খারাপ স্বভাবের লেশ মাত্র ছিল না তাদের চরিত্রে।
বরং তারা ছিলেন সৎ স্বভাবের জন্য মানবজাতির অনুপম দৃশ্য। কর্তব্য নিষ্ঠা ও
দায়িত্ব পালনে ছিলেন নবী-রাসূলগণ অতুলনীয়।
নগদ ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা বিন্দুমাত্র অলসতা ও উদাসীনতা
প্রদর্শন করেননি। বরং এজন্য কাফিরদের বহু অত্যাচার ও নিপীড়ন ধৈর্য সহকারে সহ্য
করেছেন। কিন্তু তারপরও তারা যথাযথভাবে মানুষের নিকট আল্লাহতালার বাণী পৌঁছেছেন।
তারা ছিলেন নির্লোভ নিঃস্বার্থ। পার্থিব কোন লাভের আশায় তারা তাদের
দায়িত্ব থেকে কখনো পিছপা হননি। কাফিরা ইসলামের দাওয়াত প্রচার বন্ধ করার জন্য
তাদের নানা প্রলোভন দেখাতো। কিন্তু তারা পার্থিব স্বার্থের কাছে মাথা নত
করেনি।
ইসলামে রিসালাতের গুরুত্ব কি
ইসলামী জীবন দর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার। তাওহীদে বিশ্বাসের সাথে
সাথে প্রত্যেক মুমিন ও মুসলিমকে রিসালাত বিশ্বাস করতে হয়। ইসলামের মূল
বাণী কালিমা তায়্যিবাতে এ বিষয়টি সুন্দরভাবে বিবৃত হয়েছে। এ কালিমার
প্রথম অংশ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ (আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই) দ্বারা
তাওহীদের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর সাথে সাথে দ্বিতীয়াংশে মুহাম্মদ
রাসুলুল্লাহ: অর্থ মুহাম্মদ( সঃ) আল্লাহর রাসূল। দ্বারা রিসালাত ঘোষণা
দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তাওহীদের বিশ্বাস স্থাপনের ন্যায় বিশালতেও বিশ্বাস
স্থাপন করতে হবে।
বস্তুত রিসালাতে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন হতে পারে না। কেননা মানুষের জ্ঞান
সীমাবদ্ধ। এই স্বল্প জ্ঞান দ্বারা অন্তত, অসীম আল্লাহতালার পূর্ণ
পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়। তাই নবী-রাসূলগণ মানুষের নিকট আল্লাহতালার
পরিচয় তুলে ধরেছেন। তার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা ও গুণাবলীর বর্ণনা প্রদান করেছেন।
তারাই ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্য আল্লাহতালা প্রদত্ত জীবন বিধান ও
দিকনির্দেশনা দিয়ে এসেছেন। হযরত মুহাম্মদ( সঃ) না আসলে নবী ও রাসূল
সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতে পারতাম না। এমনকি আল্লাহতালা সত্তা ও সিফাতের পরিচয়
লাভ করতে পারতাম না।
মূলত নবী-রাসূলগণের আমি তো বাণী ও বর্ণনার ফলে মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছে।
সুতরাং নবী-রাসূলগণের এই সমস্ত সংবাদ বা রিসালাতকে বিশ্বাস করা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, রিসালাতকে অস্বীকার করলে মহান আল্লাহকেই অকারান্তরে
অস্বীকার করা হয়। অতএব, মানব জীবনে রিসালাতের বিশ্বাস করা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ
অঙ্গ হিসেবে নির্ধারিত।
নবী রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য কি ছিল
আল্লাহতালা যুগে যুগে অসংখ্য অগণিত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাদের
উদ্দেশ্যহীনভাবে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়নি বরং তারা নবুয়তও রিসালাতের
দায়িত্ব পালন করেছেন। নবুয়াত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের বেশ
কিছু কাজ করতে হতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতিপয়কাজ হল
- তারা মানুষের নিকটলার পরিচয় তুলে ধরতেন। আল্লাহতালা জাত- সিফাত ,ক্ষমতা, নিয়ামত ইত্যাদি বিষয়ের কথা মানুষের নিকট প্রকাশ করতেন।
- সত্য ও সুন্দর জীবনের দিকে আহবান জানাতেন
- আল্লাহতালার ইবাদত ও ধর্মীয় নানা বিধি-বিধান শিক্ষা দিতেন
- পরকাল সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতেন
- পৃথিবীতে আল্লাহতালা আদেশ নিষেধ ও বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য হাতে কলমে শিক্ষা দিতেন
নবী-রাসূলগণের গুণাবলী কি কি ছিল
নবী রাসুলগণ ছিলেন আল্লাহ তাআলার মনোনীত বান্দা। আল্লাহতালার স্বয়ং তাদের
নবুওয়াত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত করেছেন। আল্লাহ তা'আলা
বলেন, ফেরেশতাদের মধ্যে হতে এবং মানুষের মধ্যে থেকেও রাসূল মনোনীত করেন আল্লাহ
তো সর্বশ্রোতা দ্রষ্টা ।
সুতরাং মনোনীত বান্দা হিসেবে নবী রাসুলগণ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী
ছিলেন। প্রথমত, তারা ছিলেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহতালার উপর বিশ্বাসী।
সব ধরনের কথা ও কাজে তাদের আল্লাহ নির্দেশের অনুসরণ করতেন।
আল্লাহতালার পূর্ণ আনুগত্যই ছিল তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। নবী-রাসূলগণ
ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী, বুদ্ধিমান,সুবিবেচক ও বিচক্ষণ। তারা ছিলেন
নিষ্পাপ। তারা সব ধরনের পাপ পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র ছিলেন। স্বয়ং
আল্লাহতালা তাদের সকল প্রকার অন্যায়ও অশ্লীলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখতেন। হযরত
ইউসুফ (আ.) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ নবী। তার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি
তাকে মন্দ কাজে অশ্লীল থেকে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন
দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধ চিত্র বাংলার অন্তর্ভুক্ত।
নবুয়তের ধারা কি ছিল
আল্লাহতালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। সর্বপ্রথম নবী ছিলেন
হযরত আদম (আ.) আর সর্বশেষ নবী ও রাসূল হলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)। এদের মাঝখানে
আল্লাহ তায়ালা আরও বহু নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী রাসুলদের আগমনে এই
ধারাবাহিকতাকেই নবুয়তের ক্রমধরা বলা হয়। দুনিয়াতে আগত সকল গোষ্ঠী বা
জাতির জন্যই আল্লাহ তাআলা নবী রাসূল বা পথ প্রদর্শনকারী পাঠিয়েছেন।
সৃষ্টি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত শরীয়ত তথা দিনের বিধি-বিধান এক রকম ছিল না।
বরং মানবজাতির পরিবেশ পরিস্থিতি সভ্যতা সংস্কৃতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ভিন্ন
ভিন্ন শরীয়ত দেওয়া হতো। নবী-রাসূলগণ তা মানব সমাজে বাস্তবায়ন করতেন। তবে সব
নবী রাসূলের দিনের মৌলিক কাঠামো ছিল এক ও অভিন্ন। আল্লাহ তায়ালা একত্ববাদ বা
তাওহীদ ছিল সবার ওই প্রচারিত দীনের মূল কথা।হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে আগত
সকল নবী-রাসূলই এই দ্বীন প্রচার করেছেন।
হযরত নূহ (আ.) , হযরত ইব্রাহিম(আ.) , হযরত মুসা(আ.) , হযরত দাউদ(আ.), হযরত
ঈসা(আ.) সকলেই এই একই দন ও শিক্ষা প্রচার করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত
মুহাম্মদ (স.) ছিলেন নবুয়তের ধারার সর্বশেষ নবী। তারপরে আর কোন নবী
আসেননি। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা তার মাধ্যমে দ্বীনের পূর্ণতা প্রদান করেন।
খতমে নবুয়তের অর্থ ও এতে বিশ্বাসের গুরুত্ব
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বশেষ নবী। তার
মাধ্যমে দিনের পূর্ণতা ঘোষিত হয় এবং নবুওতের ধারা সমাপ্ত হয়। তিনি নবী
রাসূলগণের ধারায় সর্বশেষে আগমন করেছেন। আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং তাকে ,খাতামুন
নাবিয়্যিন, তথা সর্বশেষ নবী বলে অভিহিত করেছেন। খাতামুন অর্থ শেষ সমাপ্তি। আর
নবুওয়াত হলো নবীগণের দায়িত্ব। সুতরাং খতমে নবুয়তের অর্থ নবুয়তের সমাপ্তি।
আর যার মাধ্যমে নবুয়তের ধারার সমাপ্তি ঘটে তিনি হলেন খাতামুন
নাবিয়্যিন বা সর্বশেষ নবী। আল্লাহতালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসুল প্রেরণ
করেছেন। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম ছিলেন হযরত আদম(আ.) আর সর্বশেষ ছিলেন হযরত
মুহাম্মদ (স.) ।হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মাধ্যমে নবী-রাসূলগণের আগমনের ধারা
শেষ বা বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং তিনি সর্বশেষ নবী বা খাতামুন নাবিয়্যিন। খাতামুন
শব্দের অন্যতম অর্থ সিলমোহর। কোন কিছু তো সীলমোহর তখন অঙ্কিত করা হয় যখন তা
পূর্ণ হয়ে যায়। সিলমোহর লাগানোর পর তাতে কোন কিছু প্রবেশ করানো যায় না।
নবুয়তের সিলমোহর হল নবুয়তের পরিসমাপ্তির ঘোষণা। দায়িত্বের পরিসমাপ্তি
ঘোষণা। অর্থাৎ নতুনভাবে কোন ব্যক্তি নবী হতে পারবে না এবং নবুয়তের ধারার
প্রবেশ করতে পারবে না। এটাই হল খতমে নবুয়তের মূল কথা। আমাদের প্রিয় নবী(স.)
হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন । তিনি সর্বশেষ নবী। তার পরে আর কোন নবী নেই। তারপরে আজ
পর্যন্ত কোন নবী আসেনি। কিয়ামত পর্যন্ত আসবেও না। তার পরবর্তীতে যারা নবুয়ত
দাবী করেছে তারা সবাই ভন্ড, মিথ্যাবাদী ও প্রতারক।হযরত মুহাম্মদ
(স.) বলেছেন আমিই শেষ নবী আমার পরে কোন নবী নেই।
অন্য একটি হাদিসে মহানবী সাঃ বলেছেন অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে
মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে। তারা প্রত্যেকেই নবী হওয়ার দাবি করবে। অথচ আমি
সর্বশেষ নবী। আমার পর আর কোন নবী আসবেনা। হযরত মুহাম্মদ (স.) খাতামুন
নাবিয়্যিন হিসেবে বিশ্বাস করা ঈমানের অন্যতম অঙ্গ। তার পরবর্তীতে যারা নবী
বলে দাবি করেছে সবাই মিথ্যাবাদী। আমরা তাদের নবী হিসেবে বিশ্বাস করব না। তাদের
শিক্ষা আদর্শ বর্জন করব।
উপসংহার
ইসলাম নীতি নৈতিকতার ধর্ম। ইসলামের সমস্ত আকীদা বিশ্বাস,বিধিবিধান, শিক্ষা আদর্শ
অনৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ইসলামী
জীবন আদর্শ রিসালত ও নবুওয়াতের অপরিহার্য বিষয়। নবী-রাসূলগণের দায়িত্ব।
আল্লাহতালার বাণী ও শিক্ষা মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়াকে নবুয়ত রিসালাত বলা হয়।
মানব জীবনে নৈতিক মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসারে নবুয়ত রিসালাত এর ভূমিকা
অপরিসীম।
No comments:
Post a Comment