পুষ্টিহীনতার কারণ ও প্রতিকার ফলে সৃষ্ট রোগ
বেঁচে থাকা স্বাস্থ্য রক্ষা এবং শরীরের বৃদ্ধির জন্য মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন
।খাদ্য দেহের পুষ্টি সাধন করে সুন্দর স্বাস্থ্য সুস্থ মন কাজে উৎসাহ ও পরিশ্রম
করার প্রবণতা সুপুষ্টির লক্ষণ। পরিশ্রম করার জন্য শক্তির দরকার পুষ্টিকর খাদ্য
মানুষের পরিশ্রম করার জন্য শক্তির যোগান দেয়।খাদ্যের ছয়টি পুষ্টি উপাদান
হিসেবে কাজ করে
পুষ্টির কারণে আমরা নানারকম রোগে আক্রান্ত হতে পারি। নানা রকম পুষ্টির অভাবে
নানারকম রোগ দেখা দিতে পারে ।এ কারণে আমাদের পুষ্টি জনিত খাবার খাওয়া এবং
খাবারের মান রক্ষা করা প্রয়োজন। শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও গঠন গঠনতন্ত্র ঠিক
রাখার জন্য শরীরে পুষ্টির প্রয়োজন অপরিসীম। খাদ্য ভেদে
পুষ্টি পাওয়া যায় নানা রকম খাদ্যের নানারকম পুষ্টিগুণ রয়েছে আমাদের
শারীরিক দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য খাওয়া উচিত
সূচিপত্র: পুষ্টিহীনতার কারণ ও প্রতিকার ফলে সৃষ্ট রোগ
ভূমিকা
পুষ্টিহীনতা শুধু শরীরকেই অসুস্থ করে তোলে না শরীরের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিকভাবে
মানসিকভাবে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমাদের শরীরে যদি যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টিগুণ না
থাকে তাহলে আমরা শারীরিকভাবে যেমন অসুস্থ হয়ে পড়বো,ঠিক তেমনি
মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বো। আমাদের কাজে অমনোযোগী হবে অমানুষিকতা আসবে
এবং আমরা সঠিক ভাবে সবাইকে পরিচালনা করতে পারবো না।
সে কারণে আমাদের শারীরিকভাবে পুষ্টিগুণ থাকা জরুরী আর এই পুষ্টিগণগুলা আমরা
আমাদের দৈনন্দিন খাবারের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। আমাদের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু
খাদ্য রাখতে হবে যে খাবার গুলো আমাদের পুষ্টিগুণ বাড়াবে আমাদের শরীরে সব
পুষ্টি উৎপাদনে সক্ষমতা তৈরি করবে।
খাদ্য উপাদানের কাজ
খাদ্য উপাদানের কাজের ভিন্নতা রয়েছে এসব উপাদান দেহের গঠন বৃদ্ধি,ক্ষয় পূরণ,
তাপ ও কর্মশক্তি সরবরাহ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন দেহের অভ্যন্তরী ও অঙ্গ পতঙ্গের
গঠন ও সচল রাখা রক্ত চলাচল পুষ্টি পরিবহন দেহবর্জ্য অপসারণ দেহ শীতলীকরণ প্রগতি
বহুমাত্রিক কাজ করে। এবং শরীরের শক্তি যোগান দেয় তাই খাদ্য উপাদানে আমাদের
পুষ্টিগুণটা বিবেচনা রাখতে হবে ।এবং যেসব খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি ও সুষম
রয়েছে সেসব খাবার গ্রহণ করতে হবে।
সুষম খাদ্য ও চাহিদা
খাদ্যর ছয়টি উপাদান যখন আদর্শ অনুপাতে গ্রহণ করা যায় সেই খাবারকে সুষম
খাদ্য বলে। তবে বয়স ও লিঙ্গ ভেদে দৈহিক কাঠামো অনুযায়ী সুষম খাদ্যের
প্রয়োজনীয় পরিমাণ ও চাহিদা ভিন্ন হয়। যেমন একটি শিশুর জন্য যতটুকু আমি
শর্করা ও অন্যান্য উপাদান সম্বলিত খাদ্য প্রয়োজন একজন কিশোর বা কিশোরীর
প্রয়োজন তার চাইতে বেশি, আবার একজন শ্রমিক বা খেলোয়াড়দের খাদ্যের পরিমাণ
তার থেকে আরো বেশি।এ কারণে খাদ্যের সুষম নির্ণয় করা প্রয়োজন রয়েছে এবং এই
সুষম খাদ্যের যে উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলো আদর্শ অনুপাতে গ্রহণ করতে হবে।
পুষ্টিহীনতার ফলে সৃষ্ট রোগ
শিশুর খাদ্যে আমিষের পরিমাণ কম হলে মাংসপেশী গড়ে ওঠার বদলে ক্ষয় পেতে থাকে।
শরীরে পানি আসে ফুলে যায় ও শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ে, এ রোগের নাম
কোয়াশিওরকর। আমিষ, শর্করা, চর্বি প্রগতি পুষ্টির অভাবে শিশুর
মেরাসমাস রোগে আক্রান্ত হয়।এটা শিশুর আমিষ ও প্রয়োজনীয় পরিমান
ক্যালরির অভাবজনিত রোগ, লোহা আমিষ ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রক্তের রক্তকণিকা
তৈরি করে খাদ্যে এসব উপাদানের ঘাটতি থাকলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া হয়।
খাদ্যে ক্যালসিয়াম ,ফসফরাস ও ভিটামিন ডি এর অভাব হলে শিশুর রিকেটস রোগ
হয়। আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড হয়, ভিটামিন এর অভাব হলে রাতে দেখতে অসুবিধা
হয়। রিবোফ্লাবিন এর অভাবে ঠোটে জিহবা ও মুখে ঘা হয়।
পুষ্টিহীনতার কারণ কি কি
পুষ্টিহীনতার প্রধান কারণ অজ্ঞতা ও অসচেতা পরিবারের বাড়ন্ত
শিশুদের চাহিদা বাদ দিয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের মাছের মাথা, দুধের সর, পনির, মাছ
বা মাংসের বড় টুকরা পরিবেশন করা মারাত্মক ভুল ।বয়স্ক লোকের যেমন আমিষ
ও চর্বির চাহিদা কম হয় তেমনি এর বিপরীতে বাড়ন্ত শিশু কিশোরদের চাহিদা
হয় অনেক বেশি। খাদ্য পরিবেশনে ভুলনীতির দারুন পুষ্টিহীনতা খুব স্পষ্টভাবে
দেখা যায়। এছাড়াও সমাজে কিছু দরিদ্র পরিবার আছে যারা স্বাভাবিকভাবে পুষ্টি
জনিত খাবার যোগান দিতে ব্যর্থ হয়, এবং এদের শিশু-কিশোরদের পুষ্টিহীনতার অভাব
রয়ে যায়
পুষ্টিহীনতার প্রতিকার কিভাবে করা যায়
পুষ্টিহীনতার প্রতিকার রয়েছে এবং এগুলো কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় নিচে ধরা
হলো
১। দামী খাদ্যের পরিবর্তে একই দৃষ্টিমান ও উপাদান সমৃদ্ধ কম মূল্যের খাদ্য
নির্বাচন করতে হবে।
২। খাদ্য সম্পর্কে কুসংস্কার বা ভান্ত ধারণা যেমন হাঁস এর ডিম, বোয়াল
মাছ ,গজাল মাছ, মিষ্টি কুমড়া
প্রগতি খাওয়া যাবেনা, পরিহার করতে হবে।
৩। বাবা মাকে পুষ্টিমানযুক্ত খাবারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানাতে হবে।
৪। অধিক সময় ধরে রান্না করলে অনেক শাক সবজির খাদ্যগুণ নষ্ট হয় তা বাবা মাকে
জানাতে হবে।
৫। শাকসবজি রান্নার আগে ধরে নিতে হবে কাটার পর ধোয়া চলবে না।
৬। আমি জাতীয় খাদ্যের অভাব পূরণের জন্য বাড়িতে হাঁস মুরগি গাভী পালনের
জন্য
অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে।
৭। বড় মাছের দাম বেশি হলে এগুলো পরিবর্তে ছোট মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
৮। খাদ্য উপাদান অনুসারে একটি তালিকা তৈরি করে সেখান থেকে দনদিন খাদ্য বাছাই
করে
পরিবারের যোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। পুষ্টি পুষ্টিহীনতা পত্রিকার প্রগতি বিষয়ে রেডিও টিভি সংবাদপত্রের
মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপসংহার
খাদ্যদ্রব্য আমাদের একটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেটা ছাড়া আমরা জীবিকা
নির্বাহ করতে পারবো না। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য হলে খাবার খাওয়া প্রয়োজন
হয় ।এবং এই খাবার গুলো পুষ্টি বিবেচনা করে খাওয়া উচিত, প্রতিটা
খাবারের আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণ রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য করতে হবে আসলে আমাদের
কোন পুষ্টির অভাব রয়েছে।
এবং সেই পুষ্টিগুণ জাতীয় খাবার গুলো নিয়মিত খাওয়া উচিত এবং সেগুলো
সাধ্যের বাইরে হলে তার পরবর্তীতে কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো সেই খাবারের
পুষ্টিগুণ চাহিদা যোগান দেয় ।এভাবে আমরা যদি সঠিকভাবে খাবার গ্রহণ করতে পারি
তাহলে আমাদের খাবারের পুষ্টিগুণ ঠিক থাকবে এবং আমরা নানারকম রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারব।
No comments:
Post a Comment