লেবু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং চাষের নিয়মাবলী - M.A IT FIRM

লেবু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং চাষের নিয়মাবলী

 লেবু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং চাষের নিয়মাবলী

আমরা সবাই লেবু শব্দটির সঙ্গে পরিচিত, এটি একটি টক জাতীয় ফল। লেবু স্বাস্থ্যের জন্য একটি উপকারী ফল আমরা অনেকেই লেবু খেতে পছন্দ করি আবার অনেকেই লেবু খেতে অপছন্দ করি। কিন্তু এই লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের কাটা এক্সিডেন্ট এর ক্ষত নানা রকম ভাইরাস ধ্বংস করা এবং ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।


লেবু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং চাষের নিয়মাবলী

লেবু বর্তমানে প্রায় দেশের সব জেলাতেই চাষাবাদ করা হয় এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। কেননা শহরগুলোতে দেখা গেছে মোড়ে মোড়ে লেবু পানির ব্যবস্থা আমাদের শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে, ঠান্ডা লেবু পানি খেলে শরীরে শান্তি ফিরে পাওয়া যায় লেবুর আরো অনেক গুণ রয়েছে।

পেজ সূচিপত্র: লেবু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং চাষের নিয়মাবলী


ভূমিকা

লেবু আমরা প্রতিদিনই প্রায় খেয়ে থাকি নানা রকম খাবারের সঙ্গে, অনেক সময় শুধু লেবু পানি মিশ্রণে সর্বোচ্চ তৈরি করেও খেয়ে থাকে। এটা শরীরের জন্য খুবই উপকার, লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের নানারকম কাজ করে। এটা পটাশিয়াম ফাইবার ও ভিটামিন সি এর যোগান দেয়। লেবু রুটাসি পরিবারের একটি ফল, এমন কোন পরিবার নেই যে তারা জানে না লেবু কি বা এর ব্যবহার।

 নানা রকম চিকিৎসার ক্ষেত্রে লেবুর ব্যবহার রয়েছে। লেবু আমরা খাবারের সঙ্গে খাই সেই খাবারগুলো হজম করতে সাহায্য করে। লেবু আমাদের দেহের নানান রকম রোগ জীবাণু থেকে মুক্তি দেয়, জীবাণু ধ্বংস করে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের শরীরের পানি শূন্যতার ঘাটতি পূরণ করে আমরা প্রায়শই লেবুর শরবত খেয়ে থাকি শরীরের শান্তি বা শরীর ঠান্ডা করার জন্য।

 আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গায় লেবুর চাষ কম বেশি হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে দেশীয় লেবু ছাড়াও বিদেশি লেবুর চাষ হচ্ছে এবং এই লেবু চাষে চাষিরা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।


লেবু খাওয়ার উপকারিতা কি কি


লেবু খাওয়ার উপকারিতা কি কি


এই গরমে শরীরকে একটু আরাম দিতে আমরা প্রায়সই লেবু বা লেবুর শরবত খেয়ে থাকি। লেবু নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই লেবু সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। এটা শরীরের ভিটামিন সি এবং ফাইবার ও পটাশিয়ামের যোগান দেয়। এছাড়াও শরীর অনেক গরম হয়ে গেলে ঠান্ডা লেবু পানি শরীরকে শীতল করতে সাহায্য করে সকালে আমরা যদি খালি পেটে লেবু পানি পান করি তাহলে আমাদের শরীরে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিন বের হয়ে যায়। লেবুতে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কারণে আমাদের শরীরের কোষগুলো ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে।

 স্টকের ঝুঁকি:এছাড়াও লেবু খাওয়াতে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে ।২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা সাইটাস ফল খেয়েছেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কম। ১৪ বছর ধরে ৭০,০০০ তথ্য নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে যে সকল মানুষ সাইট্রাস ফল খেয়েছেন তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে প্রায় ১৯%।

 ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে:লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের কোষের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং এই কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায় তবে কিভাবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এটা এখনো স্পষ্ট হয়নি। 

হাঁপানি রোগীর:এছাড়াও শরীরের হাঁপানি রোগের জন্য লেবু উপকারিতা হিসেবে কাজ করে হাঁপানি রোগী প্রতিদিন যদি নিয়মিত লেবু পা খায় বা লেবু পানীয় পান করে তাহলে হাঁপানি রোগীর জন্য ঔষধের মতো কাজ করবে।
 ওজন কমাতে:সেই সাথে ওজন বৃদ্ধির কমাতে লেবুর ভূমিকা অপরিসীম আমরা প্রায় সময় দেখে থাকি অনেকেই লেবু বা লেবু পানিও পান করছেন। আমাদের শরীরের ওজন কমাতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে কোন ব্যক্তি যদি নিয়মিত লেবুর রস পান করে তাহলে তার ওজন নিশ্চিত ভাবে কমতে থাকবে যারা মেদ ভুড়ি নিয়ে সমস্যায় আছেন তারা নিয়মিত লেবু পানিও বা লেবুর রস পান করতে পারেন এতে করে কিছুদিন পান করার পর আপনি নিজে থেকেই বুঝতে পারবেন লেবুর উপকারিতা।

আয়রনের ঘাটতি পূরণ:আয়রনের ঘাটতি থাকলে শরীরে রক্তস্বল্পতার কারণ দেখা দিতে পারে আর এই আয়রন জোগাড় দিতে ভিটামিন সি জাতীয় খাবারআয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে এবং সে ক্ষেত্রে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হলে শরীরে রক্তস্বল্পতা কমে যেতে পারে 

লেবু খাওয়ার অপকারিতা কি কি


লেবু খাওয়ার অপকারিতা কি কি


লেবু খাওয়ার উপকারিতার সাথে সাথে লেবুরস কিছু অপকারিতাও রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরে ক্ষতির কারণ হিসেবে আসতে পারে ।আমরা যদি পরিমাণ মতন লেবু না খাই বা অতিরিক্ত হারে লেবু খাই
বা কোন নিয়মের বাইরে লেবু খাই তাহলে আমাদের নানা রকম অপকারিতা দেখা দিতে পারে।

দাঁতের ক্ষয়:অতিরিক্ত হাড়ে লেবু খেলে দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি পেতে পারে লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয় এবং দাঁতের ওপর একটি সাদা আবরণ সৃষ্টি করে যা দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক


এসিডিটি ও বমি:এসিডিটি এবং বমির আশঙ্কা হতে পারে, অনেকের লেবু বা লেবু পানিও সহ্য করতে পারে না অনেকের ক্ষেত্রে এটা তার ক্ষতির কারণ হয় লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড অনেক সময় পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করে আর এই গ্যাস থেকে বমি বমি ভাব তৈরি হয়। অনেক সময় দেখা গেছে অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার কারণে গ্যাস তৈরি হয়ে অনেকে গ্যাসের সমস্যায় মারা গেছে। তাই লেবু খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করাও একটি বাঞ্ছনীয় কাজ কেননা সেটি আপনার শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা এটা আপনি ভালো জানবেন। যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে লেবু খাওয়া উত্তম।

মাইগ্রেনের সমস্যা:লেবু খাওয়ার কারণে অনেকের মাইগ্রেনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে যাদের পূর্বে মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদের লেবু খাওয়ার পরে মাইগ্রেনের সমস্যা উপলব্ধি করতে পারে ডাক্তারি পরামর্শে জানা যায় লেবুতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট বা সাইট্রাস জাতীয় ফলগুলো মাইগ্রেনের সমস্যা সৃষ্টি করে। কারণ সাইট্রাস জাতীয় ফলগুলোতে রয়েছে টাইরামাইন নামক এক বিশেষ উপাদান যেটার কারণেই এই মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে।

লেবু চাষের নিয়মাবলী কি

লেবু চাষের নিয়মাবলী কি



লেবু চাষে নিয়মাবলী বলতে তেমন কিছু নেই লেবু আমরা আমাদের পরিত্যক্ত জমিতেই চাষ করতে পারি। লেবু চাষের জন্য আমাদের মাঠের তিন ফসলি জমি নষ্ট করে লেবু চাষ করার কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের বাড়ির আশেপাশে প্রতিযোগী বা পরিত্যক্ত জমিগুলোতেই আমরা লেবু চাষ করতে পারি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেবু চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লেবু চাষের জন্য যে জমি নির্ধারণ করা হয়েছে সেই জমিটি ভালোভাবে চাষ করতে হবে চাষ করার পরে সেই জমি সমান করে নিয়ে লেবুর কলম রোপন করতে হবে। নিয়মিত পরিচর্যা এবং কীটনাশক ব্যবহার করে লেবু চাষ করা যায়। লেবুর চারা রোপনের পরে নিয়মিত যত্ন করলে লেবু গাছ এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যেই লেবু দিতে সক্ষম হয় যদি আমরা লেবুর কলম ব্যবহার করি সেক্ষেত্রে ছয় মাসের মধ্যেই লেবু গাছে লেবু ধরে। লেবু জমিতে নিয়মিত সার ওষুধ ও কীটনাশক ব্যবহার করলে লেবুর ফলন দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে বা লেবুর যে পরিমাণ ফুল আসে সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করার মাধ্যমে এবং পরিচর্যার মাধ্যমে লেবুর ফলন বৃদ্ধি করা যায়।

বর্তমানে দেশে লেবুর চাহিদা কেমন

বর্তমানে দেশে লেবুর চাহিদা কেমন


বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই লেবু চাষ রয়েছে। প্রত্যেকটি এলাকাতেই কম বেশি লেবু চাষ হচ্ছে অথবা অনেকেই বাড়ির আনাচে-কানাচে দু একটি করে লেবুর গাছ লাগানো রয়েছে। আগে আমরা কাগজি লেগুনামুখ যে লেবুটি পেতাম বর্তমানে প্রায় এই লেবু টি পাওয়া খুবই দুষ্কর। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের লেবু উদ্ভব হওয়ার কারণে দেশীয় লেবুর চাষাবাদ কমে গেছে। 

বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ হওয়ার কারণে দেশীয় লেবুর চাষ কৃষক বর্তমানে করছে না। কেননা দেশীয় লেবুর থেকে বিদেশি লেবুর চাষ লাভজনক। দেশীয় লেবুগুলো সারা বছর পাওয়া যায় না এক্ষেত্রে বিদেশি জাতের লেবুগুলো সারা বছরই কম বেশি পাওয়া যায় এজন্য কৃষকেরা বিদেশি লেবুর চাষাবাদে বেশি আগ্রহই। এবং বিদেশি লেবু চাষ করে বর্তমানে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের সব এলাকাতেই বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ শুরু করেছেন।

 অনেক জায়গায় দেখা যায়, একরের পর একর জমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে লেবু চাষে আগ্রহী হওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে তা হলো, লেবু চাষের জন্য মাঠের তিন ফসলা জমির প্রয়োজন হয় না বাড়ির পাশে উঁচু জমি বা ভিটা জমিতে লেবু চাষ করা যায় যেই জমিগুলা পূর্বে অতীত পড়ে থাকত বর্তমানে সেই জমিগুলোতে লেবু চাষ করে কৃষকেরা ভালো লাভবান হচ্ছেন ।

উপসংহার

লেবু যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি ফল তেমনি অপকারিতাও লেবুতে রয়েছে। তাই আমাদের বিশেষ বিবেচনায় লেবু খাওয়া উচিত শুধুমাত্র লেবুর উপকারী দিকগুলো বিবেচনা না করে লেবুতে থাকা অপকারিতা দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে। তা না হলে আমরা পড়ে যেতে পারি এক ভয়ানক অসুস্থতার মুখে। 

প্রতিদিন খাবারের পাশাপাশি আমরা যেমন লেবু খেয়ে থাকি এই লেবুর উৎপাদন ও আমরা নিজেরাই করে থাকি আমাদের এলাকায় বা দেশের প্রায় সব এলাকাতেই কমবেশি লেবু চাষ হয়ে আসছে। প্রত্যেকেরই বাড়ির আনাচে কানাচে দু-একটা লেবু গাছ থাকে আমরা নিজেরা খাবার জন্য হলেও এই গাছগুলো লাগিয়ে থাকি। 


আবার দেখা গেছে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পরিমাণ লেবু চাষে কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছে। গ্রামে লেবু চাষের পরিমাণ অধিক হারে বাড়ায় গ্রামের চাহিদা পূরণ করেও লেবু শহরে বাজারজাত করছে কৃষকেরা।
 

No comments:

Post a Comment