ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা কি
ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী পর্যন্ত সবাইকে লক্ষ্য অর্জনে বাধা দেয়। ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারীদের িত এবং প্রাপ্ত ফলাফলের মধ্যে সাধারণত গরমিল বা বিচ্যুতি থাকে। আর এই বিচ্যুতি থেকেই ঢুকি সৃষ্টি হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই ভূমিকা রাখে। ফলে ঝুঁকি সমূহ চিহ্নিত করা এবং ঝুঁকির পরিমাপ করার প্রয়োজন হয়।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার সময় নানান রকম ঝুঁকি সম্মুখীন হতে হয়। আর এই ঝুঁকি গুলো আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই হয়ে থাকে। তাই আমাদের ব্যবসা পরিচালনা শুরু করবে ঝুঁকি এবং এর অনিশ্চয়তা দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে।
পেজ সূচিপত্র: ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা কি
- ভূমিকা
- ঝুকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পার্থক্য কি
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকি কি
- বিনিয়োগকারী দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকি কাকে বলে
- ঝুঁকিমুক্ত আয় ও ঝুঁকি বহুল আয়
- ব্যবসায় ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার পরিমাপ
- উপসংহার
ভূমিকা
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে যেমন অনিশ্চয়তা কাজ করে ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের অনিশ্চয়তা ও পরিলক্ষিত দেখা দেয়। ভবিষ্যতে কোম্পানি পূর্ণর আসনের বিক্রি হবে কিনা ,প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জন করতে পারবে কিনা, প্রত্যাশিত মূল্য কাঁচামাল ক্রয় করতে পারবে কি ,না এরূপ অসংখ্য অনিশ্চয়তা থাকে এরূপভাবে একজন বিনিয়োগকারী কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে প্রত্যাশিত লাভাংশ পাবে কিনা একটি কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশিত নগদ প্রবাহ পাবে কিনা এসব অনিশ্চয়তা সম্মুখীন হয়।
এসব অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রকৃত ফলাফল
প্রত্যাশিত ফলাফল এর চেয়ে কম বা বেশি হয় প্রকৃত ফলাফল প্রত্যাশিত ফলাফল থেকে
ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনাকেই ব্যবসা অর্থায়নের ঝুঁকি বলা হয়, যেমন কোম্পানি আশা
করেছে আগামী বছর ২০% ইট মুনাফা লাভ করবে, কিন্তু প্রকৃত লাভ হলো ১৫%। এখানে এই ৫%
বিচ্যুতি ঝুঁকির উৎস।
ঝুকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পার্থক্য কি
যদিও অনিশ্চিত থেকে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত সব অনিশ্চয়তা ঝুঁকি নয়। আমরা জানি খারাপ কোন ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় হচ্ছে ঝুঁকি। কিন্তু কোন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কেমন তা যদি জানা না থাকে তবে সে অনিশ্চিতাকে বলা হয় বলা যায় না। অন্যভাবে বলা যায় অনিশ্চয়তার যে অংশটুকু কে পরিমাপ করা যায় সেই অংশের রূপে ঝুঁকি বলা যায়।
কিছু কিছু অনিশ্চয়তা আছে, যা পরিমাপ করা যায় না উদাহরণস্বরূপ একটি কোম্পানির প্রধান কর্মকর্তার মৃত্যু হতে পারে, এটা একটা অনিশ্চয়তা, কিন্তু এই অনিশ্চয়তা পরিমাপ করা যায় না। ফলে এরকম অনিশ্চয়তা কে ঝুঁকি বলা যায় না। দ্বিতীয়ত, ঝুঁকি পরিমাপ করা যায় বলে বিভিন্ন কৌশল করে ঝুঁকির পরিমাপ কমানো যায় না ।
কিন্তু অনিশ্চয়তাকে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে কমানো বা পরিহার করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ, ভূমিকম্পের কারণে কোন কোম্পানির অফিস দালান ভেঙ্গে যেতে পারে, কিন্তু ভূমিকম্প কোম্পানি নিয়ন্ত্রণে নেই বলে এই অনিশ্চয়তাকে কোম্পানি পরিহার করতে পারেনা।, পক্ষান্তরে আগামী বছর কোম্পানি বিক্রয় কেমন যাওয়ার আশঙ্কা একটি ঝুঁকি। কারণ, এই ঝুঁকি পরিমাপ করা যায় এবং এই ঝুঁকি হাস করার জন্য কোম্পানি বিভিন্ন কৌশল করতে পারে যেমন অগ্রিম বিক্রি করতে পারে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকি কি
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকি কিছু উদাহরণ স্বরূপ দেওয়া হল:
ব্যবসায়িক ঝুঁকি: ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সফল চালানোর জন্য বিভিন্ন রকম
পরিচালনা ব্যয়ের সৃষ্টি হয়। যেমন কাঁচামাল ক্রয়, শ্রমিকদের বেতন, অফিস ভাড়া,
বীমা খরচ ইত্যাদি। এসব পরিচালনা খরচ পরিষদের অক্ষমতা থেকে ব্যবসায় ঝুঁটির সৃষ্টি
হয়। কোন কোম্পানির পরিচালনা মেটানোর সক্ষমতা নির্ভর করে বিক্রয় থেকে
আয়ের স্থিতিশীলতা এবং পরিচালনা খরচের মিশ্রণ অর্থাৎ হাই এবং চলতি খরচের অনুপাতের
উপর। বিক্রয় আয়ে স্থিতিশীলতা না থাকলে, অর্থাৎ বিকৃত কোন সময় আর বেশি আবার কোন
সময় কম হলে ,প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যায় মেটাতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
আবার পরিচালনা ব্যয়ে স্থায়ী খরচ যেমন: অফিস ভাড়া , বীমা খরচ ইত্যাদি পরিমাণ
বেশি হলে ব্যবসায়িক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়
আর্থিক ঝুঁকি: এই ধরনের ঝুঁকি বহিঃস্থ উৎস থেকে অর্থায়ন থেকে সৃষ্টি হয়। যে প্রতিষ্ঠানের ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহিত তহবিল বেশি, সেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঝুঁকি ও বেশি কারণ ঋণ মূলধনের জন্য সুদ প্রদান করা বাধ্যতামূলক। পক্ষান্তরে অভ্যন্তরিনী উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হলে মুনাফা বন্টন বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং ঋণ মূলধন ব্যবহার করা হলে কারবারটি যদি লাভজনক না হয় তখন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আইনের আশ্রয় নিতে পারে এবং বলে কারবারটির বিলোপ সাধন হতে পারে।
ঋণ মূলধন ব্যবহার করলে সুদ এবং উক্ত অর্থ পরিষদের দায় সৃষ্টি হয়। কোন কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিনয়কৃত অর্থ থেকে পর্যাপ্ত নগদ প্রবাহ না পেলে দায় পরিষদের অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন দায় পরিশোধ করতে না পারলে ঋণ সরবরাহকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নিতে পারে এবং কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে এরূপ দায় পরিষদের অক্ষমতা থেকে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে আর্থিক যুক্তি বলা হয়।
বিনিয়োগকারী দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকি কাকে বলে
বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকি বলতে যা বোঝায়:
সুদের হারের ঝুঁকি: যেসব বিনিয়োগকারী
বন্ড, ডিবেঞ্চার ইত্যাদিত ক্রয় করে, তাদেরকে সুদ হারের
ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয়। কারণ বাজারে সুদের হারের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের
বিনিয়োগের মূল্য উঠানামা করে। সুদের হার বাড়লে এসব বিনিয়োগের অর্থাৎ বন
ডিবেঞ্জারের বাজার মূল্য কমে, আবার সুদের হার কমলে এসব বিনিয়োগের বাজার মূল্য
বাড়ে। সুদের হারের পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের মূল্য হ্রাসের আশঙ্কাকে সুদ
হারেরে ঝুঁকি বলা হয়।
তারল্য ঝুঁকি: অর্থ শেয়ার বন্ড বা ডিবেঞ্জার ইত্যাদি বিনিয়োগের পর যে কোন সময় এসব বিনিয়োগ নগদায়নের প্রয়োজন হয়। আশা করা হয়, বিনিয়োগকারী এসব বিনিয়োগ যুক্তিসংগত মূল্যে বিক্রয় করে নগদান করতে পারবে। কিন্তু কোন কারণে যদি বিনিয়োগকারী সহজে এবং যুক্তিসঙ্গত মূল্যে বিক্রি করতে না পারে, তখন তারল্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। সাধারণত যে বাজারে এসব বিনিয়োগ যথা: শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্জার ইত্যাদি কেনাবেচা হয়, সে বাজারে আকার এবং কাঠামোর উপর নির্ভর করে।
এক মালিকানা ও অংশীদারি কারবারে তারল্য ঝুঁকি অনেক বেশি। কারো নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে কারবারটি স্থাবর অস্থাবর সম্পদ সহজে ও যুক্তিসঙ্গত মূল্যে বিক্রয় করা যায় না। পক্ষান্তরে, একজন বিনিয়োগকারী কোন কোম্পানি শেয়ার কিনলে তাকে তারল্য ঝুঁকি নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয় না। কারণ সে ইচ্ছে করলে যে কোন সময় সেকেন্ডারি মূলধন বাজার বা শেয়ার মার্কেটে গিয়ে তার সেয়ার বিক্রি করে দিতে পারে
ঝুঁকিমুক্ত আয় ও ঝুঁকি বহুল আয়
সকল আয় জুকি বহুল নয়, কিছু আয়াতে যা ঝুকিমুক্ত আয় হিসেবে গণ্য হয়। অর্থাৎ এরকম আয়ে, প্রকৃত আয় সব সময় প্রত্যাশিত আয়ের সমান হয়। কোন ব্যাংকে যদি তুমি মেয়াদী আমানত রাখো, তবে এর প্রত্যাশিত আয় ও বাস্তবায়নের মধ্যে এমন পার্থক্য হয় না। এটা ঝুঁকিমুক্ত আয়ের একটি ধরন কোন দেশের সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয় ঝুঁকিমুক্ত আই হিসেবে গণ্য হয়।
সরকার কর্তৃক ইসু হয় বলে এসব বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয়। এসব ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় নির্দিষ্ট থাকে বলে অর্থাৎ নির্দিষ্ট হারে আয় দেখা হয় বলে, পাপ তো আই কে ঝুকিমুক্ত আই হিসেবে গণ্য করা যায়। থেকে প্রকৃত আয়ের মধ্যে ব্যবধান হওয়ার সম্ভাবনা হচ্ছে ঝুঁকি। সাধারণ আ এর একটি অংশ ঝুঁকিমুক্ত আর বাকিটা ঝুঁকিযুক্ত। যেসব আয়ের সাথে ঝুঁকি জড়িত সেসব আয়কে ঝুকি বহুল আয় বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন বিনিয়োগকারী কোন কোম্পানির সাধারণ শেয়ার ক্রয় করলে ভবিষ্যতে লাভাংশ প্রাপ্তি তার প্রত্যাশিত সমান হবে এরকম কোন নিশ্চয়তা থাকে না।
ভবিষ্যতে কোম্পানি কি পরিমান লভ্যাংশ দেবে সেটা নির্ভর করে ভবিষ্যৎ বছর গুলোতে অর্জিত মুনাফা এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর। অতএব, বিনিয়োগকারির জন্য উক্ত শেয়ার থেকে আয় একটি ঝুঁকিবোল আই হিসেবে পরিগণিত হবে। এমনকি আই নির্দিষ্ট থাকে না বলে সাধারণ শেয়ার থেকে প্রাপ্ত আয় সবচাইতে বেশি যুক্তিবহুল আয় হিসেবে গণ্য হয়।
ব্যবসায় ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার পরিমাপ
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালনার জন্য ঝুঁকির পরিমাপ করা আবশ্যকীয়।
প্রত্যাশিত আয় থেকে প্রকৃত আয়ের বিচ্যুতি থেকেই ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। প্রত্যাশিত
আয় থেকে প্রকৃত আ এর বিচ্যুতি যত বেশি হয় ঝুঁকি তত বাড়ে, আয়ের বিচ্যুতি যত
কমে ঝুঁকি তত কমে। এ কারণে প্রত্যাশিত আয় এবং প্রকৃত আয়ের বিচ্যুতি বা
প্রত্যাশিত ফলাফল এবং প্রকৃত ফলাফলের বিচ্যুতি থেকে ঝুঁকির পরিমাপ করা
হয়। ঝুঁকি পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। প্রয়োজন বা অবস্থান ভেদে বিভিন্ন
পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
উপসংহার
সাধারণ আদর্শ বিচ্যুতির বড় মান অধিক ঝুঁকি এবং আদর্শ বিচ্যুতির ছোট মান কম ঝুঁকি নির্দেশ করে। সমান কম ঝুঁকি বেশি গ্রহণযোগ্য এবং সমান ঝুঁকিতে অধিক লাভ বেশি গ্রহণযোগ্য। বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিটি সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় থেকে প্রাপ্তির একটি ব্যবধান থাকে এবং এই ব্যবধান হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য কোন প্রত্যাশিত আয় থেকে প্রকৃত আয় বেশি হলেও ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। যেমন উক্ত বিনিয়োগকারী প্রতি শেয়ারে যখন ১৫ টাকা লাভাংশ প্রত্যাশা করেছে বছর শেষে ২০ টাকা লাভা মাংস পায়, তখনো এই ৫ টাকা বিচ্যুতি ঝুঁকির উৎস বলে বিবেচিত। কারণ ওই অবস্থায় প্রকৃত আয় কেন প্রত্যাশিত আয় থেকে বেশি হল সে কারণ বিনিয়োগকারীর কাছে অজানা, এই কারণেই সেটাও ঝুঁকি।
No comments:
Post a Comment