ছাগলের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা কি
আমরা সকলেই আমাদের বাড়িতে দুই একটি করে ছাগল পালন করে থাকি আর এই ছাগলের বিভিন্ন রকম রোগ হয়ে থাকে। অনেক সময় আমরা জানতে পারি না বা বুঝতে পারিনা যে আমাদের ছাগলের কি রোগ হয়েছে সে কারণে আমাদের শখের ছাগল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে ।
এজন্য আমাদের জানতে হবে ছাগলের বিভিন্ন রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এবং কি কি চিকিৎসা দেওয়া যায়। সকল রোগবালাই হতে মুক্ত থাকার উপায়। ছাগল পালন করতে লাগলে বিভিন্ন রকম রোগ বালাই হতেই পারে আমাদের সচেতন আমাদের ছাগল পালনে সুরক্ষা এনে দিতে পারে।
পোস্ট সূচিপত্র: ছাগলের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা কি
- ভূমিকা
- ছাগলের মারাত্মক রোগের নাম কি কি
- ছাগলের পিপিআর রোগের চিকিৎসা
- ছাগলের রোগ প্রতিরোধ করার উপায়
- উপসংহার
ভূমিকা
ছাগল পালন করতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে ছাগলের বিভিন্ন রোগবালাই বিষয়। এবং এসব রোগের চিকিৎসা কিভাবে দেওয়া যায় কোথায় থেকে দেওয়া যায় ।এ বিষয়গুলো আমাদের জানতে হবে আমরা যদি খামারভাবে ছাগল পালন করি বা ছাগলের খামার তৈরি করি তাহলে ছাগলের রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়।
কেননা খামারে অনেকগুলো ছাগল পালন করার ক্ষেত্রে অনেক রকমের রোগের সম্মুখীন হতে
পারে আমাদের এজন্য আমাদের অবশ্যই কিছুটা হলেও ধারণা রাখতে হবে ছাগলের বিভিন্ন রোগ
বালাই বিষয়ে এবং এসব রোগের সঠিক চিকিৎসা কিভাবে দেওয়া যায় এসব বিষয়ে আমাদের
ধারণা রাখা উচিত। ছাগলের বিভিন্ন রকমের রোগ হয়ে থাকে কিছু কিছু রোগ সময় ভেদে
হয় আবার কিছু কিছু রোগ সবসময়ই হতে পারে এ কারণে আমাদের সচেতনতাই পারে আমাদের
খামারকে সুরক্ষা রাখতে।
আরো পড়ুন: সিফিলিস রোগের লক্ষণ কি কি ও প্রতিকার
ছাগলের মারাত্মক রোগের নাম কি কি
পা পচা রোগ: সাধারণত পা পচা রোগটি ছাগলের জন্য মারাত্মক
পূর্ণরূপ নয় তবে এই রোগটি ছাগলের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে এ কারণে আমাদের
অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত এমন ধরনের যাতে সমস্যা আমরা না পড়ি।
ব্রুসেলোসিস: এ রোগের কারণে বাধ্যত সৃষ্টি হয়, ছাগল গর্ভপাত করতে দেরি
করে বা সময়ের থেকে বেশি সময় নেয়। জয়েন্ট ফোলা এ রোগের একটি সাধারণ লক্ষণ।
এন্টারোটোকসেমিয়া: এটি একটি মারাত্মক রোগ এই রোগটি সাধারণত ছাগলের বাচ্চাদের হয়ে থাকে এবং অল্প বয়স্ক ছাগলের বাচ্চা মারা যাওয়া এই রোগের একটি প্রাথমিক লক্ষণ।
রক্তক্ষরণ সেফটিসিমিয়া: এটি একটি মারাত্মক ছাগলের রোগ এই রোগে ছাগল
মারা যেতে পারে হঠাৎ মারা যাওয়া এই রোগের একটি লক্ষণ এই রোগটি সাধারণত বর্ষাকালে
ছাগলের হয়ে থাকে।
পা বা মুখে খোঁড়া রোগ: এটি ছাগলের একটি ভাইরাল রোগ, এই রোগটি প্রায়
ছাগলেরই হয়ে থাকে। উচ্চ জ্বর , পা ও মুখে ক্ষত, হাঁটা চলাতে সমস্যা, এবং
মুখ দিয়ে লালা নিঃসরণ বৃদ্ধি এ রোগের একটি মূল লক্ষণ।
নিউমেনিয়া: এই রোগটি সাধারণত ছাগলের ঠান্ডা লাগা থেকে হয় অতিরিক্ত
পরিমাণে জোর এবং ঘন কাশি এ রোগের লক্ষণ।
পিপিআর:পিপিআর ছাগলের একটি রোগ এটি প্রায় অনেক ছাগলেরই হয়ে থাকে। অনুনাসিক মিউকাস স্রাব, মুখের ক্ষত, শ্বাসকষ্ট এবং অতিরিক্ত পরিমাণ জ্বর এই রোগের সাধারণ লক্ষণ
পরজীবী আক্রমণ: এটি সাধারণত ছাগলের বিভিন্ন রকম রোগ আক্রমণ করাকে বলা হয়।
বিভিন্ন রকম পরজীবী আক্রমণের কারণে ছাগলের বিভিন্ন রকম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এ
সকল বিষয়গুলোকে পরজীবী আক্রমণ বলা হয়।
ম্যাসাটাইস: এটি ছাগলের একটি সাধারণ রোগ এর একটি অনেকাংশ ছাগলেরই হয়ে থাকে খামারে বা বাসাতে পালন করাতে এই রোগ হতে পারে। উদোর ফোলা এবং দুধের রং পরিবর্তন হওয়া এ রোগের একটি লক্ষণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাগলের পিপিআর রোগের চিকিৎসা
এই রোগটি বহুল প্রচলিত একটি রোগ সকল বয়সের ছাগলের এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবে এক বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত ছাগলের এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং এই রোগে মারাও যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ রোগের বিভিন্ন রকম টিকা এবং ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন বর্তমান চিকিৎসাবিদেরা যে কারণে বর্তমানে এ রোগের অনেক চিকিৎসা উন্নতি হয়েছে।
এবং রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে এ রোগটি সাধারণত সংস্পর্শে বা এই রোগের আক্রান্ত ছাগলের সংস্পর্শে অন্যান্য ছাগলের হতে পারে এছাড়াও ছাগল খাবারের পানি বা অন্য ছাগল ওই একই পানি পান করাতে এর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই রোগটি খামারের কোন ছাগলের হলে সংস্পর্শে থাকা বাকি ছাগলের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি থাকে তাই এই রোগ দেখা দিলে অবশ্যই সেই ছাগলটিকে আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া উচিত। ছাগলের পিপিআর রোগের চিকিৎসা হিসেবে ভ্যাকসিন এবং টিকা বের হয়েছে এ সকল ভ্যাকসিন অথবা টিকার মাধ্যমে এই রোগের সুচিকিৎসা করা সম্ভব।
আরো পড়ুন: ছাগল পালন পদ্ধতি কি- কিভাবে ছাগলেরে খামার করা যায়
এছাড়াও এ রোগের জন্য আরো অন্যান্য চিকিৎসা রয়েছে যেগুলো বাড়িতে করা যাবে যেমন এ রোগ দেখা দেওয়ার পরে ছাগলের সুচিকিৎসা হলে
- ছাগল সুস্থ হওয়ার পরও তার খাবারের সঙ্গে ভিটামিন মিনারেল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।
- ছাগলকে ওই স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যাবে না।
- ছাগলকে মাঠে চড়ানো যাবে না সব সময় ঘরের ভিতরে রেখে পালন করতে হবে।
- ছাগলের মলমূত্র পরিষ্কার করার পরে ব্লেসিং পাউডার দিয়ে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করে মাটি চাপা দিতে হবে।
- ছাগলের ঘর বা নিজে সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে
- ছাগলের ঘরে ব্লিসিং পাউডার বা জীবাশক দিয়ে সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
ছাগলের রোগ প্রতিরোধ করার উপায়
ছাগলের রোগ প্রতিরোধ করার বিভিন্ন রকম উপায় রয়েছে। এ সকল উপায় আমাদের সকলের জানা উচিত। আমরা যদি ছাগল পালন করে থাকি বাসা বাড়িতে অথবা খামার হিসেবে বা বাণিজ্যিক হিসেবে ছাগল পালন করে থাকলে এ সকল বিষয় আমাদের জানা বাঞ্চনীয়। যে কোন সময় ছাগলের বিভিন্ন রকম রোগ দেখা দিতে পারে এজন্য আমাদের সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ছাগলকে সুস্থ করতে হবে। ছাগলের রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমে আমাদের ছাগল পালনের জন্য নিরাপদ একটি ঘর তৈরি করতে হবে যেখানে আলো ,বাতাস ,রোদ,সবকিছু পর্যাপ্ত পরিমাণ পৌঁছায়।
আরো পড়ুন: বসন্ত রোগের ঔষধের নাম এবং লক্ষন কি
অবশ্যই ছাগলের জন্য ঘরে মাচা তৈরি করতে হবে এবং যদি মেঝে পাকা করা হয় তাহলে সব
সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ছাগলের ঘর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে
ব্লেসিং পাউডার অথবা যেমন-নাশক দিয়ে ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে যেন পরজীবী আক্রমণ ও
অন্যান্য রোগ জীবাণু ঘরে প্রবেশ না করতে পারে। এছাড়াও ছাগলের রোগ দেখা দিলে
সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং সেই আক্রান্ত ছাগলকে আলাদা করে তার চিকিৎসা করতে হবে
যেন একই রোগে অন্যান্য ছাগল আক্রান্ত না হয়। ছাগলের রোগ প্রতিরোধ করতে হলে
বিভিন্ন রকম নিয়মকানুন মেনে ছাগল পালন করলে ছাগলের বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিরোধ করা
সম্ভব।
উপসংহার
আমরা যেহেতু ছাগলের খামার করেছি বা করি ছাগল পালন করছি সে ক্ষেত্রে ছাগলের
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান রাখা প্রয়োজন। সব
সময় ডাক্তারের অপেক্ষা করা বা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করে অনেক সময় ছাগলের
মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে এজন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো
ধারণা আমাদের রাখা উচিত। তাহলে আমরা বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিরোধ তৈরি করতে পারব এবং
বিভিন্ন চিকিৎসা আমরা নিজেরাই দিতে পারব। উপরোক্ত বিষয়ে ছাগলের বিভিন্ন রোগ
বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে এবং যে সকল রোগের ছাগল আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
এসব বিষয়ে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি এবং এই সকল রোগের বিভিন্ন রকম চিকিৎসা
ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে জেনেছি।
No comments:
Post a Comment