অটিজম কি? অটিজম বলতে কি বুঝি
অটিজমের বৈশিষ্ট্য ও মাত্রা প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে আলাদা। মূল শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো-সামাজিক মেলামেশা, যোগাযোগ ও পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ্ এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই অটিজমের মূল লক্ষণ হিসেবে পরিচিত। অটিজমের কারণে ইন্দ্রিয়ানুভুতি, অপরের সাথে যোগাযোগ করার কৌশল এবং সামাজিক প্রক্রিয়াগুলো বাধা প্রাপ্ত হয়।
ফলে তাদের মধ্যে একই ধরনের আচরণ অথবা ভিন্ন ভিন্ন আচরণের উৎসাহ দেখা যায়। এটা জানা জরুরী যে, অটিজমের লক্ষণগুলো স্নায়ুভিক কারণে হয় এবং একজনের সাথে আরেকজনের হুবহু মিল নেই।
পোস্ট সূচিপত্র:অটিজম কি? অটিজম বলতে কি বুঝি
- ভূমিকা
- অটিজম কি?-What is autism?
- অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম-Asperger's syndrome
- অটিজম আছে এমন শিশুদের সাধারণ কিছু আচরণ
- সামাজিক লক্ষণসমূহ কি কি
- যোগাযোগের সমস্যা কিরূপ হতে পারে
- পুনরাবৃত্তিক মূলক আচরণ কাকে বলে
- অটিজমের সাথে সম্পর্কিত কিছু গুণাবলী ও সবল দিক
- অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার-এর কারণ কি
- অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা ও মূলধারার শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করণ
- উপসংহার
ভূমিকা
দৈনন্দিন জীবনযাপনে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করি। সুখ দুঃখ হাসি কান্না আমাদের প্রতিদিনের ঘটনা। একটি পরিবার যখন একটি শিশু জনগণ করে তখন ওই পরিবারের আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। মা-বাবা শিশুটির সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য নানার ধরনের পরিকল্পনা করতে থাকে। তাদের এই পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শিশু সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ।
শিশুদের শারীরিক, মনসামাজিক, ও বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে ঘটলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। যখন কোন বাবা-মা বুঝতে পারে যে, তার শিশুটির অন্যান্য সাধারণ শিশুদের থেকে ভিন্ন আচরণ করছে অথবা বিকাশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করছে না বা বয়সের তুলনায় অনেক কম পিছিয়ে আছে, তখন তাদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
ধীরে ধীরে পরিবারটিতে নেমে আসে হতাশা। সন্তানের এই
ভিন্নতাকে মেনে নেওয়ার জন্য মা-বাবাকে প্রথমে সংগ্রাম করতে হয় নিজের মনের সাথে।
আবার সেই সাথে শিশুটির প্রতি সমাজের ও পরিবারের সদস্যদের বিরূপ নেতিবাচক মনোভাব
এর কারণে মা-বাবাকে প্রতিনিয়ত অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
আরো পড়ুন: প্রতিবন্ধী শিশু কাকে বলে- What is a disabled child?
অটিজম কি?-What is autism?
অটিজম কোন রোগ নয়। এটি স্নায়ু বিকাশ জনিত সমস্যার একটি বিস্তুত রূপ যা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত। এখানে স্নায়ু শব্দটি স্নায়ুতন্ত্রের বা মস্তিষ্কের সাথে স্নায়ুর সম্পর্ক বোঝায়। বিকাশ জনিত শব্দটির মাধ্যমে শিশুর বিকাশ প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে। পাক শৈশবকাল থেকে এই সমস্যাটি শুরু হয়, যা শিশু স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে। সাধারণত শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। সামাজিক সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের ভিন্নতাই এই সমস্যাটির প্রধান বিষয়।
এমন শিশুর শারীরিক ও বুদ্ধিভিত্তিক, শিক্ষা প্রক্রিয়া ও ইন্দ্রিয়ানুভুতি সংক্রান্ত সমস্যাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এটা মনে রাখা জরুরী যে, সব অটিস্টিক শিশুই একরকম নয়। যেমন অটিজমের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সব অটিস্টিক শিশুর মধ্যে কম বেশি পরিলক্ষিত হয় আবার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। অটিজম স্পেকট্রাম বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যর অটিজম লক্ষ্য করা যায়। অটিজম স্পেকট্রাম কে একটি রংধনুর সাথে তুলনা করা যায়। রংধনুতে যেমন অনেক রং থাকে, অটিজম স্পেকট্রামে ও তেমনি বিভিন্ন ধরনের অটিজম থাকে।
অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম-Asperger's syndrome
এটিও এক ধরনের অটিজম যা অটিজম স্পেকট্রামে দেখা যায়। এই শিশুদের আচরণগত সমস্যা থাকলেও বুদ্ধিভিত্তিক ও ভাষাগত বিকাশে কোন সমস্যা থাকে না। তবে ভাষার বিকাশ স্বাভাবিক এবং শব্দ ভান্ডার পর্যাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক আলাপচারিতায় অংশ নিতে এদের সমস্যা হয়। এরা একই ধরনের আচরণ পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। বিষয়তো অন্যের সাথে যোগাযোগের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো যেমন চোখে চোখ রেখে তাকানো, অন্যের মৌখিক অভিব্যক্তি, ইশারা ইঙ্গিত, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি এবং আবেগের বহিঃপ্রকাশ তারা বুঝতে পারেনা।
এরা কথার আক্ষরিক ব্যাখ্যা করে, ফলে বাগধারা, প্রবাদ, রসিকতা এবং ব্যঙ্গ বুঝতে পারেনা। এমন শিশুদের বিকাশ বিলম্বিত হয় না, শিক্ষা ক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে থাকে, এমনকি বুদ্ধিমত্তাও থাকে সাধারণের চাইতে বেশি। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম হার দশ গুণ বেশি। এরা যে কোনো বিষয়ে সঠিক ও সাবলীল ভাবে পড়তে শেখে এবং বিষয়টির প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে পারে না। সাধারণত অ্যাসপার্জার্স শিক্ষার্থীদের শব্দ ভান্ডার অনেক বেশি। খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারে ও অনেক সময় তাদের পছন্দের বিষয়ের ওপর দীর্ঘ আলোচনা করতে পারে। তবে সে সময় খেয়ালই করে না যে আশেপাশের মানুষেরা সেই বিষয়টিতে আগ্রহী কিনা।
আরো পড়ুন: সুস্থ জীবনের স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা
অটিজম আছে এমন শিশুদের সাধারণ কিছু আচরণ
আমরা যে সকল বিষয়গুলো লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবো শিশুটি অটিজমে আক্রান্ত কিনা তা
নিম্নরূপ-
- চোখের চোখ না রাখা বা কম রাখা
- ডাকলে সাড়া না দেওয়া
- বিকাশ জনিত দক্ষতার মধ্যে অমিল
- প্রাত্যহিক রুটিন পরিবর্তন এ বাধা দান
- অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা উত্তেজনা
- আবেগ প্রকাশে অসুবিধা
- অস্বাভাবিক শারীরিক অঙ্গীভঙ্গি
- সত্যিকার বিপদে ভয় না পাওয়া, অন্যদিকে তেমন বিপজ্জনক নয় এমন অবস্থা বা পরিবেশে অস্বাভাবিক ভয় পাওয়া
- অসঙ্গতিপূর্ণ হাসি-কান্না
- কোন কিছুর প্রতি অস্বাভাবিক আকর্ষণ
- খাওয়া, ঘুম, ত্যাগে অস্বাভাবিকতা
- নিজের জন্য বা অপরের জন্য ক্ষতিকর ব্যবহার
- অখাদ্য খাওয়া
সামাজিক লক্ষণসমূহ কি কি
অটিজম আছে এমন শিশুদের অধিকাংশই মধ্যেই অন্যের সাথে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার গুরুত্ব ও সমস্যা দেখা দেয়। জীবনে প্রথম কয়েক মাস তারা অন্যের চোখে চোখ রেখে তাকায় না। তারা অন্যের প্রতি নির্লিপ্ত থাকে এবং একা থাকতে পছন্দ করে। তারা অন্যের মনোযোগ পেতে চায় না এবং জড়িয়ে ধরা পছন্দ করেনা। তারা অন্যের রাগ বা আদরের প্রতি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় না। শিশুদের কোন কিছু শিখতে অনেক সময় লাগে এবং তারা অন্যের চিন্তা ও অনুভূতি সম্পর্কে কোন আগ্রহ দেখায় না। সাধারণ ইশারা ইঙ্গিত যেমন-মুচকি হাসি, চোখ পিটপিট করা বা মৌখিক অভিব্যক্তি তাদের কাছে কর্ম অর্থপূর্ণ বিষয়।
এইসব শিশু যারা ইশারা বুঝতে পারে না তাদের কাছে ”এদিকে এসো” বাক্যটি সবসময় একই অর্থ বহন করে অথচ এই বাক্যটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে। দেহ ভঙ্গি ও মৌখিক অভিব্যক্তি না বোঝার কারণে এসব শিশুর কাছে তার সামাজিক জগত বোধহীন হয়ে ওঠে। অটিস্টিক শিশুদের উত্তেজিত আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠার প্রবণতা তাদের সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যখন তারা অপরিচিত ও বাইরের পরিবেশে যায় তখন তারা রেগে যায় বা হতাশা হয়, আবার তাদের কেউ কেউ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ সময় তারা জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে পারে, অন্যকে আঘাত করতে পারে অথবা নিজের শরীরে আঘাত করতে পারে।
যোগাযোগের সমস্যা কিরূপ হতে পারে
যোগাযোগের উন্নত মাধ্যম হলো ভাষা। অসুবিধার কারণে অটিস্টিক শিশুদের অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সমস্যা দেখা দেয়। ভাষাগত বিকাশের ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কিছু অটিস্টিক শিশু কখনোই কথা বলতে শেখে না, তারা সারা জীবন নিষ্ঠুর থেকে যায়। কোন কোন শিশু জন্মের কয়েক মাস পরে বাবলিং কথা বলতে শিখে কিন্তু কিছুদিন পর সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। আবার কারো ক্ষেত্রে ভাষা শিখতে পাঁচ থেকে নয় বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এমন অনেক শিশুর ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।
তারা শব্দ বিন্যাস করে সঠিক
বাক্য গঠন করতে পারেনা, কেউ কেউ এই শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে, কেউ কেউ যে
শব্দটি শুনে সেটি বারবার বলতে থাকে। শিশু কোন একটি নির্দিষ্ট শব্দ বলে এবং টিয়া
পাখির মত শব্দটি বারবার একনাগারে বলতে থাকে, যাকে ইকোলালিয়া বলে। অনেক অটিস্টিক
শিশু রয়েছে যাদের ভাষার ক্ষেত্রে খুবই সামান্য সমস্যা থাকে। এরা অনেক শব্দ
ব্যবহার করে ভালোভাবে কথা বলতে পারে তবে সঠিকভাবে কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারে না।
তারা বাক্যের অর্থের তারতম্য বুঝতে পারে না। আরেকটি বিষয় হলো শারীরিক অঙ্গভঙ্গি,
কণ্ঠস্বর উঠানোর ফলে কথার অর্থের যে ধরনের তারতম্য হয় তা তারা সঠিকভাবে
বোঝেনা।
আরো পড়ুন: সুস্থ জীবন যাপনে শারীরিক সক্ষমতার গুরুত্ব
পুনরাবৃত্তিক মূলক আচরণ কাকে বলে
অটিজম আছে এমন শিশুরা শারীরিকভাবে স্বাভাবিক এবং প্রায় সবারই বেশি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ভালো। কিন্তু অস্বাভাবিক পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ তাদেরকে অন্য শিশুদের থেকে আলাদা করে রাখে। এই অস্বাভাবিক পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ তীব্র থেকে মৃদু হতে পারে। তাদের অনেকেই বারবার হাত নাড়ায়, পায়ের সামনের অংশের উপর ভর দিয়ে হাটে, অথবা কোন একটি বিশেষ ভঙ্গিতে দীর্ঘ সময় স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।
তারা অনেক সময় খেলনা গাড়িবা ট্রেন দিয়ে খেলার করার বদলে এগুলোকে এক লাইনে সাজায়। যদি অসাবধানতাবশত কেউ তাদের এই সাজানো গাড়ি বা ট্রেন নাড়িয়ে ফেলে তবে তারা খুব হতাশ ও বিচলিত হয় পরে। অটিস্টিক শিশুরা চায় তাদের চারপাশে সব কিছু যেমন আছে তেমনই থাকুক। তারা কোন পরিবর্তন পছন্দ করেনা। তাদের দোনো দিন রুটিনের নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খাওয়া, গোসল করা, একই রাস্তায় নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে সামান্যতম হের ফের হলে তারা খুব বিরক্ত হয়। পুনরাবৃত্তি মূল্যক তার তাদের আচরণকে আগের থেকে যুক্ত করে রাখে যেমন-শিশু ফ্যান ঘোড়া ও আলোর দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ সময় পার করে দেয় ইত্যাদি।
অটিজমের সাথে সম্পর্কিত কিছু গুণাবলী ও সবল দিক
অটিস্টিক শিশুদের কোন বিষয়ে অসাধারণ দক্ষতা বা ক্ষমতা দেখতে পাওয়া যায়। এর সংখ্যা অতি নগণ্য তবুও এ ধরনের বিশেষ দক্ষতা তাদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং তাদেরকে করে তুলতে পারে অসাধারণ। এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে, প্রতিটি অটিস্টিক শিশুর মধ্যে এ ধরনের বিশেষ প্রতিবাদ থাকবে।
তবে এ বিষয়ে সচেতন থাকলে
তাদের সুপ্ত প্রতিভা খুঁজে বের করা সহজ হবে, এবং তার অন্যান্য দিকের ঘাটতি কিছুটা
হলেও পূরণ হবে। অটিস্টিক শিশুরা যে বিষয়টির ওপর বেশি মনোযোগ দেয় সে দিকেই তাদের
প্রতিভা বিকাশিত হতে পারে। দেখা যায় ক্যালেন্ডারের দিকে মনোযোগ আছে এমন শিশুটি
অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির জন্ম তারিখ বা বার সঠিকভাবে মনে রাখতে পারে, এভাবে সে
একসাথে অনেক তথ্য মনে রাখতে পারে। আবার একটি কঠিন ও কৌশলিক আজকে ছোট ছোট সহজ ভাগে
ভাগ করে এবং সেটার দিকে মনোযোগ দিয়ে তারা সেই কঠিন ও কৌশলিক কাজটি সমাধান করতে
পারে|।
আরো পড়ুন:উপসংহারে যদি বিচ্ছেদই থাকে তাহলে সূচনা এত মধুর কেন
অটিজম আছে এমন শিশুদের কিছু সমন্ধি নিম্নরূপ-
- সু নিপুণভাবে দেখার ক্ষমতা
- সুশৃংখল নিয়ম নীতির ধারণা
- বিস্তারিত ও মুখস্ত করার মত বিষয়, ট্রেনের সময়সূচী, খেলার স্কোর মনে রাখতে পারে
- দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতি
- কম্পিউটার ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা
- সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহ
- বিশেষ পছন্দনীয় বিষয়ের প্রতি মনোযোগ
- শৈল্পিক দক্ষতা
- অল্প বয়সে লিখিত ভাষা পড়তে পারা বুঝতে পারা
- বানান মনে রাখা
- সততা
- সমস্যা সমাধানে দক্ষতা
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার-এর কারণ কি
এক কথা বলতে গেলে অটিজম কেন হয় এখন পর্যন্ত তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা ও জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে কারণ অনুসন্ধানের কাজটিও বেড়ে চলছে।বিভিন্ন কারণে যে অটিজম হয়ে থাকে এই বিষয়টি বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত। বিভিন্ন পর্যায়ে অটিজমের যে জটিল লক্ষণ দেখা যায় তা থেকে বলা যায় যে, একাধিক কারণে অটিজম হতে পারে। জন্ম-পূর্ব ও জন্মকালীন এবং জন্ম পরবর্তী যেকোনো সময়ে জেনেটিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের প্রভাবে অটিজম হতে পারে। কোন শিশুর মধ্যে অটিজমের কিছু লক্ষণ থাকলেও তার অটিজম আছে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা কই বলতে পারবেন শিশুটির অটিজম আছে কিনা। শিশু বিশেষজ্ঞ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু ও স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী কিম্বা অটিজমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসা অটিজমের নির্ণয় করবেন।
অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা ও মূলধারার শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করণ
অটিস্টিক শিশুদের জন্য শিক্ষাদান কার্যক্রম খুবই নিবিড় ও বিশদভাবে হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের প্রয়োজন আছে এবং শিক্ষার্থীর আচরণ, বিকাশ, সামাজিক ও একাডেমিক প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে সপ্তাহের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য কত সময় ব্যয় করতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়। কেবলমাত্র একটি পদ্ধতিতে অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষাদান সম্ভব নয়, একসাথে বা ক্রমান্বয়ে একাধিক পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হয় নীতিমালার উপর ভিত্তি করে অনেকগুলো শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সহায়তা প্রদান ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। শিশুর সবল দিক ও চাহিদারতা জন্য প্রস্তুতি নিতে অভিভাবক সকল সদস্যের মধ্যে যোগাযোগ থাকা জরুরী এবং ইতিবাচক সফলতার জন্য কার্যকর কৌশল নির্ধারণ, সমন্বয়ে, সহযোগিতার প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের শুধু চিনিকক্ষে বসিয়ে দেওয়াই নয়, তাদের মূল ধারার কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও কার্যকর অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে। অটেস্টিক শিক্ষার্থীদের সফলতার জন্য তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। সেজন্য ছোট ছোট সাফল্য উল্লেখ করতে হবে। অটিজমের বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর গুণাবলী থাকলে উপযুক্ত পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়।
উপসংহার
উপরোক্ত বিষয় হতে অটিজম বিষয়ে আমরা অনেক কিছুই জানলাম। অটিজম শিশুদের সঙ্গে
আমাদের কিরূপ আচরণ করা উচিত এবং তাদের কিরূপ আচরণ হয় এ সকল বিষয়ে আমরা জেনেছি।
সাধারণত সারাজীবন ধরে অটিজমের লক্ষণগুলো একজনের মধ্যে থাকতে পারে, তবে যথাযথ
সাহায্য নির্দেশনা ও উপযুক্ত শিক্ষা পেলে সময়ের সঙ্গে কিছু কিছু লক্ষণের উন্নতি
হয়। যাদের মধ্যে অল্পমাত্রার সমস্যা থাকে তাদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয় এবং তারা
মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। মাঝারি ও বেশি সমস্যার শিশুদের ক্ষেত্রে
দেখা যায় যে তারা ঠিকমতো কথা বলতে পারে না, এবং নিজের যত্ন নিতে পারেনা তবে
প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে এবং নিবিড় প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা পেলে
অটিস্টিক শিশুরাও নানা ক্ষেত্রে সফলতা পেতে পারে।
No comments:
Post a Comment