বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা ও তার প্রতিশোধক - M.A IT FIRM

বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা ও তার প্রতিশোধক

 বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা ও তার প্রতিশোধক

দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নানা রকম দুর্ঘটনা জীবনের গতিপথে সাময়িক বাধা সৃষ্টি করে। এসব দুর্ঘটনা নানাভাবে ঘটতে পারে। খেলাধুলা বা ব্যায়াম করার সময় হঠাৎ করে পায়ে ব্যথা পাওয়া, পা মুচকে বা হাড় ভেঙে যাওয়া, কেটে যাওয়া মত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। 

বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা ও তার প্রতিশোধক


দুর্ঘটনা হঠাৎই ঘটে। তখন আশেপাশে কোন ডাক্তার পাওয়া যায় না। এ সময় রোগীকে তাৎক্ষণিক প্রতিবিধান দিতে হয়। সেজন্য আমাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরী। প্রাথমিক প্রতিবিধান বা প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা সুস্থ জীবন যাপনে সক্ষম হই।

পোষ্ট সূচিপত্র:বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা ও তার প্রতিশোধক

ভূমিকা

খেলাধুলা আমরা সকলেই পছন্দ করি। সুস্থ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে এবং সুস্থ দেহের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন রয়েছ। খেলাধুলার মাধ্যমে আমরা ব্যায়াম করার সুবিধা ভোগ করি। বিভিন্ন রকম খেলাধুলা বিভিন্ন রকম ব্যায়ামের অংশ হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিনই আমরা সকাল বিকেল বিভিন্ন রকম খেলায় অভ্যস্ত। এতে করে আমাদের বিকেলের সময়টা কেটে যায় এবং শারীরিক দৈহিক ও মানসিক স্বস্তি মিলে। অনেক সময় এসব খেলা ধুলা করার সময় বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনা ঘটে। এ সকল দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয় তবে এ সকল দুর্ঘটনা ঘটার পরে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে যে সকল চিকিৎসা দেওয়া যায় সেই সকল চিকিৎসা ধারণা আমাদের সকলের রাখা উচিত।

আরো পড়ুন: সুস্থ দেহ পেতে খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা

প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্ব, পদ্ধতি ও উপকরণ

প্রাথমিক চিকিৎসা হলো চিকিৎসা শাস্ত্রের অন্তর্গত একটি প্রাথমিক বিভাগ। এই বিদ্যায় অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসা কারি দুর্ঘটনা বা অসুস্থ হলে তাকে সঠিক পদ্ধতিতে ও যত্ন সহকারে প্রাথমিক প্রতিবিধান বা প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে। সম্পূর্ণ চিকিৎসা করা প্রতিবিধানের উদ্দেশ্য নয়। কারণ প্রতিবিধানকারী চিকিৎসক নন প্রাথমিক চিকিৎসককারি ডাক্তার আসার আগ পর্যন্ত বা হাসপাতালে স্থানান্তর করার আগ পর্যন্ত অসুস্থ ব্যক্তির প্রাণ রক্ষা করা, তো করার পর সুগম করা এবং রোগীর অবস্থা যেন আরো খারাপ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে জীবন রক্ষার ভার নেওয়াই হলো প্রাথমিক চিকিৎসকের উদ্দেশ্য। যদিও চিকিৎসক কখনো জীবন রক্ষা করতে পারেনা সৃষ্টিকর্তার নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রত্যেকের জীবন প্রাথমিক চিকিৎসক চেষ্টা করা মাত্র।

প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্ব, পদ্ধতি ও উপকরণ


প্রাথমিক চিকিৎসার পদ্ধতি: প্রতিটি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অনুসরণ করতে হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পদ্ধতিগুলো হল-

  1. খুব তাড়াতাড়ি অবশ্যই ঠান্ডা মাথায় আগের কাজ আগে ও পরের কাজ পরে করতে হবে।
  2.  রোগীকে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ আশ্রয় নিতে হবে।
  3. রোগীর জ্ঞান আছে কিনা দেখতে হবে।
  4. শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন দেখা দিলে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
  5. রক্তক্ষরণ থাকলে তাৎক্ষণিক বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে।
  6. নাড়ীর গতির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
  7. রোগীর জ্ঞান না থাকলে শরীরের কাপড়চোপড় আলগা করে দিতে হবে।
  8. রোগী ও তার সাথে থাকা সকলকে আশ্বাস ও সাহস দিতে হবে।
  9. বেশি ভিড় করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
  10. পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ: নিম্নলিখিত উপকরণ গুলো প্রাথমিক চিকিৎসা করার জন্য প্রয়োজন হয়-

জীবাণুমুক্ত তুলা বা গঞ্জ, লিন্ট, প্যাড, কাচি, ত্রিকোণ ও রোলার ব্যান্ডেজ, ডেটল, ফ্লাট প্যাড ও রিং প্যাড, আয়োডিন, বেঞ্জিন, একটি চিমটা, সেফটিপিন; ব্লেড সেলাই করার জন্য সুচ, স্পিরিট, লিউকোপ্লাস্টার, আইপ্যাড. একটি টিউব বার্নল, একটি ওষুধের ট্রে, একটি সিরিন্স, একটি ফাস্ট এইট বক্স।

প্রাথমিক চিকিৎসাকারীর গুনাবলী

একজন প্রাথমিক চিকিৎসকারীর নিম্নলিখিত গুণাবলী থাকা প্রয়োজন-

  1. পর্যবেক্ষণ জ্ঞান: প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী বা চিকিৎসাকারি রোগীর আঘাতের কারণ ও চিহ্ন সহজে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এমন।
  2. বিচক্ষণতা: প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী কোন অপ্রয়োজনীয় কাজ না করে সহজে রোগীর লক্ষণাদি দেখে আহত জায়গা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সকলের বিশ্বাস ভজন হতে পারে।
  3. অভিজ্ঞতা: প্রাথমিক চিকিৎসাকারীর হাতের কাছে যে সমস্ত জিনিস পাবে তা দিয়েই সে প্রতি বিধানের কাজ চালাতে পারেন সেরকম অভিজ্ঞতা হতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে যেন বেশি না হয়।
  4. কর্মদক্ষতা: প্রতিবিধানকারী অযথা রোগীকে যেন কষ্ট না দেয়। অভিজ্ঞতার আলোকে অত্যন্ত সহজ ও নিপুণভাবে কাজটি সম্পন্ন করবে।
  5. সঠিক উপদেশ দান: প্রতিবিধানকারী ও তার নিকটস্থ লোকদেরকে উপস্থিতি কর্তব্য সমন্ধে সঠিক উপদেশ বা নির্দেশ দিবেন।
  6. সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ: প্রাথমিক চিকিৎসক বা প্রতিবেদনকারী ও আঘাতের গুরুত্ব বুঝে আগের কাজ আগে ও পরের কাজ পরে করবে।
  7. আত্মবিশ্বাস: প্রতিবেদনকারী বা প্রাথমিক চিকিৎসক প্রথমে অসুবিধা হলেও সে যেন প্রাথমিক চিকিৎসকের কাজ আত্মবিশ্বাসের সাথে শেষ করে।
  8. সহানুভূতি: প্রতিবেদনকারী রোগীর প্রতি কখনো কঠোর হবে না। পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে অন্যদের সাহস দিতে হবে।

চামড়া ছড়ে যাওয়া, মাংসপেশীতে টান ও ফুলে যাওয়া

দৈনন্দিন চলার পথে ও খেলাধুলা করার সময় আমরা যেকোনো সময় দুর্ঘটনায় করতে পারি। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে কোন কোন সময় দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা সম্ভব। আর যদি দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাহলে তাৎক্ষণিক জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। খেলাধুলা করার সময় আমরা বিভিন্ন ভাবে দুর্ঘটনায় পড়তে পারি। দুর্ঘটনাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পন্থা গুলো মেনে চলা প্রয়োজন। যেমন-

  1. খেলাধুলা ও ব্যায়াম করার পূর্বে শরীর ভালোভাবে গরম করে খেলার উপযোগী করে নিতে হবে।
  2. প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যায়াম বা খেলাধুলা করা উচিত নয়।
  3. ব্যায়াম করার সময় নিজের উচ্চতা ও ওজন অনুসারে সঙ্গী বেছে নিতে হবে।
  4. পিচ্ছিল, ভেজা, ও ইট পাটকেল যুক্ত মাঠে খেলা করা উচিত নয়।
  5. গাছ বা বৈদ্যুতিক তারের কাছে খেলাধুলা করা উচিত নয়।

এগুলো মেনে চললে দুর্ঘটনা অনেকটাই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

চামড়া ছড়ে যাওয়া: হাতুড়ি, পাথর বা কোন ভেজা জিনিসে আঘাতে বা খেলার সময় বুটের আঘাতে চামড়া  ছড়ে যেতে পারে। চামড়া ছড়ে গেলে ওই স্থানটি থেতেলানো, রক্ত জমা ও কালশিটেযুক্ত হয়।


প্রাথমিক চিকিৎসা যথা নিম্নরুপ-

  1. ক্ষতস্থানে ঠান্ডা পানি বা বরফ লাগাতে হবে।
  2. পরিষ্কার তোয়ালে বা কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে পুনরায় ভিজিয়ে দিতে হবে।
  3. রক্ত বের হলে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
  4. জীবাণুমুক্ত তুলা দিয়ে জমাট রক্ত মুছে মলম লাগাতে হবে।
  5. প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে পাঠাতে হবে।

প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্ব, পদ্ধতি ও উপকরণ
মাংসপেশীতে টান ধরা: খেলাধুলা করার সময় বা ভারি কোন জিনিস তোলার সময় মাংসপেশিতে টান লেগে মাংসপেশির আস ছিরে ব্যথা অনুভূত হয় ও চলতে গেলে খুব কষ্ট হয়। কোন কোন সময় আহত স্থানে ফুলে ওঠে এবং কালশিরে পড়ে যায়। এ অবস্থায় কে মাসল পুল বা মাংসপেশিতে টান বলে। এর ফলে আহত স্থানটিকে বিশ্রাম দিয়ে বরফ লাগাতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর গরম পানিতে বোরিক পাউডারের কম্প্রেস প্রয়োগ করতে হবে। অ্যাটলেটিক্স ও সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের মাংসপেশিতে টান ধরে বেশি।

ফুলে যাওয়া: ফুটবল খেলার সময় বুটের আঘাতে, বক্সিং খেলার সময় মুষ্টির আঘাতে বা পড়ে গিয়ে আঘাত লেগে শরীরে কোন স্থান ফুলে যেতে পারে। এর প্রথম কাজই হলো বরফ লাগানো। কিছুক্ষণ বরফ লাগালে খোলা আস্তে আস্তে কমে যাবে। এরপরও যদি ব্যথা থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

সন্ধিচ্যুতি, মচকানো ও হাড় ভাঙ্গা এবং লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়া

শরীরের একটি অস্থি/হাড় অন্য হাড়ের সাথে যেখানে মিলিত হয়েছে ওই স্থানকে সন্ধান বা হাড়জোড়া বলে। অর্থাৎ দুই বা ততোধিক হাড়ের সংযোগস্থানের নাম সন্ধি। এই সন্ধির স্থান থেকে যদি হাড়ের বিচ্যুতি ঘটে তাকে সন্ধিচ্যুতি বলে।

সন্ধিচ্যুতির লক্ষণ: সন্ধিস্থান খুলে যাওয়া, সন্ধিস্থানে ব্যথা অনুভব করা, সন্ধিস্তান নাড়াচাড়া করানো যায় না, সন্ধিস্থানের হাড় সরে গিয়ে বিকৃত রূপ ধারণ করা।

 সন্ধিস্থানের প্রাথমিক চিকিৎসা যথা-

  1. আহত অঙ্গ যত সম্ভব আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হবে।
  2. আহত অঙ্গ নাড়াচাড়া করা যাবে না।
  3. সংযোগ বিচ্যুতি অস্থি দুটিকে সংযোগ দিতে হবে বা সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  4. প্রয়োজনে হাড় ভাঙ্গার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করবে।
  5. রোগীর শক লাগলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
  6. হাড় ভাঙ্গার সন্দেহ হলে হাড় ভাঙ্গার ব্যান্ডেজ করতে হবে।
  7. রোগীকে যত সম্ভব দ্রুত ডাক্তারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

মচকানো ও হাড়ভাঙ্গা: অস্থি বাহারের জোড়া লাগানোর স্থানে শক্ত লিগামেন্ট হাড়ের জোড়াকে একসাথে রাখে। কোন কারণে যদি এই লিগামেন টানটান হয় কিংবা ফিরে যায় তাহলে হাড়ের সন্ধি স্থলে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং আহত স্থানের চারপাশে ফুলে ওঠে। একে অস্থিসন্ধির মচকানো বলে। খেলাধুলা বা ব্যায়ামের সময় স্থানটিকে সবচেয়ে আরামদায়ক অবস্থানে রাখতে হবে। এরপর তুলা বেশ পুরো করে আহতস্থানের উপরে ও নিচে দিয়ে শক্ত করে ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে।

লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া: লিগামেন্ট জয়েন্ট এর সাথে সম্পৃক্ত। জয়েন্ট এ লিগামেন্ট, টেন্ডন ও মেমব্রেন দ্বারা বেষ্টিত। চ্যাপ্টা জাতীয় বন্ধনীর নাম লিগামেন্ট। দুই হারের নাড়াচাড়া করতে সাহায্য করে। এদের ওপর আছে টিস্যুর বন্ধনী ফলে সংযোগস্থলটি আরো মজবুত করছে। কখনো যদি অসমন্তরল জায়গায় পা করে, বাস থেকে নামার সময় জয়েন্টে ঝাঁকি লাগে বা দৌড়ের সময় জয়েন্টে কোন কারণে আঘাত লাগলে লিগামেন্ট ছিড়ে যায়। আহত স্থানটি ফুলে যায় ও ব্যথা অনুভূত হয়। ওই অঙ্গ নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়। এরূপ ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে বরফ লাগাতে হবে এবং বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

আরো পড়ুন: মানব জীবনের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব

ক্ষত, ক্ষতের প্রকারভেদ ও প্রতিকার

শরীরের কোন তন্ত্র চিহ্ন অথবা ২ বা ততোধিক অংশে বিভক্ত হলে বা তন্ত্র ছিদ্র হলে তাকে ক্ষত বলে। সাধারণভাবে ত্বক কেটে রক্তপাত হলে তাকে ক্ষত বলে। ক্ষত পাঁচ প্রকার যথা-

১. পিষ্ট ক্ষত: মানুষের দেহে সূক্ষ্মভাবে রথিত সমূহ ভারী বস্তুর আঘাতে ফলে চামড়ার কোন ক্ষতি না হয়ে অন্তঃস্থ ক্যাপিলারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হয়। কিন্তু সেই রক্ত বাইরে বেরোতে না পেরে ভিতরে জমে থাকে তাকে পৃষ্ঠ ক্ষত বলে। এ ধরনের খতে দৃশ্যমান রক্তপাত হয় না।

২. ছিন্ন ভিন্ন ক্ষত: জন্তু জানোয়ারের আক্রমণ, মেশিনে থ্যাতলালে, গলাগুলির আঘাতে যে ক্ষত হয় তাকে ছিন্নভিন্ন কত বলে। কতগুলো অসমান বা বিক্ষিপ্তভাবে থাকে।

৩. কর্তন জনিত ক্ষত: কোন ধারালো অস্ত্র  দিয়ে কেটে যে ক্ষত হয় তাকে কর্তন জনিত কত বলে। এই ধরনের হতে ত্বক ও রক্তনালী মসৃণ ভাবে কেটে যায় এবং অবিরাম ভাবে রক্তপাত হয় সহজে বন্ধ করা যায় না।

৪. বিদ্ধ ক্ষত: ক্ষতটা গভীর হয়। সেই তুলনায় মুখের পরিসর বড় হয় না। এই ক্ষতকে বিদ্ধ ক্ষত বলে। যেমন-সুচ, পেরেক, ছুরি, তার ও তারকাটা ইত্যাদি দ্বারা এই ক্ষত হয়। রক্তপাত প্রচুর হতে পারে নাও পারে।

৫. মিশ্র জাতীয় ক্ষত: উপরে বর্ণিত একাধিক খত একচ্ছ মিলে যে খতের সৃষ্টি হয় তাকে মিশ্র ক্ষত বলে। যেমন-গুলির ক্ষত, ক্ষতের মুখের পরিসর ছোট এবং অভ্যন্তরে কতটা গভীরতা দেখে বোঝা যায় না। অপরদিকে সেখান দিয়ে গুলি বের হয়েছে সেই স্থান বড় ও আকারে অসমান ভাবে ক্ষত থাকে। এই ক্ষতটি একদিকে বিদ্ধ ক্ষত অপরদিকে ছিন্ন ভিন্ন ক্ষত। দুটি মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয়।

বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা ও তার প্রতিশোধক

ক্ষতস্থানের প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রতিকার

  1. রোগীকে শুয়ে দিতে হবে এবং রোগী যেন সহজ ও নিশ্চল ভাবে শুয়ে থাকতে পারে।
  2. ক্ষতস্থানকে হার্ট লেভেল বা হৃদপিণ্ড সম তার উপরে রাখতে হবে যাতে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত চলাচল কমে রক্ত পড়া থেমে যায়।
  3. আহত হওয়ার সাথে সাথে ক্ষত স্থানে বরফ লাগাতে হবে।
  4. রোগী যত সম্ভব কম নাড়াচাড়া করবে।
  5. ক্ষতস্থানে এন্টিসেপটিক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  6. রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য পরোক্ষ বা পক্ষ চাপ দিতে হবে।
  7. ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধলে উক্ত জমাট বাধা রক্ত সঞ্চালনের চেষ্টা করতে হবে।
  8. ক্ষতস্থানে জীবাণুমুক্ত প্যাড ব্যবহার করতে হবে।
  9. আহত অঙ্গ কে ব্যান্ডেজ বেঁধে স্থির রাখতে হবে।
  10. কোন উত্তেজক দব্য বা পানীয় পান করাতে দেওয়া যাবে না।
  11. দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

উপসংহার

উপরোক্ত বিষয় হতে আমরা জানলাম বিভিন্ন রকম ক্ষত এর প্রাথমিক চিকিৎসা এবং বিভিন্ন রকম ক্ষত সম্বন্ধে। এ সকল ক্ষত বা দুর্ঘটনা আমাদের যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থাতে ঘটতে পারে। এ কারণে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করা উচিত। এবং আমরা যদি খেলাধুলা বা ব্যায়াম করে থাকি সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে আমাদের খেলাধুলা বা ব্যায়াম করা উচিত যাতে এই সকল দুর্ঘটনা কবলে না করতে হয়। এবং এ সকল দুর্ঘটনা যদি ঘটেই যায় তাহলে কিভাবে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করব বা আমাদের কেউ এমত অবস্থায় পড়লে আমরা কিভাবে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করব সেই বিষয়ে আমরা জেনেছি।

No comments:

Post a Comment