ডাব খাওয়ার উপকারিতা এবং ডাব চাষাবাদ এর নিয়মাবলী
ডাব খাওয়ার বিভিন্ন প্রকার উপকারিতা রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানি অথবা অনেকে জানে না। তবে অধিকাংশ সময়ই আমাদের চিকিৎসক পরামর্শ অনুযায়ী বলেন যে আমাদেরকে ডাব খেতে। আবার অতিরিক্ত গরমে আমরা ডাব খেয়ে থাকি।
কেননা ডাবকে একটি ঠান্ডা পানীয় এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এছাড়াও বিভিন্ন অসুস্থতার সময় আমরা ডাব খেয়ে থাকি। ডাবের পানিতে রয়েছে যে পরিমাণ পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপে হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমায় এছাড়াও আরও বিভিন্ন রকম উপকারিতা ডাবে রয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্র:ডাব খাওয়ার উপকারিতা এবং ডাব চাষাবাদ এর নিয়মাবলী
- ভূমিকা
- ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা
- ডাবের পানি খাওয়ার অপকারিতা
- ডাবের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা
- ডাব চাষের নিয়মাবলী কি
- উপসংহার
ভূমিকা
আমরা গরমকালে আসলে নিয়মিত যে পরিমাণ ডাব খাই বা খাওয়া হয় সেই পরিমাণ ডাব অন্যান্য সময় খাওয়া হয় না কেননা ডাব একটি ঠান্ডা জাতীয় পানীয় এটি শীতের কালে খাওয়া যায় না। এ কারণে খাওয়া যায় না এই পানিও শীতের দিনে আরো ঠান্ডা হয়ে থাকে যে কারণে আমরা খাই না । এছাড়াও শীতের সময় আমাদের শরীর ঠান্ডা থাকে যে কারণে ডাবের পানি খাওয়া হয় না সাধারণত ডাবের পানি ঠান্ডা রাখার জন্য খাওয়া হয়।
বর্তমানে ডাব চাষে কৃষকেরা প্রচুর পরিমাণ আগ্রহী হয়ে পড়েছেন কেননা
এখন আর ডাব চাষ বা উৎপাদন করার জন্য 10 বছর 15 বছর অপেক্ষা করতে হয় না দুই থেকে
তিন বছরের মধ্যেই ডাব গাছ থেকে ডাব এর ফলন উৎপাদন করা সম্ভব হয়। বিভিন্ন জাতের
ডাবের চাষ বর্তমানে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে। যে কারণে ডাব চাষীরা খুবই আগ্রহের
সাথে ডাব চাষ করছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাব খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাব চাষ
করাও প্রয়োজন। তবে দেশীয় ডাব গাছ হতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাব সংগ্রহ করা
সম্ভব নয় এ কারণে বিভিন্ন জাতের ডাব চাষ করে বর্তমানে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন এবং
দেশের ডাবের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছেন।
আরো পড়ুন: ঘুমের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি - ঘুমের ওষুধ ছাড়ার উপায়
ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা কি
ডাবের পানির বিভিন্ন প্রকার উপকারিতা রয়েছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমরা অনেক সময় ডাবের পানি খেয়ে থাকি। আবার অতিরিক্ত তাপমাত্রা সময় শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য ডাবের পানি খেয়ে থাকি। এছাড়াও ডাবের পানিতে রয়েছে সুস্বাদু যা আমরা সাধারণ পানির থেকে বেশি পরিমাণ স্বাদ গ্রহণ করে খেতে পারি। ডাব বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই পাওয়া যায় তবে বিভিন্ন দেশে এর বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া বিভিন্ন রকম। কিছু দেশে ডাবের পানিকে ক্যানে বা বোতলে রূপান্তরিত করে বিক্রয় যোগ্য করা হয় আবার বিভিন্ন দেশে সরাসরি ডাব কেটে বিক্রি করা হয়।
ডাবের পানিতে রয়েছে 95% পানি এছাড়াও রয়েছে নাইট্রোজেন, ফসফরিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম ,ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড, এ সকল উপাদান গুলো বিভিন্ন পরিমাণে ডাবের পানিতে পাওয়া যায় যে সকল উপাদানগুলো পাওয়া যায় ডাবের পানিতে সকল উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই কার্যকারী। ডাবের পানিকে প্রাকৃতিক স্যালাইন বলা হয়ে থাকে যারা রোদে কাজ করে তারা দিনে দুই তিনটা করে ডাব খেতে পারেন এতে শরীরে পানি শূন্যতা পূরণ করবে। ডাবের পানিতে রয়েছে এনজাইম যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ডাবের পানি পান করার কারণে শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই নিয়মিত আমাদের ডাবের পানি খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও দেহে খনিজ পদার্থের চাহিদা মেটাতে ডাবের পানির ভূমিকা অপরিসীম।
ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং
সোডিয়াম রয়েছে যা দেহের খনিজ পদার্থ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম বাচ্চাদের গ্রোথ
বৃদ্ধির হওয়ায় সহযোগিতা করে ডাবের পানি। ডাবের পানিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে
ক্যালসিয়াম যা শরীরের হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আরো অন্যান্য
উপকারিতা রয়েছে ডাবের পানিতে যা আমাদের শরীর ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য
করে থাকে।
ডাবেরপানি খাওয়ার অপকারিতা কি
বিভিন্ন প্রকার রোগের কারণে বিভিন্ন রোগীকে অনেক সময় ডাবের পানি খাওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয় কেননা ডাবের পানি প্রাকৃতিক স্যালাইন এর কাজ করে এ কারণে কিছু কিছু সংখ্যক রোগীর এই স্যালাইন বর্জন করা বাঞ্ছনীয় তাদের জন্য ডাবের পানি ভীষণভাবে অপকারিতা ডেকে আনতে পারে। নিয়মিত যদি কেউ ডাব খেয়ে থাকে তার কিডনিতে কোন রোগ হবে না আবার কিডনি রোগীর জন্য ডাব খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ করেছেন চিকিৎসকরা।
কেননা কিডনির কার্যকরী ক্ষমতা যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে দেহের অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহ থেকে বের করতে পারেনা, এক্ষেত্রে ডাবের পানির পটাশিয়াম এবং দেহের তৈরি হওয়া পটাশিয়াম একত্রিত হওয়ার কারণে কিডনি ও হৃদপিণ্ড আঘাত হানতে পারে এবং এতে করে দুটোই অ কার্যকর হয়ে যেতে পারে যা একজন মানুষকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে পারে। এ কারণে যাদের শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম রয়েছে বা যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের নামের পানি পান করা ঠিক নয়। অনেক সময় আমরা রোগীর জন্য ডাবের পানি নিয়ে যাই এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডাবের পানি পান করানো উচিত।
আরো পড়ুন: ছাগলের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা কি
এছাড়াও যারা শরীরের ওজন কমাতে চান তাদের জন্য ডাবের পানি না খাওয়া উচিত ক্যালরি বাড়ায় আপনি যদি নিয়মিত ডাবের পানি খান তাহলে আপনার শরীরের ক্যালরি বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি ওজন কমাতে সক্ষম হতে পারবেন না। অন্যান্য মিষ্টি ফল এর তুলনায় ডাবের পানিতে চিনি পরিমাণ কম থাকে তবুও ডাবের পানি খেলে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি বৃদ্ধি পায় যা শরীর ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও শুনতে অবাক লাগলেও ডাবের পানি থাকা প্রচুর পরিমানে সোডিয়াম যা শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি করে যাদের শরীরে পূর্ব থেকেই রক্তের চাপ রয়েছে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি তাদের ডাবের পানি না পান করাই উচিত কারণ ডাবের পানি পান করার কারণে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হতে পারে যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে স্বাভাবিকভাবে দুই একটি ডাব খেতে পারেন।
ডাবের শাঁসের খাওয়ার উপকারিতা
আমরা এতক্ষণ ডাবের পানির বিভিন্ন রকম উপকারিতা এবং অপকারিতা বিষয়ে জেনেছি কিন্তু এখন আমরা জানবো ডাবের শ্বাসের কি উপকারিতা রয়েছে। অনেকেই আমরা ডাবের পানি খাওয়ার পরে ফেলে দেই নামের শ্বাস খেতে চাই না ডাবের শ্বাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে কাজ করবে।
ডাবের শাঁস কে অনেকে মালাই বলে থাকেন, এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় মনে করে আমরা অনেকেই ডাবের পানি খাওয়ার পরে বাকিটা ফেলে দেই আমরা জানলে অবাক হব যে ডাবের শ্বাসে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা আমাদের শরীরের জন্য কতটুকু উপকারী অতি ১০০ গ্রাম ডাবের শ্বাসে রয়েছে ৩৫০গ্রাম ক্যালোরি, ৩৫ গ্রাম ফ্র্যান্ট, ২২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩৫৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৫ গ্রাম কার্বোহাইডেট ও ৩.৩ গ্রাম প্রোটিন ।
আরো পড়ুন: ফুলকপি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং বিভিন্ন জাতের ফুলকপি চাষের নিয়মাবলী
এছাড়াও ডাবের সাথে রয়েছে আয়রন ম্যাগনেসিয়াম ভিটামিন সি ক্যালসিয়াম ভিটামিন
বি -১২ এবং বি-৬ ডাবের পানির মতোই ডাবের শ্বাসেও আমাদের জন্য বিভিন্ন রকম
উপকারিতা রয়েছে অনেকেই এটা না জানার কারণে ডাবের পানি খাবার পরে ডাবের শাঁস খেতে
অনিচ্ছুক প্রকাশ করেন। অনেকের ধারণা ডাবের পানির মতোই ডাবের শ্বাসে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ক্যালরি যা শরীরকে ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ডাবের শাঁস খেলে দীর্ঘ
সময় পেট ভরা থাকে যে কারণে ক্ষুধা লাগে না এবং খাবারের প্রতি বারবার ইচ্ছা হয়
না যে কারণে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ডাব চাষাবাদ এর নিয়মাবলী কি
যেহেতু বর্তমানে আমরা প্রতিনিয়তই খাচ্ছি এ কারণে আমাদের ডাবের চাহিদা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘামের থেকে শহরে ডাবের চাহিদা অধিক পরিমাণ এবং দাম হাতের নাগালের বাইরে। অনেকেরই একটি ক্রয় করে খাওয়া তার সাধ্যের বাইরে হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র দেশীয় ডাব দিয়ে এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয় বলে এখন বিভিন্ন জাতের ডাব চাষ করার জন্য কৃষকেরা আগ্রহী হয়েছেন। কেননা দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতির কারণে বর্তমানে ডাবের বাজার ও ঊর্ধ্ব গতিতে রয়েছে এবং কৃষকেরা ডাব চাষ করলে তার লাভ আশানুরূপ ভালো পাচ্ছেন।
বর্তমানে যে সকল ডাব চাষে কৃষকের আগ্রহী তা হলো ভিয়েতনামের বিভিন্ন জাত যা ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই গাছে ডাব ধরছে এবং ডাবের পরিমান অসংখ্য। দেশ যেখানে বছরে একবার বা দু বার পাওয়া যায় সেখানে অসংখ্য পরিমাণ ডাব পাওয়া যাচ্ছে ভিয়েতনাম জাতের সকল ডাব গাছে। এবং দেখতে অনেকটা মনে হবে মাটি থেকেই শুরু হয়েছে নাম ধরা। এ সকল জাতের ডাব চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হওয়ার কারণে বর্তমানে এ সকল জাতের ডাব চাষের আগ্রহী বাড়ছে কৃষকের মধ্যে। বিভিন্ন প্রকার মাধ্যমে এ সকল ডাবের চাষ করা হচ্ছে।
তবে এর জন্য কোন আবাদি জমির প্রয়োজন হচ্ছে না বাড়ির ভিতর জমিতেই ডাব চাষ করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। শুধুমাত্র পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিশ্রম এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর মাধ্যমে এই সকল জাতের ডাব চাষ করা যাচ্ছে। এবং আশানুরূপ ভালো ফলাফল পাচ্ছেন কৃষকেরা। কেননা অল্প দিনে এ সকল গাছে ডাব ধরছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাব ধরাতে কৃষকের খরসের পরিমান হাতের নাগালে আসছে এবং অধিক পরিমাণ ডাব উৎপাদনে দেশের ডাবের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছেন।
এ সকল দাম চাষ করার জন্য জমি চাষ করে সারিবদ্ধভাবে ডাবের চারা রোপন করা হচ্ছে এবং নিয়মিত পরিচর্যা মাধ্যমে ও বিভিন্ন প্রকার সার ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে কেননা যাতে গাছে কোন পোকার আক্রমণ না হয় এবং সুস্থভাবে একটি ডাবের চারা হতে একটি ডাবের গাছে রূপান্তরিত হয়। সঠিক পরিচর্যা এবং নিয়মের কারণে দুই থেকে তিন বছরের মাথায় এ সকল গাছে ডাব ধরছে এবং কৃষকের সাফল্য অর্জন করছে, এ সকল কারণে কৃষক এসব জাতের ডাবের চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন।
আরো পড়ুন:করোলা খাওয়ার উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা
উপসংহার
উপরোক্ত বিষয় হতে ডাব সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন তথ্য পেয়েছি যে সকল তথ্য হয়তোবা
আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। এর মাঝেও অনেক অজানা তথ্য রয়েছে যে সকল তথ্য
উপস্থাপন করা হয়নি। আরো অন্যান্য উপকারিতা ডাবের থাকতে পারে তবে এ সকল উপকারিতার
কথা উল্লেখ্য এসব কোন উপকারিতা ডাবের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে বা অপকারিতা গুলো
ডাবের মধ্যে রয়েছে। এজন্য অবশ্যই ডাব খাওয়ার পূর্বে আমাদের নিজের দেহের বিষয়ে
জানা থাকতে হবে কেননা ভালো কোন কিছুর আশায় অবশ্যই যেন আমাদের শরীরের কোন ক্ষতি
না হয় এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ডাব যেমন আমাদের শরীরে বিভিন্ন উপকারিতা অর্জন
করছে ঠিক তার বিপরীতে কিছু অপকারিতাও অর্জন করতে পারে এজন্য অবশ্যই অসুস্থ কোন
ব্যক্তি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডাব না খাওয়াই ভালো।
No comments:
Post a Comment