প্রতিবন্ধী শিশু কাকে বলে- What is a disabled child? - M.A IT FIRM

প্রতিবন্ধী শিশু কাকে বলে- What is a disabled child?

 প্রতিবন্ধী শিশু কাকে বলে- What is a disabled child?

আমাদের চারপাশে এমন কিছু শিশু দেখা যায় যারা স্বাভাবিক শিশুদের মতো নয়। তাদের দেহের গঠন আলাদা, তাদের আচরণ স্বাভাবিকের তুলনায় ধীর বা সমস্যাগ্রস্ত। এদের মধ্যে কেউ চোখে ভালো দেখতে পায় না, কারো হাঁটা তলায় অসুবিধা, কারো অন্যের কথা বুঝতে দেরি হয়, কেউবা বয়সে বড় হলেও শিশুদের মতো আচরণ করে। এসব শিশু কোন না কোন প্রতিবন্ধকতা শিকার। 

প্রতিবন্ধী শিশু কাকে বলে- What is a disabled child?

এরাই প্রতিবন্ধী শিশু। এদেরকে বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিশু বলা হয়। কারণ এদের পূর্ণ বিকাশের বিশেষ যত্ন ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। এসব প্রতিবন্ধীদের জীবনযাপনে সহায়তার জন্য এদের সম্বন্ধে আমাদের সবার সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরী এজন্য ৩রা ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়।

পোষ্ট সূচিপত্র:প্রতিবন্ধী শিশু কাকে বলে- What is a disabled child?

ভূমিকা

আমাদের আশেপাশে বা আমাদের সমাজে অনেক রকম প্রতিবন্ধী মানুষ বা শিশু দেখা যায়। এরা বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধীকতার শিকার। কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধী ,কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী ,কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কেউ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী রয়েছে। আমাদের সদা এদের সঙ্গে ভালো আচরণ ও ব্যবহার করা উচিত। এ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা শিশুদের প্রতি পরিবার এবং সমাজের বিভিন্ন রকম দায়িত্ব রয়েছে। অনেকাংশে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী শিশুরা সমাজ এবং পরিবারে বিভিন্ন রকম লাঞ্ছনার শিকার হন। সমাজ বা পরিবারে তাদেরকে খারাপ চোখে দেখা হয়। এবং তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয় যেটা তারা কখনোই আশা করেনা। আমাদের উচিত প্রতিবন্ধী শিশু সঙ্গে সুস্পষ্ট ব্যবহার করা এবং তাদেরকে সমাজে ভালো কিছু করার মতন করে তৈরি করা।

আরো পড়ুন: কিভাবে ফেসবুক থেকে ইনকাম করা যায়

শারীরিক প্রতিবন্ধী কাকে বলে-What is physically disabled?

শারীরিক প্রতিবন্ধী কাকে বলে-What is physically disabled?

যাদের হাত কিংবা বা অসম্পূর্ণ, দুর্বল থাকে, দেড় গঠন স্বাভাবিক নয় বা দেহের কোন অংশ ব্যবহারে অক্ষমতা থাকে, যার ফলে স্বাভাবিক জীবন যাপনে অসুবিধা হয়, তারাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। যেমন-পায়ের গঠনে ত্রুটি থাকলে চলাচলে এবং হাতের গঠনে তুরি থাকলে কাজ করতে অসুবিধা হয়। বুদ্ধিগত কোন সমস্যা না থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু সাধারণ বিদ্যালয়ের লেখাপড়া করতে পারে। তাদেরকে শারীরিক সমস্যার জন্য বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। যেমন-ক্রাচ, ওয়াকার, হুইল চেয়ার ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে চলাচলের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গায় শিডির স্থানগুলোতে ঢালু রাস্তার মতন এর ব্যবস্থা করলে তাদের চলাচলে বিশেষ সুবিধা থাকে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কাকে বলে-What is visually impaired?

চোখে দেখতে পারেনা বা চোখে দেখায় এমন ধরনের সমস্যা থাকে যার কারণে জীবনের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়। যারা চোখে আংশিক বা পুরোপুরি দেখতে পায় না তাদের কে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলা হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দেখতে সমস্যা হয় বলে চলাফেরা ও কাজকর্ম ধীরে হয়। এসব অসুবিধা তাদেরকে পরনির্ভর করে রাখে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতার মাত্রা বিভিন্ন ধরনের হয় যেমন-অন্ধ মাত্রার দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা এবং আংশিক মাত্রার দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা। অন্ধ মাত্রার প্রতিবন্ধীরা অন্ধকার ছাড়া কোন কিছুই দেখেনা বা উজ্জ্বল আলো আসার গতিপথ বলতে পারেনা। 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কাকে বলে-What is visually impaired?


এরা অংক, সংখ্যার ধারণা, শব্দ ভান্ডার, এসব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক শিশুর মতোই হয়। তারা স্পর্শ করে বস্তু চিনে, বস্তুর নাম শেখে। জন্মগত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা অন্যদের সাথে তাদের পার্থক্য বুঝতে পারে না, যেসব দৃষ্টিসম্পন্ন শিশু পরবর্তীতে সময়ে অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কারণে বৃষ্টি হারায় তাদের মনের কষ্ট অনেক বেশি। আংশিক মাত্রার প্রতিবন্ধীরা দূরের জিনিস দেখতে পারেনা। কাছের জিনিস অস্পষ্ট দেখলেও কাজ করতে তাদের অসুবিধা হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতির নাম ব্রেইল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে স্পর্শের মাধ্যমে উঁচু ফোটা দিয়ে বর্ণ ও সংখা তৈরি করে লেখাপড়া করানো হয়।

আরো পড়ুন: সিফিলিস রোগের লক্ষণ কি কি ও প্রতিকার

শ্রবণ প্রতিবন্ধী কাকে বলে-What is hearing impaired?

শ্রবণ প্রতিবন্ধী কাকে বলে-What is hearing impaired?

যাদের শোনার ক্ষমতা ঘাটতি, যার কারণে তাদের কথা শুনতে বা কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এদের ক্ষেত্রে বধির বা কালা এবং কানে খাটো ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়। একটি স্বাভাবিক শিশু শব্দ ও কথা শুনে, তারপর তারা কথা বলতে শেখে। যেহেতু শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা শব্দ বা কথা শুনতে পারেনা, তাই তারা কথা বলতে শেখেনা। জন্ম থেকেই বা কথা শেখার আগেই এই সমস্যা দেখা দিলে ভাষার বিকাশ হয় না। এই সমস্যা অল্প বা গুরুতর হতে পারে।

 অল্পমাত্রার সমস্যা হলে তারা জোরে কথা বললে কিছুটা শুনতে পায়। গুরুতর শ্রবণ প্রতিবন্ধী থাকলে কোন শব্দ শুনতে পায় না। তারা কথা বলার পরিবর্তে অঙ্গ ভঙ্গি দিয়ে বা ইশারায় নিজের চাহিদা প্রকাশ করে্ এদের কথা কেউ বুঝতে পারে না বলে সব সময় এরাই হতাশাগ্রস্ত থাকে।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কাকে বলে-What is intellectual disability?

যাদের বুদ্ধি বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম থাকে, যার ফলে শিশু তার সমবয়সীদের মত আচরণ করতে পারে না। শিশু বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা ধরা পড়ে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতারও বিভিন্ন মাত্র থাকে। যেমন-মৃদু, মধ্যম, গুরুতর

মৃদু বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা: এদের বুদ্ধি ৮ থেকে ১১ বছরের শিশুদের মত হয়। তারা প্রাপ্ত বয়সে ১১ বছরের স্বাভাবিক ছেলেমেয়েরা যেসব লেখাপড়া বা কাজ করার বুদ্ধি রাখে, ততটুকু পর্যন্ত প্রতিবন্ধী শিশুটি লেখাপড়া বা আচরণ করতে পারে। এদেরকে বিশেষ শিক্ষা দিয়ে আত্মনির্ভর করা হয়।

মধ্যম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা: এদের বুদ্ধি ৬ থেকে আট বছরের শিশুর মত হয়। তাই ১৮ বা তার চাইতে বেশি বয়সে মধ্যম মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুরা ৬ থেকে ৮ বছরের শিশুর মত আচরণ করে। এদের বাচন ত্রুটি ও নানা রকম শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। যেমন-ত্রুটিপূর্ণ উচ্চারণ, শিশুসুলভ ভাষা ইত্যাদি। এদের প্রশিক্ষণ দিলে কিছু শিখতে পারে। এই প্রশিক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে এদের পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা। এদেরকে কাইক শ্রমভিত্তিক কাজ শেখানো হয়। যেমন-প্যাকেট করা, সিল মারা, বেকারের কাজ ইত্যাদি।

গুরুতর বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা: এদের বুদ্ধির মাত্রা এত কম থাকে যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মত আচরণ করে। তারা খাওয়া, পরিচ্ছন্নতা, টয়লেট এর কাজ সম্পূর্ণ করতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকে। এদের অনেক ধরনের আচরণের সমস্যা দেখা যায়। অন্যের তত্ত্বাবধানে এদের জীবনধারণ করতে হয়। বিশেষ যত্ন ও প্রশিক্ষণে তাদের দৈনন্দিন তাদের অভ্যাস তৈরি করা যায়।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কাকে বলে-What is intellectual disability?

আমাদের সমাজে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের অনেক সময় পাগল বলে মনে করা হয়। প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা কোন মানসিক রোগ নয়। এটি এক ধরনের মানসিক অবস্থা বা অক্ষমতা। এই অক্ষমতা চিকিৎসা দিয়ে সারানো যায় না। তবে যে যতটুকু মাত্রায় প্রতিবন্ধী, সে বিশেষ যত্ন পেলে তার ক্ষমতা অনুযায়ী আচরণ করতে পারে। আবার বিশেষ যত্নের অভাবে তার ক্ষমতার পূর্ণবিকাশ হয় না। তার আচরণের অবনতি ঘটে। এছাড়া একই সাথে একাধিক প্রতিবন্ধী প্রতিবন্ধী যেমন-শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ ও বাক, বুদ্ধি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইত্যাদি। 

প্রতিবন্ধিতার মাত্রা গুরুতর হলে তা সহজে সনাক্ত করা যায়। এ ধরনের প্রতিবন্ধীরা খাবার ও টয়লেট কাজের জন্য প্রায় অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকে বা বিশেষ সরঞ্জাম ছাড়া তারা চলাফেরা করতে পারে না। মৃদু ও মাঝারি মাত্রার প্রতিবন্ধিতা সনাক্ত করা কিছুটা কঠিন হয়। একটি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ সম্পর্কে জানা থাকলে অতি সহজে শিশুটির প্রতিবন্ধী কিনা, তা বোঝা যায়। স্বাভাবিক শিশুর মতো প্রতিবন্ধীদের মৌলিক চাহিদা রয়েছে তাদের জন্য ভালোবাসা, উপযুক্ত খাবার, বিশেষ যত্ন ও প্রারম্ভিক উদ্দীপনার।

প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি পরিবারের দায়িত্ব

প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি পরিবারে দায়িত্ব সম্পর্কে জানার আগে প্রতিবন্ধী শিশুটির কারণে পরিবারটি কি ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়ে আমরা তা জেনে নেই যেমন-পরিবাটি যখন সন্তানের অস্বাভাবিকতা বুঝতে পারেন, তখন তারা চিকিৎসকের কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে সন্তানের প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে শোনার পর মা বাবা বিষয়টি মেনে নিতে পারেন না। 

তখন তারা বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে ছোট ছুটি করেন। এতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলে প্রারম্ভিক উদ্দীপনা ও বিশেষ যত্ন পেতে শিশুটির বিলম্ব হয়। সব পিতা-মাতার মনে প্রশ্ন জাগে, আমার সন্তানটি কবে ভালো হবে? সে কি কোনদিন কথা বলতে পারবে? কবে থেকে সে বয়স অনুযায়ী আচরণ করবে? তারা মনে করেন, অন্যান্য রোগের মত প্রতিবন্ধিতা চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব। তাদের শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে অনেক কষ্ট হয় যে, তাদের সন্তানের এই প্রতিবন্ধী টা সারা জীবনের জন্য বহন করতে হবে।

প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি পরিবারের দায়িত্ব

 প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম হওয়ার বিভিন্ন কারণে মায়ের মন ভেঙ্গে যায় যেমন-অনেক ক্ষেত্রে মাকে এ এরকম সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য দোষারোপ করা হয়। সন্তানের দেখাশোনার জন্য মায়ের উপর প্রচন্ড কাজের চাপ পড়ে। তখন সন্তানটির প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি উৎসাহ পান না। প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসা, বিশ্বের যত্ন, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য অতিরিক্ত শ্রম, সময়, ধৈর্য এবং যথেষ্ট পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয়। এগুলো ব্যবস্থা করতে পরিবারটিকে সমস্যায় পড়তে হয়।

আরো পড়ুন:কেন শসা খাবেন এবং এর প্রয়োজনীয়তা কি

প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি পরিবারের উল্লেখযোগ্য কিছু দায়িত্ব রয়েছে যেমন-

  1. প্রতিবন্ধী শিশুটি কে অন্য স্বাভাবিক শিশুর মত ভালোবাসা দিতে হবে। পরিবারের মধ্যে মা বাবা ভাই বোনের কাছে যদি সে ভালোবাসা পায়, তবে প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনেরাও তাকে সেভাবে ভালবাসবে।
  2. শিশুর প্রতিবন্ধিতা বোঝার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার প্রতিবন্ধীতার ধরণ অনুযায়ী বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ শিক্ষার উদ্দেশ্য থাকে তাকে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম শিখতে সাহায্য করা এবং তার ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম দেয়ার ব্যবস্থা করা।
  3. শিশুর জন্য বিশেষ যত্ন, চিকিৎসা সেবা ও সহায়ক উপকরণে ব্যবস্থা করতে হবে
  4. যে কোন অনুষ্ঠানে পরিবারে সবার সাথে তাকে বেড়াতে নিতে হবে। যেমন-পিকনিক, বিয়ে, শিশু পার্ক, মেলা ইত্যাদি।
  5. প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় অপুষ্টির শিকার বেশি হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে অপুষ্টির কারণে ও প্রতিবন্ধী হতে দেখা যায়। যেমন ভিটামিন এ এর অভাবজনিত কারণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তা দেখা যায়। এজন্য স্বাভাবিক শিশুর পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশুটির বয়স অনুযায়ী সুষম খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
  6. পরিবারে বাবা-মায়ের সাথে ভাইবোন বা অন্যান্য সদস্যদের প্রতিবন্ধী শিশুদের যত্নে অংশগ্রহণ করতে হবে।

প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি সমাজের দায়িত্ব

সমাজ কাদের নিয়ে? সমাজ আমাদের নিয়ে, আমাদের চারপাশের সকল কে নিয়ে। প্রতিবন্ধী শিশুরা সমাজের বড়ই অবহেলিত। তাদের অবহেলার কয়েকটি উদাহরণ যেমন-

  1. প্রতিবন্ধী শিশুরা কম বুঝতে পারে বলে অনেকেই এদেরকে বোকা, পাগল বলে, হাসি ঠাট্টা করে
  2. সমবয়সীরা প্রকাশ্যে তাদের উত্তক্ত করে। খেলায় নেয় না, তার সাথে কেউ মিশতে চায় না।
  3. আত্মীয়-স্বজন প্রায়ই বেড়ানোর প্রোগ্রামে এদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেন।
  4. এরা অসুস্থতার কথা ঠিকভাবে বোঝাতে পারে না। এ জন্য এদের চিকিৎসায় প্রচুর সময়ের দরকার হয়। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অবহেলা দেখা যায়।
  5. বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিক্ষক, কর্মচারী আন্তরিক না হলে এদের অযত্ন হয়।

প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তার জন্য কিভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত?

প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী আমাদের অবশ্যই তাকে বিশেষ শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন-দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি,, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী জন্য ইশারায় ভাষা শিক্ষা, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নিজের কাজ নিজে করতে পারার প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এছাড়াও, তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের উপার্জন করার জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যই থাকে শিশুটির যেন আত্মনির্ভর হতে পারে। এই কার্যক্রম তখনই সফল হবে, যখন শিক্ষকেরা তাদের প্রতি যত্নবান হবেন। তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ কণ্ঠস্বর, ধৈর্য, আন্তরিকতা একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে উৎসাহী করবে, স্কুলে আসতে আগ্রহী করে তুলবো। 

আরো পড়ুন: ইসলামে রিসালাত শব্দের অর্থ এবং এর গুরুত্ব কি

প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি সমাজের দায়িত্ব


আমরা আমাদের প্রতিবন্ধী শিশুটির আত্মীয়, প্রতিবেশী, সহপাটি কিংবা সমবয়সী হই তবে আমাদের যে সকল আচরণ তাদের সঙ্গে করা উচিত!

  1. যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিশুটিকে সঙ্গ দেওয়া, দেখাশোনার দায়িত্ব আমরা নিজে নিতে পারি
  2. প্রতিবন্ধীদের ধরন অনুযায়ী খেলাধুলার আয়োজন করতে পারি যেমন-দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য গল্প শোনানো, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সাথে দাবা খেলা, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর সাথে গান ,গল্প ,ছবি ,আঁকা ইত্যাদি।
  3. এলাকায় কোন প্রতিবন্ধী দরিদ্র হলে তার জন্য আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিতে পারি।
  4. ছোট শিশুরা প্রতিবন্ধী শিশুকে ভয় পায়। তার এই ভয় দূর করার জন্য আমরা ভূমিকা রাখতে পারি। প্রতিবন্ধী শিশুটির অসুবিধা গুলো ঠিকভাবে বুঝিয়ে দিলে ওই স্বাভাবিক শিশুটির প্রতিবন্ধী শিশুটির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সাহায্যকারী হয়ে উঠতে পারে।
  5. প্রতিবন্ধী শিশুটির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নানাভাবে তার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি।

উপসংহার

স্বাভাবিক শিশুরা সহজেই মেলামেশার মাধ্যমে তার চারপাশের পরিবেশ থেকে বিভিন্ন প্রকার উদ্দীপনা পায়। কিন্তু প্রতিবন্ধী শিশুদের পক্ষে তার চারপাশের জগতকে জানা ও বোঝা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এদের জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্ন, বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। আমাদের প্রচলিত সাধারন শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাভাবিক শিশুর উপযোগী করে তৈরি করা হয়। প্রতিবন্ধী শিশুরা সাধারণ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরবর্তী সময়ে এই শিক্ষা গ্রহণ সক্ষম হয় না। তার জন্য দরকার প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ শিক্ষা। শিশু যত ছোট অবস্থায় এই উদ্দীপনা বা বিশেষ শিক্ষা পায় তত তাড়াতাড়ি তার আচরণের উন্নয়ন ঘটে এবং তার সক্ষমতা বাড়ে।

 প্রতিবন্ধী শিশুটির পরিবারের প্রতি যতভাবে সম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। আমাদের সব কাজের মধ্যে বোঝাতে হবে যে প্রতিবন্ধী শিশুটির পাশে আমরাও আছি। সমাজের সবার অফুরন্ত ভালোবাসা তাদের এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তাদের জগতটাকে সহজ ও সুন্দর করে তুলবে। যে শিশুর বিকাশ বিলম্বিত বিশেষ যত্ন, মনোযোগ ও ভালোবাসায় সে আরও বেশি সক্ষম ও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। এজন্য আমাদের সকলের অবশ্যই প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি ইতিবাচক আচরণ করা উচিত।

No comments:

Post a Comment