জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান-জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের দরকার সুস্থ সবল এবং নিরোগ দেহ। স্বাভাবিকভাবেই আমরা সব সময় সুস্থ থাকতে পারিনা। কখনো কখনো কোনো একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে পরী। রোগ হলে দরকার ভালো চিকিৎসা আর ভালো চিকিৎসার জন্য সবার আগে দরকার সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়। বর্তমান সময়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত হয়েছে।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বের প্রয়োগে তৈরি হয়েছে রোগ নির্ণয়ের নতুন নতুন যন্ত্রপাতি। যার কারণে মানুষের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সনাক্তকরণে এবং সেগুলো নিরাময় আর প্রতিরোধে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করার অনেক সহজ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় আর চিকিৎসার নানা পদ্ধতি উন্মোচন করা হয়েছে।
পোস্ট সূচীপত্র:জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান-জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা
- ভূমিকা
- স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে এক্স রে এর ভূমিকা
- আল্ট্রাসনোগ্রাফি এর প্রয়োজনীয়তা
- রোগ নির্ণয়ে সিটি স্ক্যান এর ভূমিকা
- এম আর আই করার এর প্রয়োজনীয়তা
- ইসিজি এর কার্যপ্রণালী কি কি
- এন্ডোস্কোপি কাকে বলে
- উপসংহার
ভূমিকা
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির পেছনে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি সেগুলো দিয়ে অনেক
সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন চিকিৎসায় ওকরা রোগীর
বাহিক্য বিভিন্ন লক্ষণ দেখেই রোগ নির্ণয় করতেন। শরীরে তখন অনেক কিছু অনুমান করতে
হতো, সঠিকভাবে রোগ নিরূপণ করা যেত না। আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে শুধু যে অনেক
নিখুঁতভাবে রোগ নিরূপণ করা যাচ্ছে তা নয় অনেক কার্যকর ভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব
হচ্ছে।
আরো পড়ুন: হার্টের কাজ কি আমাদের দেহে হার্টের কার্যপ্রণালী
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে এক্স রে এর ভূমিকা
১৮৮৫ সালে উইলহেলোম রন্টজেন উচ্চশক্তি সম্পূর্ণ এক ধরনের রশ্নি আবিষ্কার করেন, যেটি শরীরের মাংসপেশি ভেদ করে গিয়ে ফটোগ্রাফিক প্লেটে ছবি তুলতে পারে। এই রশ্নির প্রকৃতি তখন জানা ছিল না বলে তার নাম দেওয়া হয়েছিল এক্স রে। এখন এক্সরে হচ্ছে আলোর মতোই বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ, তবে তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য আমাদের পরিচিত দৃশ্যমান আলো থেকে কয়েক হাজার গুন ছোট। তাই তার শক্তি ও সাধারণ আলো থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি। যেহেতু তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অনেক ছোট তাই আমরা খালি চোখে এক্স -রে দেখতে পাই না।
একটি কাঁচের গোলকের দুই পাশে দুটি ইলেকট্রন থাকে একটি ক্যাথোড অন্যটি এনোড। ক্যাথোড টাংস্টেনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ করে উত্তপ্ত করা হয়। তাপের কারণে ফিলামেন্ট থেকে ইলেকট্রন মুক্ত হয় এবং অ্যানোডের ধনাত্মক ভোল্টেজ এর কারণে সেটি তার দিয়ে ছুটে যায়। ক্যাথোড এবং অ্যানোড এর ভেতর ভোল্টেজ যত বেশি হবে ইলেকট্রন তত বেশি গতিশক্তি অ্যানোডের দিকে ছুটে যাবে। এক্স-রে টিউবে এই ভোল্টেজ একশ হাজার ভোল্টেজ এর কাছাকাছি হতে পারে। কাতার থেকে প্রচন্ড শক্তিতে ছুটে আসা ইলেকট্রন অ্যানোড কে আঘাত করে।
এই শক্তিশালী ইলেকট্রনের আঘাতে অ্যানোডের পরমাণুর ভেতর দিকের কক্ষপথের ইলেকট্রন কক্ষপথচ্যুত হয়। তখন বাইরের দিকে কক্ষপথের কোন একটি ইলেকট্রন সেই জায়গাটা পূরণ করে। তখন যে শক্তিটুকু উর্ধ্ব হয়ে যায় সেটি শক্তিশালী এক্স-রে হিসেবে বের হয়ে আসে। ঠিক কত তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের এক্সরে বের হবে সেটি নির্ভর করে অ্যানোড হিসেবে কোন ধাতু ব্যবহার করা হবে তার ওপর। এক্সরে অনেক ভাবে ব্যবহার করা যায়। তা নিম্নরুপ-
- স্থানচ্যুত হাড় ,হাড়ের ফাটল ,ভেঙে যাওয়া হাড় ইত্যাদি খুব সহজে সনাক্ত করা যায়।
- দাঁতের ক্যাভিটি এবং অন্যান্য ক্ষয় বের করার জন্য এক্স-রে ব্যবহার করা যায়।
- পেটের এক্সরে অন্তরের প্রতিবন্ধকতা সনাক্ত করা যায়।
- এক্সরে দিয়ে পিত্তথলি ও কিডনি পাথরের অস্তিত্ব বের করা যায়।
- বুকের এক্সরে করে ফুসফুসের রোগ যেমন যক্ষা, নিউমেনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়।
- এটি ক্যান্সার কোষ কে মেরে ফেলতে পারে তাই রেডিওথেরাপিতে এক্সরে চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
এক্স এর প্রয়োজনীয়তা বিকিরণ যেন শরীরে কোন ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য
প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এজন্য কোন রোগীর এক্সরে নেওয়ার সময়
এক্সরে করা অংশটুকু ছাড়া বাকি শরীর সিসা দিয়ে তৈরি এপ্রোন দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন না হলে গর্ভবতী মেয়েদের পেট বা তলপেটে অংশটুকু
এক্সরে করা হয় না।
আলট্রাসনোগ্রাফি এর প্রয়োজনীয়তা
আলট্রাসনোগ্রাফি দিয়ে শরীরের ভেতরে অঙ্গ পতঙ্গ, মাংসপেশ ইত্যাদি ছবি তোলা হয়, এটি করার জন্য খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ ব্যবহার করে তার প্রতিধ্বনিকে ব্যবহার করা হয়। শব্দের কম্পাঙ্ক১-১০ মেগাহার্টজ হয়ে থাকে বলে একেআলট্রাসনোগ্রাফি বলা হয়ে থাকে।আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্রে ট্রান্সডিউসার নামে এক স্ফটিককে বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে উদ্দীপ্ত করে উচ্চকম পার্টের আলট্রাসনিক তরঙ্গ উৎপন্ন করা হয়। আলট্রাসনিক যন্ত্রে এই তরঙ্গে একটা সরু বিমে পরিণত করা হয়।
আরো পড়ুন: রক্ত উৎপাদন ও সঞ্চালন-Blood Production And Circulation
শরীরের ভেতরের যে অঙ্গটির প্রতিবিম্ব দেখার প্রয়োজন হয় ট্রান্সডিউসারটি শরীরের উপরের সেখানে স্পর্শ করে দিনটিকে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়, রোগী সে যেন কোন ব্যথা বা অস্তিত্ব অনুভব করে না। যে অঙ্গের দিকে দিনটি নির্দেশ করা হয়, সেই অঙ্গের প্রকৃতি অনুযায়ী প্রতিফলিত, শোষিত বা সংবাহিত হয়। যখন ডিম মাংসপেশী বা রক্তের বিভিন্ন ঘনত্বের তলে আপতিত হয়, তখন তরঙ্গের একটি অংশ প্রতিধ্বনি হয়ে পুনরায় ট্রান্সডিউসার এ ফিরে আসে। এই প্রতিধ্বনিগুলোকে বৈদ্যুতিক সংকটে রূপান্তরের করে সমন্বিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবিম্ব তৈরি করে।
- আলট্রাসনোগ্রাফি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার স্ত্রীরোগ এবং প্রসূতি বিজ্ঞানে। এর সাহায্যে ভ্রুনের আকার গঠন, স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক অবস্থান জানা যায়, পশুতি বিজ্ঞানে এটি একটি দ্রুত নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
- আলট্রাসনোগ্রাফি দিয়ে জরায়ুর টিউমার এবং অন্যান্য পেলভিক উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়।
- পিত্ত পাথর হৃদযন্ত্রের ত্রুটি এবং টিউমার বের করার জন্য আলট্রাসনোগ্রাম ব্যবহার করা হয়, হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করার জন্য যখন আলতা সাউন্ড ব্যবহার করা হয় তখন এই পরীক্ষাকে ইকো কার্ডিওগ্রাফি বলে।
- এক্সরে এর তুলনায় আলট্রাসনোগ্রাফি অনেক বেশি নিরাপদ, তবুও এটাকে ঢালাওভাবে ব্যবহার না করে সীমিত সময়ের জন্য ব্যবহার করা হয় ট্রান্সডিউসার টি যেন কোন নির্দিষ্ট স্থানে বেশি সময়ের জন্য একটানা ডিম না পাঠায় সেজন্য আরেকটা সাউন্ড করার সময় ট্রান্সডিউসারটি ক্রমাগত নাড়াচড়া করতে হয়।
রোগ নির্ণয়ে সিটি স্ক্যান এর ভূমিকা
সিটি স্ক্যান শব্দটি ইংরেজি এর সংক্ষিপ্ত রূপ। টোমোগ্রাফি বলতে বোঝানো হয় ত্রিমাত্রিক বস্তুর একটি ফালির বা দ্বিমাত্রিক অংশের প্রতিবিম্ব তৈরি করা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই যন্ত্রে এক্সরে ব্যবহার করা হয়। সাধারণ এক্সরে করার সময় শরীরের ভেতরে একবার ত্রিমাত্রিক অঙ্গের দ্বিমাত্রিক একটি প্রতিচ্ছবি নেওয়া হয়। সিটি স্ক্যান যন্ত্রের একটি এক্সট্রা টিউব রোগীর শরীরকে অত্যাচারে ঘোরে এক্সরে নির্গত করতে থাকে এবং অন্যপাশে ডিটেক্টর প্রতিবিম্ব গ্রহণ করতে থাকে।
স্পষ্ট করার জন্য অনেক সময় রোগীর শরীরে বিশেষ দব্য ইনজেকশন করা হয়। বৃত্ত করে চারপাশে এক্সরে প্রতিবিম্ব পাওয়ার পর কম্পিউটার দিয়ে সেগুলো বিশ্লেষণ করা সমন্বয় করা হয় এবং একটি পরিপূর্ণ ফল এর অভ্যন্তরীণ গঠন পাওয়া যায়। একটি ফালির ছবি নেওয়ার পর সিটি স্ক্যান করার জন্য যন্ত্র রোগীকে একটুখানি সামনে সরিয়ে পুনরায় বৃত্তাকারে চারদিকে থেকে এক্সরে ছবি গ্রহণ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দ্বিতীয় আরেকটি ফালির অভ্যন্তর রংয়ের গঠনটির একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি তৈরি করে। সিটিস্ক্যান করে নিচের কাজগুলো করা সম্ভব যথা-
- সিটি স্ক্যানের সাহায্যে শরীরে নরম টিস্যু, রক্ত বাই শিরা বা ধমনী, ফুসফুস, ব্রেন ইত্যাদির পূর্ণাঙ্গ ছবি পাওয়া যায়।
- যকৃত, ফুসফুস এবং অগ্নাশয় এর ক্যান্সার সনাক্ত করার কাজে সিটি স্ক্যান ব্যবহার করা হয়।
- সিটি স্ক্যানের প্রতিবিম্ব টিউমারকে সনাক্ত করতে পারে। টিউমারের আকার ও অবস্থান সম্পর্কে বলতে পারে এবং টিউমারের আশেপাশের টিস্যুকে কি পরিমান আক্রান্ত করেছে সেটিও জানিয়ে দিতে পারে।
- মাথার সিটি স্ক্যান এর সাহায্যে মস্তিষ্কের ভেতরে কোন ধরনের রক্তপাত হয়েছে কিনা, ধমনী ফুলে গেছে কিনা কিংবা কোন টিউমার আছে কিনা সেটি বলে দেওয়া যায়।
- শরীরে রক্ত সঞ্চালন সমস্যা আছে কিনা সেটিও সিটিস্ক্যান করে জানা যায়
আরো পড়ুন: সুস্থ দেহ পেতে খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা
সিটি স্ক্যান করার জন্য যেহেতু এক্সরে ব্যবহার করা হয়, তাই গর্ভবতী নারীদের
সিটিস্ক্যান করা হয় না। ছবির কন্টাক্ট বাড়ানোর জন্য যে রং ব্যবহার করা হয় সেটি
কারো কারো শরীরে এলার্জির জন্ম দিতে পারে বলে সেটি ব্যবহার করার আগে সতর্ক থাকতে
হবে।
এম আর আই করার এর প্রয়োজনীয়তা
মানুষের শরীরের প্রায় ৭০ ভাগ পানি, যার অর্থ মানুষের শরীরে প্রায় সব অঙ্গ পতঙ্গে পানি থাকে। পানির প্রতিটি অণুতে থাকে হাইড্রোজেন এবং হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস হচ্ছে প্রোটন। শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগ করলে প্রোটনগুলো চৌম্বক ক্ষেত্রে দিকে সারিবদ্ধ হয়ে যায়, তখন নির্দিষ্ট একটি কম্পনের বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ পাঠানো হলে এই প্রোটনগুলো সেই তরঙ্গ থেকে শক্তি গ্রহণ করে তাদের দিক পরিবর্তন করে এবং এই প্রক্রিয়াকে বলে নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স।
পদার্থবিজ্ঞানের এই চমক পদ ঘটনাটির উপর ভিত্তি করে ম্যাগনেটিক রেজোনান্স ইমেজিং বা এমআরআই তৈরি করা হয়েছে। এম আর আই যন্ত্রটি দেখতে সিটিস্ক্যান যন্ত্রের মত কিন্তু এর কার্যপ্রণালী সম্পূর্ণ ভিন্ন। সিটিস্ক্যান যন্ত্র এক্সপ্রেস পাঠিয়ে প্রতিচ্ছবি নেওয়া হয়, এমআরআই যন্ত্রে একজন রোগী কে অনেক শক্তিশালী চৌম্বকক্ষের রেখে তার শরীরে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ দেওয়া হয়। শরীরের পানির অনুর ভেতরকার হাইড্রোজেন প্রোটন থেকে ফিরে আসা সংকেত কে কম্পিউটার দিয়ে বিশ্লেষণ করে শরীর ভেতরকার অঙ্গ পতঙ্গের প্রতিবিম্ব তৈরি করা হয়।
ইসিজি এর কার্যপ্রণালী কি কি
ইসিজি হলো (ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম ) শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। ইসিজি করে মানুষের হৃদপিন্ডের বৈদ্যুতিক এবং বেশি জনিত কাজকর্মগুলো পর্যবেক্ষণ করা যায়। বাইরের কোন উদ্দীপনা ছাড়াই হৃদপিন্ডের ক্ষুদ্র বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে এবং এই সংকেত পেশির ভেতর ছড়িয়ে পড়ে, যার কারণে হৃদস্পন্দন হয়। ব্যবহার করে আমরা হৃদপিন্ডের এই বৈদ্যুতিক সংকেত গুলো সনাক্ত করতে পারে। এর সাহায্যে হৃদপিন্ডের স্পন্দন হাড় এবং ছন্দময়তা পরিমাপ করা যায়। হৃদপিন্ডের মধ্যে রক্ত প্রবাহের একটি পরোক্ষ প্রমাণ দেয়। বৈদ্যুতিক সংকেত গুলো গ্রহণ করার জন্য শরীরে ইলেকট্রোড লাগাতে হয়। দুই হাতে দুই পায়ে দুটি এবং ছয়টি হৃদপিণ্ডের অবস্থান সংলগ্নে বুকের উপরে লাগানো হয়। প্রত্যেকটি ইলেকট্রড থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত গুলো সংগ্রহ করা হয়।
এই সংকেত গুলোকে যখন ছাপানো হয় তখন সেটিকে বলে ইলেকট্রো কার্ডিওগ্রাম। একজন সুস্থ মানুষের প্রত্যেকটি ইলেকট্রোড থেকে পাওয়া বৈদ্যুতিক সংকেতের একটি স্বাভাবিক নকশা থাকে। যদি কোন মানুষের হৃদপিন্ডের অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়, তখন তার ইলেকট্রন থেকে পাওয়া সংকেত গুলো স্বাভাবিক নকশা থেকে ভিন্ন হবে। সাধারণ কোনো রোগের কারণ হিসেবে বুকে ধরফরানি, অনিয়মিত কিংবা দ্রুত স্পন্দন বা বুকে ব্যথা হলে ইসিজি করা হয়। এছাড়াও নিয়মিত চেকআপ করার জন্য কিংবা বড় অপারেশনের আগে ইসিজি সাহায্য নেওয়া হয়। হৃদপিন্ডের যেসব অস্বাভাবিক অবস্থায় ইসিজি করা হয় সেগুলো হচ্ছে-
- হৃদপিন্ডের অস্বাভাবিক স্পন্দন অর্থাৎ স্পন্দনের হার বেশি বা কম হলে।
- হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকলে।
- হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে থাকলে।
ই সি জি মেশিনটি অত্যন্ত সহজ সরল মেশিন । এটি ব্যবহার করে শরীরের ভেতরকার
হৃদপিন্ডের অবস্থান এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। একজন রোগীর চিকিৎসার
জন্য এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুন: প্রতিবন্ধী শিশু কাকে বলে- What is a disabled child?
এন্ডোস্কোপি কাকে বলে
চিকিৎসার কারণে শরীরের ভেতরে কোন অঙ্গ বা গহবরের বাইরে থেকে সরাসরি দেখার প্রক্রিয়াটি নাম এন্ডোসকপি। যন্ত্র দিয়ে শরীরের ফাঁপা অঙ্গ গুলোর ভেতরে পরীক্ষা করা যায়। এন্ডস্কোপ জন্সে দুটি স্বচ্ছল থাকে। এই নল দুটি দিয়ে বাইরে থেকে রোগীর শরীরে নির্দিষ্ট অঙ্গের ভেতরে তীব্র আলো ফেলা হয়। এটি করা হয় অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে, আলো এই ফাইবারে পূর্ণ অভ্যন্তরীণীয় প্রতিফলনের মাধ্যমে প্রবেশ করে বলে নলটি সোজা থাকতে হয় না, আকাবাকা হতে পারে। রোগীর শরীরে ক্ষতিগ্রস্ত বা রোগাক্রান্ত জায়গাটি আলোকিত করার পর সেই এলাকার ছবিটি দ্বিতীয় স্বচ্ছ নলের ভেতর দিয়ে দেখা যায়। কোন বস্তু দেখতে হলে সেটি সরলরেখায় থাকতে হয়।
কিন্তু শরীরের ভেতরে কোন অঙ্গের ভেতরে সরলরেখায় তাকানো সম্ভব নয়। তাই ছবিটি দেখার জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করা হয় যেখানে আলোপূর্ণ অভ্যন্তরীণীয় প্রতিফলন হয়ে আঁকাবাঁকা পথে যেতে পারে। শরীরের অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট জায়গা সূক্ষ্মভাবে দেখার জন্য অত্যন্ত সরু ৫ থেকে ১০ হাজার অপটিক্যাল ফাইবারের একটি বান্ডিল ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেকটি ফাইবার একটি বিন্দুর প্রতিচ্ছবি নিয়ে আসে বলে সব মিলিয়ে অন্তত নিখুত একটি ছবি দেখা সম্ভব হয়। অপটিক্যাল ফাইবার অত্যন্ত শুরু হয় বলে পাশ থেকে দশ হাজার ফাইবারের বান্ডেল কয়েক মিলিমিটার থেকে বেশি হয় না। যে অঙ্গগুলো পরীক্ষা করার জন্য এন্ডোস্কোপি ব্যবহার করা হয় যথা-
- ফুসফুস এবং বুকের কেন্দ্রীয় বিভাজন অংশ।
- পাকস্থলী ক্ষুদ্রান্ত বিহদং বা কোলন।
- স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ।
- উদর এবং পেলভিস।
- মূত্রনালীর অভ্যন্তর ভাগ।
- নাসা গহব্বর, নাকের চারপাশে সাইনাস এবং কান।
এন্ডোসকপি করার সময় যেহেতু একটি নল সরাসরি ক্ষতস্থানে প্রবেশ করানো হয়, সেটি দিয়ে সেই ক্ষতস্থানে নমুনা নিয়ে আসা সম্ভব এবং প্রয়োজনে এটা ব্যবহার করে কিছু কিছু সার্জারি ও করা হয়।
উপসংহার
উপরোক্ত বিষয় হতে আমরা জানলাম আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের কি
পরিমান ভূমিকা রয়েছে। এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি
চিকিৎসা ক্ষেত্রে কতটুকু উন্নত সাধন করেছে। বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতির কারণে
চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা গুলো খুব সহজেই করা সম্ভব
হচ্ছে। এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এর কারণে বিভিন্ন জটিল রোগ খুব সহজেই নির্ণয় করা
সম্ভব হচ্ছে। বিষয় থেকে আমরা জানতে পারলাম বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি যা আমাদের
দেহের বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। এবং এ সকল যন্ত্রপাতির দ্বারা
আমরা আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগ খুব সহজেই নির্ণয় করতে পারি এবং এর সঠিক চিকিৎসা
গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
No comments:
Post a Comment