আমাদের সম্পদ ও মাটির বিভিন্ন প্রকারভেদ
মাটি আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। মাটিতে গাছপালা জন্মায় ফসল উৎপাদন হয়। আমাদের দায়িত্ব এই প্রাকৃতিক সম্পদকে নানা ধরনের দূষণ থেকে রক্ষা করা। একই সাথে মাটি আমাদের তেল, গ্যাস, কয়লা সহ নানা ধরনের খনিজ পদার্থ উৎস।
তাই আমরা একদিকে যে রকম এই খনিজ উত্তোলন করে দেশকে সমৃদ্ধ করব, অন্যদিকে লক্ষ্য রাখবো এই প্রক্রিয়ায় আমাদের মূল্যবান সম্পত্তি যেন অপচয় বা নষ্ট না হয়ে যায়। মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ হিউমাস নামে পরিচিত। হিউমাস আসলে অ্যামিনো এসিড, প্রোটিন, চিনি, এলকোহল, চর্বি, তেল, লিগনিন, টেনিং এবং অন্যান্য এরোমেটিক যৌগ নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ জটিল পদার্থ। এটি দেখতে অনেকটা কালচে রঙের হয়। মৃত গাছপালা আর প্রাণীর দেহ থেকে।
পোষ্ট সূচিপত্র: আমাদের সম্পদ ও মাটির বিভিন্ন প্রকারভেদ
- ভূমিকা
- মাটির বিভিন্ন প্রকারভেদ
- মাটি দূষণের কারণ ও ফলাফল
- কিভাবে মাটি সংরক্ষণ করা যায়
- মাটিতে অবস্থিত সাধারণ খনিজ পদার্থ কি
- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জ্বালানির উৎস হিসেবে মাটির ভূমিকা
- উপসংহার
ভূমিকা
মাটিতে গাছপালা জন্মায়, আর সেই গাছপালা থেকেই আমরা খাদ্যশস্য পাই। অক্সিজেন ছাড়া আমরা এক মিনিটও বেঁচে থাকতে পারবো না, সেই অত্যাবশকীয় অক্সিজেন গ্যাস ও আমরা পাই সেই গাছপালা থেকে। মাটি না থাকলে গাছপালা জন্মাতে পারতো না, আমরা খাদ্যশস্য আর অক্সিজেন পেতাম না। মাটিতে আমরা ঘরবাড়ি অফিস রাস্তাঘাট তৈরি করি। শুধু তাই নয় মাটির নিচ থেকে পানির বড় একটি অংশ আসে। এছাড়া আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজন জ্বালানি যেমন তেল গ্যাস কয়লা এর সিংহভাগ আমরা আহরণ করি মাটির নিচ থেকে।
নানা রকম খনিজ পদার্থ এই মাটির অংশে পাওয়া যায়। মাটি হলো নানারকম জৈব আর অজৈব রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ। বিভিন্ন এলাকার মাটির গঠন ভিন্ন হয়। মাটিতে বিদ্যমান পদার্থ গুলোকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা হয় এরা হলো খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ, বায়বীয় পদার্থ আর পানি। তবে এসব পদার্থ বেশিরভাগ সময়ে একটি আরেকটির সাথে মিশে এক ধরনের জটিল মিশ্রণ তৈরি করে। তাই একটিকে আরেকটি থেকে সহজে পৃথক করা যায় না। মাটিতে বিদ্যমান খনিজ পদার্থ গুলো অজৈব যৌগ হয়।
আরো পড়ুন: অটিজম কি? অটিজম বলতে কি বুঝি
মাটির বিভিন্ন প্রকারভেদ
সব জায়গার মাটি একই রকম হয় না একই জায়গার মাটি একেক রকম হয়। মাটির গঠন বর্ণ
পানি ধারণক্ষমতা এসব বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মাটিকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা
হয়েছে এগুলো হল মাটি, পলিমাতি, কাদামাটি, এবং দু'আস মাটি। মাটির প্রকারভেদ
নিম্নরূপ-
বালুমটি: বালু মাটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো যে এতে বিদ্যমান মাটির কণার
আকার সবচাইতে বড়, যার ফলে কণাগুলো মাঝে ফাঁকা জায়গা অনেক বেশি থাকে, তাই অনেক
বেশি বায় বায়ন হয়। বালু মাটি তোমরা হাতে নিলে দেখবে যে দানা যুক্ত। থাকে। বালু
মাটিতে থাকলে এটি চাষাবাদের জন্য সহজসাধ্য, কিন্তু এই মাটির ধারণ ক্ষমতা কম, তাই
পানি দিলে তা দ্রুত হয়ে নিষ্কাশিত যায় এবং গ্রীষ্মকালে, বিশেষ করে উদ্ভিদের
পানির স্বল্পতা দেখা যায়। তাই যে সকল ফসল নদী অনেক বেশি পানি লাগে সেগুলো বালুম
মাটিতে ভালো হয় না। তবে যখন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়, যার কারণে জমিতে
জলবদ্ধ সৃষ্টি হয় সেই সকল ক্ষেত্রে বালু মাটি চাষাবাদের জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে
পারে।
পলি মাটি: পলি মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা ভালো মাটির চেয়ে বেশি। পলিমাটির
চেনার উপায় সামান্য পানিযুক্ত মাটি নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ঘষলে অনুভূত হয় তাহলে
বুঝতে হবে এটি পলিমাটি। পলি মাটিতে পানির জন্য এটি হাতের সাথে লেগে থাকবে, যা
বালু মাটির বেলায় ঘটে না। পলিমাটি খুবই উর্বর হয় আর মাটির কণাগুলো বালু মাটির
কণার তুলনায় আকারে ছোট হয়। জমিতে পলি পড়ার কথা আমরা সবাই জানি। পলি মাটির
কণাগুলো ছোট হওয়ায় এরা পানিতে ভাসমান আকারে থাকে এবং এক পর্যায়ে পানির নিচে
থাকা জমিতে পলির আকারে জমা পড়ে। পলি মাটিতে জৈব পদার্থ এবং খনিজ পদার্থ থাকে।
কাদা মাটি: এই মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এরা প্রচুর পানি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এবং হাত দিয়ে ধরলে হাতে লেগে থাকে। এই মাটিতে মাটির কনা গুলো খুব সূক্ষ্ম হয়, ফলে কনা গুলো মধ্যকার রন্ধ্র খুব ছোট আর শুরু হয়। কাদামাটি থেকে সহজে পানি বা উদ্ভিদের মূল পচন সৃষ্টি করে। কাদামাটিতে ফসল চাষের জন্য জৈব সার দেওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে থাকে। এই মাটিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই মাটি দিয়ে ঘর সাজানোর তেজস্বপত্র এমনকি গহনা ও তৈরি করা হয়।
দো-আঁশ মাটি: এই মাটি বালু পলি আর কাদা মাটির সমন্বয়ে তৈরি হয়।দো-আঁশ মাটিতে থাকা বালু, পলি আর কাদামাটির অনুপাতের ওপর নির্ভর করে দু-আশ মাটির ধরন কেমন হবে।দো-আঁশ মাটির একদিকে যেমন পানি ধারণক্ষমতা ভালো আবার প্রয়োজনের সময় পানি জুতো নিষ্কাশনও হতে পারে। তাই ফসল চাষাবাদের জন্য দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী।
মাটি দূষণের কারণ ও ফলাফল
মাটি দূষণ আর পানি দূষণ একটি সাথে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত অর্থাৎ পানি দূষণের জন্য
যেসব কারণ দায়ী সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাটি দূষণের কারণ। মাটি দূষণের
নির্দিষ্ট কিছু কারণ নিম্নরূপ-
শিল্প কারখানা ও গৃহস্থালি বর্জ্য: আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময় শিল্প-কারখানা ও গৃহস্থালী বর্জ্য মাটির নিচে গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয় বা কখনো কখনো একটি খোলা জায়গায় বা ডাস্টবিনে জড়ো করে রাখা হয়। গ্রামাঞ্চলে প্রায় সব সময় বাড়ির আশেপাশেই জঞ্জাল খেলা হয়। এসব বর্জ্যের পচনশীল দ্রব্যগুলো জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পৌঁছতে থাকে এবং জৈবসারে পরিণত হয়। যেহেতু শিল্প কারখানা বর্জ্যে মার্কারি, জিংক, আর্সেনিক ইত্যাদি থেকে শুরু করে এসিড ক্ষার লবণ কীটনাশক এ ধরনের হাজার রকমের মারাত্মক ক্ষতিকর পদার্থ থাকে তাই এই জাতীয় দূষণের প্রভাব হয় বহুমাত্রিক।
যেমন মার্কারি আর অন্যান্য ধাতব পদার্থ মাটিতে
বিদ্যমান উপকারী অনুজীব গুলোকে মেরে ফেলে, যার ফলে মাটির উড়লতা নষ্ট হয়। আবার
মাত্র ফসলের ক্ষতি করে। ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ভেঙে হাইড্রোজেন সালফেট গ্যাস,
সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস কিংবা ফসফরাসের অক্সাইড তৈরি করে, যার কারণে মাটি দূষণ
হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হচ্ছে এ ধরনের দূষণের ফলে ক্ষতিকর পদার্থ
মাটি থেকে খাদ্য এবং খাদ্য থেকে প্রবেশ করে মারাত্মক এর কারণ হতে পারে।
আরো পড়ুন: সুস্থ জীবন যাপনে খাদ্যের ভূমিকা ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়া
তেজস্ক্রিয় পদার্থের নিঃসরণ: পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি কারখানা থেকে দুর্ঘটনা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে বের হয়ে
আসা তেজস্ক্রিয় পদার্থ দিয়ে মাটির মারাত্মক দূষণ হতে পারে। যেমন-রেডন,
রেডিয়াম, থোরিয়াম, সিজিয়াম, ইউরেনিয়াম, ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় পদার্থ শুধু যে
মাটির উন্নতই নষ্ট করে তা নয়, এরা পানি দেহের ত্বক ও ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণ
হতে পারে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় তার ফলে গাছপালাও মারা যায়। এছাড়া অন্যান্য
ক্ষতিকর পদার্থের মত এরাও খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে পানিতে প্রবেশ করে ভয়াবহ রোগ
সৃষ্টি করে।
কিভাবে মাটি সংরক্ষণ করা যায়
মাটি আমাদের একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের অন্য বস্ত্র বাসস্থান এবং
চিকিৎসা সহ অন্যান্য যে সকল চাহিদা রয়েছে তার সবগুলোই প্রত্যক্ষ কিংবা
পরোক্ষভাবে মাটির উপর নির্ভরশীল। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় এই
সম্পত্তি নানাভাবে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে এবং এর উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ঝড় বাতাস মাটি
উড়িয়ে নেয়, ভারী বৃষ্টিপাত নদীর পানির স্রোত বা নদী ভাঙ্গনে ইত্যাদি নানা
কারণে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ধ্বংসের পাশাপাশি মাটি ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
গাছপালাও এবং বন জঙ্গল কেটে পাহাড় কেটে শিল্প কারখানায় স্থাপন করে প্রতিনিয়ত
মাঠের ক্ষয় সাধন করে চলেছে। সাম্প্রতিককালে পাহাড় ধ্বসে চট্টগ্রাম এলাকার অনেক
পানাহানি ঘটেছে, যার মূল কারণ পাহাড় কেটে মাটির ক্ষয় সাধন। এই ক্ষয় সাধন বন্ধ
না হলে এটি আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে।
ক্ষয় রোধ করে মাটি সংরক্ষণ: মাটি সংরক্ষণে সবচেয়ে কার্যকর এবং সহজ কৌশল হল মাটিতে বেশি করে গাছ লাগানো। মাটিতে তৃণগল্য ও দুর্বার কিংবা অন্য যেকোনো ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ এবং অন্যান্য গাছপালা থাকলে ভারী বৃষ্টিপাত ও মাটির ক্ষয় সাধন করতে পারে না। গাছের শিকড় মাটির ভিতরে থাকায় সেটি মাটিকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে এবং সরে যেতে দেয় না। জমিতে ফসল তোলার পর গোড়া উঠছে না তুলে জমিতে রেখে দিলে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা বাড়ে অন্যদিকে তেমনি জমির ক্ষয় ও কমে যায়। বৃষ্টি হলে সাধারণত ঢালু জায়গায় মাটির ক্ষয় বেশি হয়। কাজেই ঢালু জায়গা দিয়ে যেন পানি প্রবাহিত না হতে পারে তার ব্যবস্থা করা, তবে এই কাজ সব সময় খুব সহজ নয়। গ্রাম এলাকায় অনেকেই ঘাস কেটে বা তুলে গাওয়াতে পশুকে খাওয়ায়। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে ঘাস মাটি থেকে তুলে ফেললে সেই মাটির ক্ষয় সাধন করে।
তাই ঘাস
কাটার সময় একেবারে মাটি ঘেঁষে কাটা উচিত নয়। এই ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে
হবে। অনেক সময় দেখা যায় গরু ছাগল ভেড়া এগুলো মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয় ঘাস
খাওয়ার জন্য। এরা যেন মাটির উপরে থাকা ঘাসের অবশিষ্ট এবং মাটির নিচে থাকা ঘাসের
শিকড় আকর না খেয়ে ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বনের গাছ কাটার ফলে অনেক সময়
বিস্তীর্ণ এলাকা গাছ শূন্য হয়ে পড়ে। কাজেই নতুন গাছ লাগানোর ব্যবস্থা না
করে বনের গাছ কখনো কাটা ঠিক নয়। অন্যথায় কোনভাবেই মাটি ক্ষয় সাধন রোধ করা যাবে
না।
আরো পড়ুন: সুস্থ জীবনের স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা
মাটিতে অবস্থিত সাধারণ খনিজ পদার্থ কি
মাটিতে রয়েছে নানারকম খনিজ লবণ পেন্সিলের সিস, টেল কম পাউডার, চিনামাটির
থালাবাসন এরকম হাজারো জিনিস ব্যবহার করি, তার অধিকাংশই মাটি কিংবা শিলা থেকে
পাওয়া খনিজ পদার্থ। বেশিরভাগ খনিজ পদার্থই কঠিন অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের
নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুক্তি থাকে। এখন পর্যন্ত প্রকৃতিতে প্রায় ২৫০০ রকমের
খনিজ পদার্থ পাওয়া গেছে। খনিজ পদার্থের ধাতব অথবা অধাতব দুটোই হতে পারে।
খনিজ পদার্থের ভৌত ধর্ম: খনিজ পদার্থগুলো সাধারণত দানাদার বা কোলা শাখার হয়। অনেক খনিজ পদার্থ আছে, যাদের রাসায়নিক সংযুক্তি একই কিন্তু তাদের ক্লাস গঠন ভিন্ন যে কারণে তাদের ভৌত ধর্ম ভিন্ন। যেমন-গ্রাফাইট ও ডায়মন্ড। যদি ও দুটি প্রধানতই কার্বন দিয়ে গঠিত কিন্তু গঠনের ভিন্নতার কারণে গ্রাফাইট নরম হয় কিন্তু ডায়মন্ড বা হীরা এখন পর্যন্ত জানা খনিজের মধ্যে সবচাইতে কঠিন খনিজ পদার্থ। খনিজ পদার্থ গুলো সাধারণত কঠিন হয় এবং একটি খনিজের কাঠিন্য এক এক রকম। বেশি কঠিন খনিজ খুব সহজেই কম কঠিন খনিজে দাগ কাটতে পারে না।
কাঠিন্য অনুযায়ী সবচেয়ে নরম খনিজ
হলো ট্যালক যা দিয়ে টেলকম পাউডার তৈরি হয় এবং সবচেয়ে কঠিন খনিজ হলো
হীরা বা ডায়মন্ড। খনিজ পদার্থের নির্দিষ্ট দ্রুতি থাকে। ধাতব খনির যেমন-পাইরাইট
স ধাতুর মতো দ্রুতি প্রদর্শন করে অর্থাৎ অনেকটা ধাতুর মতই চকচক করে। খনিজ হীরাও
ধাতু এবং এটিকে দেখে সাধারণ কাচের মতো মনে হতে পারে কিন্তু এটি কাটার পর এর
দ্রুতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিছু কিছু খনিজ পদার্থ আছে যেগুলো খুব স্বচ্ছ এবং এর
মধ্যে আলো প্রবেশ করতে পারে। যেমন কোয়ার টস বা সিলিকা, আবার কিছু কিছু খনিজ
পদার্থ আছে যার মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করলেও এর মধ্য দিয়ে কোন বস্তু দেখা যায়
না যেমন-এরাগোনাইট।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জ্বালানির উৎস হিসেবে মাটির ভূমিকা
বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক জ্বালানির মধ্যে অন্যতম হলো প্রাকৃতিক গ্যাস,
কয়লা এবং পেট্রোলিয়াম। এছাড়া রান্নার কাজে ব্যবহৃত কাঠের খড়ি, গাছের পাতা,
পাটকাঠি ধানের গোড়ায় এবং খড় বা গোবর দিয়ে তৈরি লাকড়ি এগুলোকে প্রাকৃতিক
জ্বালানি হিসেবে গণ্য করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত গ্যাস কয়লা ও
পেট্রোলিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নরূপ-
প্রাকৃতিক গ্যাস: বাসায় গ্যাসের চুলা স্টেশন থেকে গাড়িতে গ্যাস নেওয়া
হয় তা আসলে প্রাকৃতিক গ্যাস। যা মূলত মিথেন গ্যাস তবে সামান্য পরিমাণে অন্যান্য
পদার্থ যেমন ইথেন প্রোপেন এবং বিউটেন থাকে। এছাড়াও এতে অতি সামান্য পরিমাণ
কার্বন ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন ,সালফেট, আর্গন এবং হিলিয়াম থাকে। প্রাকৃতিক
গ্যাস তৈরি হয় মৃত গাছপালা ও পানি দেহ থেকে। লক্ষ লক্ষ বছর আগে মারা যাওয়া
গাছপালা ও প্রাণীর পচা দেহবাসীর কাদা ও পানির সাথে মিশে ভূগর্ভ জমা হয়। সময়ের
সাথে সাথে এগুলো বিভিন্ন রকম শিলা স্তরে ঢাকা পড়ে শিলা স্তরের চাপে পচা শেষ
ঘনীভূত হয় এবং প্রচন্ড চাপে ও তাপে দেহ শেষে বিদ্যমান জৈব পদার্থ প্রাকৃতিক
গ্যাসে ও পেট্রোলিয়ামে পরিণত হয়।
পেট্রোলিয়াম: পেট্রোলিয়াম হল খনিজ তেল, অর্থাৎ খনিতে পাওয়া তরল
জ্বালানি পদার্থ। সাধারণত প্রাকৃতিক গ্যাসের সাথে খনিতে পেট্রোলিয়ামও থাকে।
প্রোপেন ও বিউটেন স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় হলেও উচ্চচাপে তরল
অবস্থায় থাকে বলে এরা পেট্রোলিয়ামের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া গ্যাসোলিন কেরোসিন
ডিজেল এগুলো সবই পেট্রোলিয়াম।
আরো পড়ুন: মানবজীবনের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব
কয়লা: হলো এক ধরনের পাললিক শিলা। এতে বিদ্যমান মূল্য উপাদান হচ্ছে
কার্বন। ভিন্ন পরিমাণে হাইড্রোজেন সালফার, অক্সিজেন কিংবা নাইট্রোজেন থাকে। কয়লা
একটি দাহ পদার্থ। তাই জ্বালানি হিসেবে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।, প্রাকৃতিক
গ্যাস আর খনি স্কেলের মত কয়লা ও একটি জীবাণুসু জ্বালানি হলেও এর গঠন প্রক্রিয়া
আলাদা। প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বছর আগে জলাভূমিতে জন্মানো প্রচুর ফার্ন, শৈবাল গুণ্য
ও অন্যান্য গাছপালা মোরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কয়লা তৈরি হয়েছে। গাছপালা বিদ্যমান
জৈব পদার্থ থাকা কার্বন প্রথমে জলভূমির তলদেশে জমা হয়। এভাবে জমা হওয়ার
কার্বনের স্তর আস্তে আস্তে সংস্পর্শে থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরকম
অবস্থায় কার্বনের স্তর আরো ক্ষয় হয়ে পানিযুক্ত স্পঞ্জের মত ছিদ্রযুক্ত জৈব
পদার্থের পরিণত হয়, যাকে বলা হয় পিট। অনেকটা হিউমাসের মত পদার্থ। পরবর্তীতে
উচ্চ চাপে ও তাপে এই পরবর্তীতে হয়ে কার্বন সমৃদ্ধ কয়লায় পরিণত হয়।
উপসংহার
আমরা জানলাম মাটির বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং মাটিতে থাকা আমাদের প্রয়োজনীয়
জ্বালানি সম্পদ খনিজ পদার্থ ও বিভিন্ন পদার্থ যা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও মাটির বিভিন্ন প্রকারভেদ যা মাটির কে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত করার জন্য
উপযোগী করে গড়ে তোলে মাটিতে বিদ্যমান পানির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে
গাছ পালার জন্য। মাটিতে পানি থেকে মাটির কণার মাঝে থাকা ফাঁকা জায়গাগুলোতে রা
রাধে। এই রন্ধের আকার আকৃতির উপর নির্ভর করে মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা।
এছাড়াও মাটি কিভাবে দূষণ হয় এবং এই দূষণ কিভাবে আমরা রক্ষা করতে পারি এই
ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত জানতে পেরেছি।
No comments:
Post a Comment