মানব জীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজন-বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিয়মাবলী - M.A IT FIRM

মানব জীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজন-বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিয়মাবলী

 

 মানব জীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজন-বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিয়মাবলী

শক্তি নানা রূপের মাঝে বিদ্যুৎ শক্তি। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি শক্তি, কারণ এটি দিয়ে আমরা আমাদের প্রাতাহিক জীবনে সবচাইতে বেশি কাজ করতে পারে। বিদ্যুৎ বা তড়িৎ আলো জ্বালায়, পাখা চালায়, রেডিও, ফ্রিজ, টিভি বা কম্পিউটার চালায়। 

কিভাবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে উন্নয়ন করছে-বিভিন্ন প্রযুক্তির বর্ণনা


বিদ্যুতের সাহায্যে রান্না করা যায়। এর ব্যবহারকে ভালো করে বুঝতে হলে আমাদের বিদ্যুৎ বা তড়িৎ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। স্পষ্ট ধারণা থাকলে আমরা বিদ্যুতের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং অপচয় বন্ধ করার ক্ষেত্রে নিজেরা যত্নবান হতে পারব এবং অন্যদের সচেতন হতে সাহায্য করতে পারবো।

পোস্ট সূচিপত্র:মানব জীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজন-বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিয়মাবলী

ভূমিকা

আমরা আমাদের দৈনন্দিন এবং কর্মজীবনে বিদ্যুতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল এবং অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাপ্লাই বন্ধ হলে আমাদের সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় তখন আমরা সাময়িকভাবে ভিন্ন বিদ্যুৎ সাপ্লাই ব্যবহার করি। ঘরের লাইট ফ্যানের জন্য এই ভিন্ন বিদ্যুৎ সাপ্লাই চালু করার জন্য ২১ সেকেন্ড দেরি হলে আমাদের তেমন সমস্যা হয় না কিন্তু কম্পিউটার এবং এ ধরনের যন্ত্রপাতির বেলায় হঠাৎ বন্ধ করে বা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে যাই। কম্পিউটারের তথ্য নষ্ট হতে পারে এমনকি তার যন্ত্রপাতি ক্ষতি হতে পারে। মূল বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হওয়ার পর ভিন্ন সাপ্লাই দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখার প্রক্রিয়াটি কত দ্রুত করা যায় তার ওপর নির্ভর করে আইপিএস এবং ইউপিএস তৈরি করা হয়।

আরো পড়ুন:দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা কি

ইলেকট্রিক সার্কিট বা বিদ্যুৎ বর্তনী

আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ কিভাবে ব্যবহার করা হয়, সেটি বুঝতে হলে আমাদের ইলেকট্রিক সার্কিট বা বিদ্যুৎ বর্তনী সম্পর্কে কিছু বিষয় জানতে হবে

সিরিজে ব্যাটারি সেল: ব্যাটারি সেল কে সিরিজে লাগানো হলে ব্যাটারির বিভব যোগ হয়। ১.৫ ভোল্ট হলে দুটি ব্যাটারি সেল দিয়ে তিন ভোল্ট এবং তিনটি সেল দিয়ে ৪.৫ ভোল্ট বের করা যায়।

সমান্তরালে ব্যাটারি সেল: কয়েকটি সেল সমান্তরাল ভাবে লাগানো হলে তার বিভাবে পরিবর্তন হয় না কিন্তু বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে বেশি পারে কিংবা সার্কিটে বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারে।

সিরিজ সার্কিট: সিরিজ সার্কিটে একটি বাল অনেক উজ্জ্বলভাবে জ্বলবে কিন্তু দুটি বা তিনটি বাল্ব লাগানো হলে বিদ্যুৎ প্রবাহ অনুপাতিকভাবে কমে যাবে বলে বালগুলো অনুকূল ভাবে জ্বলবে। সিরিজ সার্কিট একটি সুইচ লাগানো হলে সুইচ অফ করার সাথে সাথে সবগুলো বাল্ব একসাথে নিভে যাবে।

সমান্তরাল সার্কিট: সমান্তরাল সার্কিটে আমরা যতগুলো বাল্ব লাগাই না কেন সবগুলোই দুই প্রান্তেই ব্যাটারি সেল থেকে সমান বিভব পার্থক্য বিয়োগ করা হয় বলে সবগুলো বাল বই সমান উজ্জ্বলতায় জ্বলবে। এই সার্কিটে ইচ্ছে করলে প্রত্যেকটা বাল্বের জন্য আলাদা সুইচ লাগানো যেতে পারে বা প্রত্যেকটি আলাদা ভাবে জালানো ও নিভানো সম্ভব।

কিভাবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে উন্নয়ন করছে-বিভিন্ন প্রযুক্তির বর্ণনা


ব্যাটারি সেলের বিভাগ পার্থক্য সব সময় সমান থাকে এগুলো ডিসি সাপ্লাই বলা হয়। এই সার্কিটে ইচ্ছে করলে প্রত্যেকটা বাল্বের জন্য আলাদা সুইচ লাগিয়ে প্রত্যেকটি আলাদা ভাবে জালানো এবং নেভানো সম্ভব। ব্যাটারি সেলের বিভাগ পার্থক্য সমান থাকে বলে এগুলো ডিসি সাপ্লাই বলা হয় এবং আমাদের বাসায় যে বৈদ্যুতিক সাপ্লাই দেওয়া হয় সেগুলো প্রতি সেকেন্ডে ৫০ বার ধনাত্মক থেকে ৬০ঋণাত্মক বিভাবে পরিবর্তিত হয় বলে সেগুলোকে এসি বলা হয়। এই সাধারণ ব্যাটারি সেল বিভাগ পার্থক্য মাত্র 1.5b। সেই তুলনায় আমাদের বাসায় বিদ্যুৎ সাপ্লাই ২২০ ভোল্ট এখানে উল্লেখ্য বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ ভোল্ট থেকে বেশি হলে আমরা সেটি অনুভব করতে পারি এবং ২২০ ভোল্ট সাপ্লাই থেকে অনেক বড় ইলেকট্রিক শক খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এই ইলেকট্রিক শখের কারণে শরীরের ভেতর দিয়ে যথেষ্ট হলে মানুষ মৃত্যু হতে পারে

বাড়িতে বিদ্যুৎ বর্তনীর নকশা বা হাউজ ওয়ারিং

আমাদের প্রায় সবার বাড়িতেই বিদ্যুৎ  সংযোগ আছে। এই সংযোগ দেওয়ার পূর্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং বিতরণ করার জন্য একটি নকশা আঁকতে হয় বাসায় বিদ্যুৎ বিতরণের একটি নকশা কেমন হতে পারে সেটি দেখানো প্রয়োজন রয়েছে। বাড়িতে তড়িৎ সংযোগ এর জন্য সিরিজ বর্তনী উপযোগী নয়। কারণ সুইচ অন করলে একই সাথে সংযুক্ত সব বাল্ব জ্বলে উঠবে আবার অফ করলে সবগুলো একই সাথে অফ হয়ে যাবে। তার চাইতে বড় কথা সবগুলো সিরিজে থাকলে কোন বাল্ব বা ফ্যান প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ পাবে না ভাগাভাগি হওয়ার কারণে ভোল্টেজ কমে যায়। মূলত বাসায় তড়িৎ সংযোগ সমান্তরাল সংযোগ ব্যবস্থা মনে করা হয়। 

এখন হাউস ওয়াইরিং এর বিষয়বস্তু যেমন-মেন লাইন কে কিভাবে সংযোগ করে অন্যান্য উপাদান যেমন ফিউজ বা সার্কিট বেকার মেইন সুইচ plux socket distivision বাক্স এবং প্রয়োজনীয় বাতি বা পাখার সংযোগ দেওয়া হয় বা কিভাবে দিতে হবে। বাসায় বিদ্যুৎ প্রবাহের প্রধান তার দুটি একটি হলো জীবন্ত সাধারণ লাল রঙের হয়ে থাকে এবং অন্যটি নিরপেক্ষ তার সাধারণ কালো রং জীবন্ত তারে বিদ্যুৎ ভোল্টেজ ২২০ ভোল্ট থাকে। নিরপেক্ষ তার এখনও তড়িৎ ভোল্টেজ থাকে না যেহেতু এটিকে মাটির সাথে সংযোগ করে দেওয়া হয় এটি সার্কিট পূরণ করে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিত করে থাকে। মেইন তারটি ফিউজ বা সার্কিট বেকার হয়ে মিটারে যায়। 

আরো পড়ুন: আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি

এর মাধ্যমে বাড়িতে কি পরিমান বিদ্যুৎ শক্তি খরচ হবে তা মিটারে লিপিবদ্ধ হয়। মিটার হতে তার দুটি মেইন চুইছে যায়। এই সুইচের সাহায্যে বাড়ির ভিতরে বিদ্যুৎ প্রবাহ প্রয়োজন হলে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া যায়। মিন সুইস হতে তার দুটি ডিস্ট্রিবিউশন বক্সে যায়। সেখানে তার দুটি বিভিন্ন শাখা লাইন বিভক্ত হয়ে যায়। প্রত্যেক শাখা লাইনের জন্য পৃথক পৃথক ফিউজ বা সার্কিট বেকার থাকে। লাইটের জন্য ফাইভ এম্পিয়ার ফ্যানের জন্য ১০ এম্পিয়ার ও হিটারের জন্য ১৫ এম্পিয়ার এবং ব্লাক সকেট এর জন্য ৩০ এম্পিয়ার সার্কিট বেকার লাগানো হয়। 

কিভাবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে উন্নয়ন করছে-বিভিন্ন প্রযুক্তির বর্ণনা

এটা প্রত্যেকটি জীবন্ত তারের সংযোগ আছে এবং প্রত্যেকটি বাতি পাখার জন্য আলাদা আলাদা সুইচ সংযোগ আছে এবং প্রত্যেকটি বাতি বা পাখার জন্য আলাদা আলাদা সুইচ  সংযোগ দেওয়া আছে। বাড়িতে বৈদ্যুতিক ওয়ারিং দেওয়ার সময় বাতি বা পাওয়ার সুইজের যাবতীয় ফিউজ যেন জীবন্ত তারে সংযোগ হয়। সেদিকে বিশেষ করে নজর দিতে হবে। 

তাছাড়া সমস্ত তার পিভিসি বা যেকোনো অপরিবাহী পদার্থ দ্বারা মরাতে হবে। বর্তমানে ওয়ারিং কেবল কে সাধারণত দেওয়ালের প্লাস্টারের ভেতর দিয়ে টানা হয়। তাছাড়া সব ধরনের যন্ত্রপাতির জন্য ফিউজ সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি যেমন-ফ্রিজ টিভি ইত্যাদি জন্য উপযোগী ফিউজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় লোড নিতে পারে সে ধরনের কেবল ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় তার উত্তপ্ত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিদ্যুৎ বিশ্লেষণ বলতে কি বুঝি

 কোন দ্রবণ এর মধ্যে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রবাহিত করে এর অনুকূলকে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক অংশে বিভক্ত করার পদ্ধতিতে তড়িৎ বিশ্লেষণ বলে। তড়িৎ প্রবাহ করে দ্রবণের যে দ্রবণটি দুই ভাগে বিভক্ত বা বিশ্লেষণ করা হয় তাকে তড়িৎ দ্রব্য বা তড়িৎ বিশ্লেষণ পদার্থ বলে। আমরা আগে দেখেছি যে পরিবাহকের দুই পাশে ব্যাটারি সেল দিতে দিয়ে বিভব পার্থক্য তৈরি করলে মুক্ত ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়। যেটাকে আমরা বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রবাহ বলি। তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় দ্রবণের ভেতর দিয়ে কিভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হবে তড়িৎ বিশ্লেষণের বা ইলেকট্রোলাইসিসের সময় তড়িৎ দ্রবণটি ধনাত্মক এবং ধনাত্মক আয়নের বিভক্ত এবং ঋণাত্মক আয়নের প্রবাহ দিয়ে বিদ্যুৎ দ্রবনের প্রভাব করা হয়। 

ক্ষার কয়েকটি নিরপেক্ষ লবণ এসিড মিশানো পানি ইত্যাদি তড়িৎ যবন বা তড়িৎ বিশ্লেষণ পদার্থ। স্বাভাবিক অবস্থায় ইলেকট্রনের সংখ্যা নিউক্লিয়াসের অবস্থিত প্রোটনের সংখ্যার সমান হয়ে থাকে। কোন অনু পরমানু বা যৌগ মূল্যকে যদি স্বাভাবিক সংখ্যার ইলেকট্রনের চেয়ে কম বা বেশি ইলেকট্রন থাকে তাহলে তাকে আয়ন বলে। তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় তরিদ্র দ্রবণ ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আয়নে ভাগ হয়ে যায়।

প্রত্যাহিক জীবনে বিদ্যুৎ বিশ্লেষণের গুরুত্ব

তড়িৎ প্রলেপন: তড়িৎ বিশ্লেষণ করে একটি ধাতুর ওপর অন্য কোন ধাতুর প্রলে দেওয়াকে তড়িৎ প্রলেপন বলে। সাধারণত কোন কম দামি ধাতু যেমন তামা লোহা ব্রোঞ্জ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি জিনিসকে জলবায়ু থেকে রক্ষা করার জন্য কিংবা সুন্দর দেখানোর জন্য সেগুলোর ওপর সোনা বা রুপা নিকেল এর মূল্যবান ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়। দিতে হবে সেটি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে একটি পাত্রে রাখতে হবে। এটি হবে ক্যাথোড ইলেকট্রনিক। যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হবে তাকে অ্যানোড বলা হয়। দরিদ্র হিসেবে যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হয় তার কোন একটি লবণের দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এখন ব্যাটারি বা পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করে অ্যানোড থেকে ক্যাথডে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে ধাতুর তড়িৎ বিশ্লেষণের ফলে ক্যাথডে রাখা ধাতব বস্তুর ওপর প্রলেপ পড়ে যায়।

কিভাবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে উন্নয়ন করছে-বিভিন্ন প্রযুক্তির বর্ণনা


তড়িৎ মুদ্রণ: তড়িৎ প্রলেপের একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে হরফ ব্লক মডেল ইত্যাদি তৈরি করাকে তড়িৎ মুদ্রণ বলে। তড়িৎ মুদ্রণের জন্য প্রথমে লেখাটি সাধারণ টাইপের মোমের ওপর ছাপ নেওয়া হয়। এর উপরে কিছু গ্রাফাইট গুড়ো ছিটিয়ে একে তড়িৎ পরিবাহী করা হয়। তারপর কপার সালফেট দ্রবণে এটি ক্যাথডে হিসেবে ডুবানো হয় এবং একটি তামার পাতকে এনড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখন দ্রবণের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ চালালে মোমের ওপর তামার প্রলেপ পড়বে। প্রলেপ খানিকটা পড়লে ছাদ থেকে ঝাঁজে ছাপার কাজে ব্যবহার করা হয়।

আরো পড়ুন:ডিজিটাল মার্কেটিং করে মাসে লাখ টাকা আয় করার উপায়

ধাতু নিষ্কাশন ও শোধন: খুনি থেকে কোন ধাতু সাধারণ বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় না। এদের মধ্যে নানা ধাতুর মিশ্রণ থাকে যাকে আকরিক বলা হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণে সাহায্যে আকরিক থেকে সহজে ধাতু নিষ্কাশন এবং শোধন করা যায়। যে আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা হবে, সেটিকে অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যে ধাতু নিষ্কাশন করতে হবে তার কোন লবণের দ্রবণকে এবং তার ছোট একটি বিশুদ্ধ পাত কে ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই দ্রবণের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করলে আকরিক থেকে বিশুদ্ধ ধাতু নিষ্কাশত হয়ে ক্যাথোরে সঞ্চিত হয়ে থাকবে

বিদ্যুতের ক্ষমতা এর আলোকপাত

পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় কাজ শব্দটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে, কাজ এবং শক্তির একক ইচ্ছে জুল। শক্তি প্রয়োগ করে কাজ করা যায় এবং কাজ করার হার অর্থাৎ একক সময়ে সম্পূর্ণ কাজকে ক্ষমতা বলে। কোন তড়িৎযন্ত্র প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ তড়িৎ শক্তি ব্যয় করে কিংবা অন্য শক্তিতে তাপ, আলো যান্ত্রিক ইত্যাদি রূপান্তরিত করে তাকে তড়িৎ ক্ষমতা বলে।

কিলোওয়াট: কোন রোদ বা তড়িৎ যন্ত্রের দুই পাশের বিভব পার্থক্য এক ভোল্ট হলে যদি এর মধ্য দিয়ে এক এম্পিয়ার তড়িৎ প্রবাহিত হয় তবে ওই যন্ত্রের ক্ষমতা এক ওয়ার্ড। যখন বেশি বিদ্যুৎ ক্ষমতা ব্যবহৃত হয় তখন সেটাকে কিলোওয়াট বা মেগাওয়াটে প্রকাশ করা হয়।

তড়িৎ ক্ষমতার হিসাব: তড়িৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে আমাদের বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের তড়িৎ খরচের একটি বিল পাঠায়। এই প্রতিষ্ঠান মূল্য ঠিক করে দেয়। সেই অনুযায়ী আমরা তড়িৎ বা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে থাকি। সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রে লাইট ফ্যান কম্পিউটার কি পরিমাণ বিদ্যুৎ বা তড়িৎ ক্ষমতার প্রয়োজন হয় সেটি উল্লেখ থাকে। কাজেই সেখানে থেকে সহজে আমরা ব্যায়িত শক্তি বের করতে পারবো।

লোডশেডিং বলতে কি বুঝি

প্রত্যেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে এবং সে সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রেডে যোগ হয়। আগে বলা হয়েছে এই সাবস্টেশন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র এর মাধ্যমে গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন এলাকার চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কোন এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা যদি উৎপাদনের চেয়ে থেকে বেশি হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে সেখানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেনা। তখন বাধা হয়ে সাব স্টেশনগুলো এক এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য অন্য একটি এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এই প্রক্রিয়াটার নাম লোডশেডিং। সাবস্টেশন যখন আবার প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পায় তখন সেই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে।

আরো পড়ুন: অনলাইন থেকে ইনকাম করার উপায় কি

উন্নয়ন কার্যক্রমে বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার

একটি দেশের উন্নয়নের সাথে শক্তির ব্যবহার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি একটি দেশ কতটুকু উন্নত সেটি বোঝার প্রথম মাপকাঠি হিসেবে শক্তির ব্যবহারকে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের সবার প্রথম শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া উচিত। এই দেশে বিপুলসংখ্যক ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়া করে। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে চালানোর জন্য সেখানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। 

কিভাবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে উন্নয়ন করছে-বিভিন্ন প্রযুক্তির বর্ণনা

তাদের পড়াশুনা করার জন্য রাতে আলাদা দরকার হয় এবং নিশ্চিত করা না হলে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্কের সচল রাখতে হয় যার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের কোন বিকল্প নেই। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কৃষি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। দেশটি ছোট বলে কৃষি উপযোগী ভূমির পরিমাণ কম এবং সেটি আরো কমে আসছে। এই কৃষি ভূমিতে দুই বা ততোধিক ফসল ফুলিয়ে আমাদের দেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে। 

এই কারণে শুধু প্রাকৃতির কিসের উপর অপেক্ষা না করে কিসে জমিতে পানি শেষের ব্যবস্থা করতে হয় এবং শক্তির সরবরাহ ছাড়া সেটি কোনভাবেই সম্ভব না। পানি শেষের জন্য পাম চালাতে বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানোর প্রয়োজন হয়। চাষাবাদের জন্য সারের প্রয়োজন হয় এবং সার কারখানায় বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ ছাড়া প্রয়োজনীয় উৎপাদন সম্ভব নয়। জমি চাষ করার জন্য এবং ফসল কে প্রক্রিয়া করার জন্য ট্রাক্টর ব্যবহার করা হয় এবং ডাক্তারের জন্য প্রয়োজনীয় জালানীয় সরবরাহ থাকতে হবে। 

কৃষির পর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য শক্তি সরবরাহ প্রয়োজন সুস্থ দেহে থাকার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দরকার হয়। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি এবং বর্জ্য প্রক্রিয়া করার জন্য শক্তির দরকার হয়। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার জন্য শক্তির দরকার হয়। চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালে এক মুহূর্তের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে না।

উপসংহার

উপরোক্ত বিষয় হতে আমরা জানলাম আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের ভূমিকা কতটুকু। এবং বিদ্যুৎ ছাড়া যে আমাদের প্রত্যেকটি দিন অচল তা উপরোক্ত বিষয় হতে আমরা জানতে পেরেছি কেননা আমাদের প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি জিনিস বা যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও লোডশেডিং কেন হয় এবং এটা সমাধানের কি ব্যবস্থা সেই ব্যাপারে আমরা জানতে পেরেছি বিদ্যুৎ শক্তি কাকে বলে বিদ্যুৎ শক্তি প্রবাহ কেমন বা কিভাবে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয় এবং কোন কোন কাজের জন্য বা কোন যন্ত্রপাতির জন্য কি পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment