তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা - M.A IT FIRM

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

 

 তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

নৈতিকতা হচ্ছে এক ধরনের মানদন্ড যা আচরণ, কাজ এবং পছন্দের ক্ষেত্রে সহায়তা করে| ও অনুচিত্তের মাপকাঠি ও বটে, কেননা মানব ধর্ম এবং নৈতিকতা অঙ্গা অঙ্গী জড়িত। অনৈতিক ও বেয়াইনী এক বিষয় নয়। অনেক অনৈতিক কাজ আইনবিরুদ্ধ নয়, কিন্তু সকল আইন বিরুদ্ধ কাজ অবশ্যই অনৈতিক। তবে সাম্প্রতিককালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নানা ধরনের অনৈতিক এবং অন্যায় কাজের মাত্রা এত বেড়ে গেছে যে পৃথিবীর অনেক দেশেই সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করছে। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

কাজেই একসময় যে কাজটি শুধু অনৈতিক ছিল সেটি অনেক ক্ষেত্রে এখন বেআইনি হয়ে গেছে, অর্থাৎ সামনাসামনি কাউকে গালাগালি করে একজন পার পেয়ে যেতে পারে, কিন্তু ফেসবুকে কাউকে গালাগালি করে একজন জেলে চলে যেতে। আর এই অপরাধকে তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধ বলা হয়।

 পোস্ট সূচীপত্র: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

  • ভূমিকা
  • তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির বিষয়ে দশটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা
  • সাইবার ক্রাইম কাকে বলে এবং কি কি
  • সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে সাইবার আইন
  • উপসংহার 

ভূমিকা

অর্থ এবং প্রযুক্তি ব্যবহার আমাদের সম্পূর্ণ জানা প্রয়োজন রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক প্রকার ভুল করে থাকি যেগুলা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের উপরে একপ্রকার নিয়ন্ত্রণহীন আঘাত হানতে পারে। যেহেতু পৃথিবীর সব প্রায় সকল মানুষ কোন না কোন ভাবে তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত তাই এই ব্যবহারের নীতি এবং নৈতিকতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিয়ে নেওয়া উচিত। গুরুত্ব না দেওয়া হলে একজন অনৈতিক কাজ দিয়ে শুরু করে এবং খুব সহজেই অন্যায় এবং অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে পড়তে পারে। তাই সকল কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে নৈতিকতা সম্পর্কে অবগতি এবং যথাযথ রপ্ত হওয়ার কোন বিকল্প নেই।

আরো পড়ুন:তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির আমাদের জীবনে প্রয়োজনীয়তা

তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির বিষয়ে দশটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা

কম্পিউটার ইথিকস ইনস্টিটিউট ১৯৯২ সালে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপরে দশটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে:

  1. তুমি কম্পিউটার ব্যবহার করে অন্যের ক্ষতি করবে না
  2. অন্যের কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজে হস্তক্ষেপ করবে না
  3. অন্য কারো ফাইলে নাক গলাবে না
  4. না চুরির উদ্দেশ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করবে না
  5. মিথ্যা তথ্যের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করবে না
  6. লাইসেন্স বিহিন সফটওয়্যার ব্যবহার ও কপি করবে না
  7. বিনা অনুভূতিতে কম্পিউটার সংক্রান্ত অন্যের রিসোর্স ব্যবহার করবেন
  8. অন্যের কাজকে নিজের কাজ বলে চালিয়ে দেবে
  9. তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের আগে সমাজের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে
  10. কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় অন্যের ভালোমন্দ বিবেচনা করবে এবং শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করব

সাইবার ক্রাইম কাকে বলে এবং কি কি

কম্পিউটার, ইন্টারনেট কিংবা মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় উপরে বর্ণিত তথ্যপ্রযুক্তির গত নৈতিক নির্দেশনা গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা খুবই। আজকাল ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক ধরনের অনৈতিক এবং অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হয়। এর ভিতরে বহুল প্রচলিত অপরাধমূলক কাজগুলো নিম্নরুপ:

 হ্যাকিং: কোন কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, বেটার ওপর অনুমোদন ছাড়া অধিকার লাভ করার উপায় কে হ্যাকিং বলে। এতে ব্যক্তির তথ্যের বা সিস্টেমের ক্ষতিসাধন করা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে কোন ক্ষতি না করে শুধু নিরাপত্তা ত্রুটি সম্পর্কে কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে জানান দেওয়া হয়। যেসব ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ এই ধরনের কর্মে অপকর্মের সাথে জড়িত থাকে তাদেরকে হ্যাকার বলে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

ফিশিং: ফিশিং করার অর্থ ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীকে নকল বা ফেইক ওয়েবসাইটে নিয়ে কৌশলে তার বিশ্বাস তত অর্জন করা এবং তারপর ব্যবহারকারীর এক্সেস কোড, পিন নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, পাসওয়ার্ড, ব্যাংক ডিটেলস মত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে তাদের নানা ধরনের বিপদে ফেলা।

স্প্যামিং: অনাকাঙ্ক্ষিত বা অবাঞ্চিত ইমেইল কিংবা মেসেজ পাঠানো কে স্প্যামিং বলে। এই ধরনের কাজ যারা করে তাদেরকে স্প্যামার বলা হয়। যখন কোন ব্যবহারকারী কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করে বা কোন গ্রুপের মেসেজ বোর্ড এ প্রবেশ করেন তখন স্প্যামাররা  সেখান থেকে ইমেইল এড্রেস সংগ্রহ করে ব্যবহারকারীর ইমেইলে বিভিন্ন প্রতারণামূলক।

সফটওয়্যার পাইরেসি: সফটওয়্যার একটি বুদ্ধি ভিত্তিক প্রযুক্তি পূন্য, যা প্রোগ্রামারগণ পেশাগত দক্ষতা, মেধা আর মরণের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে তৈরি করে থাকেন এবং এগুলো তারাই স্বত্বাধিকারী হন। লাইসেন্সবিহীনভাবে বা স্বত্বাধিকার অনুমোদন ব্যতিক্রম এই ধরনের সফটওয়্যার কপি করা, নিজের নামে কিংবা কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন করে ব্যবহারের সুযোগ নেওয়া পাইরেসি এর আওতায় পরে।

আরো পড়ুন: প্রত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল এবং রিয়েলিটির প্রভাব কি

প্লেজিয়ারিজম: কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোন লেখা, সাহিত্যকর্ম, গবেষণা পত্র সম্পাদন কর্ম ইত্যাদি হুবহু নকল বা আংশিক পরিবর্তন করে নিজের নামে প্রকাশ করার কাজটি হল প্লেজিয়ারিজম। সঠিক সূত্র উল্লেখ্য সারা কোন কিছু রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহারই বেয়াইন কাজ তথা প্লেজিয়ারিজমের আওতায় পড়ে।

সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে সাইবার আইন 

সাইবার অপরাধ দমনে বিভিন্ন দেশের আইন চালু আছে। আমাদের দেশের ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর৫৭(১) ধারামতে, যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক্স বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে যা মিথ্যা ও অশালীন , ন যার দ্বারা আরো মানহানি ঘটে বা ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, আর এই ধরনের তথ্যগুলো মাধ্যমে বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

 পর্নোগ্রাফি আইন ২০১২ তে বর্ণিত আছে, কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মেইলের ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরে এবং 2 লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে আমাদের দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়, যারা আংশিক নিম্নরূপ:

  1. কোন ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠাময় বেআইন প্রবেশ করে প্রতিশোধন, বিনষ্ট করা অকার্য করার চেষ্টা কিংবা কম্পিউটার সিস্টেম নেটওয়ার্ক বা প্রোগ্রাম ধ্বংস করা বা অকার্যকর করতে পারবেনা।
  2. ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে পারবে না, সেখান থেকে কোন তথ্য বা অধিকাংশ বা উপাত্তের অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারবেনা।
  3.  ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক্স এর মাধ্যম ব্যবহার করে কারো কারো সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণা জালিয়াতি বা ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারবে না।
  4. রাষ্ট্রের অখন্ডতা, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য অপপ্রচার বা কার্যকালাপ, লাপ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা জাতিগত ঘৃণা উস্কানি বা বিভেদ সৃষ্টি করে কিংবা সামাজিকভাবে বিশৃঙ্খলা জন্ম দেয় এরকম কোন কার্যক্রম ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে করা যাবে না।
  5. ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে উদ্দেশ্যে পুনর্নিতভাবে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নষ্ট অপমান বা অপদস্ত করা কিংবা ভয় ভিত্তি বা হুমকি প্রদর্শন করা যাবে না।
  6. ইলেকট্রনিক্স বা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক, বীমা ইত্যাদি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে আর্থিক ক্ষতি করা কিংবা অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য চুরি করে তথ্য পাচার করা যাবে না।

আরো পড়ুন:কিভাবে মানব জীবনে জীব প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়

ডিজিটাল আইনের আওতায় উল্লেখিত কৃত অপরাধের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি এবং আর্থিক দন্ড প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। তাই আমাদের জীবনের অন্যান্য প্রতিটি সেক্টরের ন্যায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিবেক-বুদ্ধি ও বিবেচনা নৈতিকতার মানদন্ড হিসেবে ব্যবহার করে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি সহ সব ধরনের অপরাধমূলক কাজের প্রবণতা হতে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।

উপসংহার

উপরোক্ত বিষয় হতে আমরা জানতে পারলাম তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে কি কি ধরনের অপরাধমূলক কাজ করা যায় এবং এগুলো কতটুকু আইনীয় এবং বেআইনী তাই এই সকল বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রেখে তথ্য এবং প্রযুক্তিভিত্তিক সকল কর্মকান্ডগুলো চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে যে সকল অপরাধ মূল্য কর্মকান্ডে করা যায় সে সকল কর্মকান্ড হতে নিজেকে বিরত রাখতে হবে আমরা তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির সুনির্ভর এবং সঠিক ব্যবহার পরিচালনা করে যাব।

No comments:

Post a Comment