সুস্থ দেহ পেতে খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা
পুষ্টিবিজ্ঞান অনুসারে আমরা যা খাই তার সবই কিন্তু খাদ্য নয়| শুধু সেই সব আহার্য বস্তুকে এই খাদ্য বলা হবে, যেগুলো জীবদেহে বৃদ্ধি, শক্তি উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ এবং ক্ষয় পূরণ করে, এক কথায় দেহকে পুষ্টি সাধন করে| পুষ্টি হলো পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তু আহরণ করে খাদ্যবস্তুকে পরিপাক ও শোষন করা এবং আত্তীকরণ দ্বারা দেহের শক্তির চাহিদা পূরণ, রোগ প্রতিরোধ, বৃদ্ধি ও ক্ষয় পূরণ করা|
পুষ্টির ইংরেজি শব্দ নিউট্রিশন অপরদিকে খাদ্যের যেসব জৈব অথবা অজৈব উপাদান জীবের জীবনী শক্তির যোগান দেয়, তাদের একসঙ্গে পরিপোষক বা নিউট্রিয়েন্টস বলে| যেমন-খনিজ লবণ, ভিটামিন ইত্যাদি হচ্ছে নিউট্রিয়েন্স। পরিপোষক পরিপাকের প্রয়োজন হয় না। পানিরা খাদ্যের মাধ্যমে পরিপোষক গ্রহণ করে।
পোস্ট সূচীপত্র: সুস্থ দেহ পেতে খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা
- ভূমিকা
- শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং পুষ্টি গুরুত্ব
- আমিষ বা প্রোটিন শরীরের প্রয়োজনীয়তা
- স্নেহ পদার্থ অভাব জনিত রোগ ও প্রতিরোধ
- খাদ্য পান বা ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা
- খনিজ পদার্থ এবং পানির চাহিদা
- উপসংহার
ভূমিকা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য বা বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের
প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। খাদ্য উপাদান ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যেমন-শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং পানি। এগুলোর মধ্যে শর্করা,
আমিষ ও স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাট দেহ পরিপোষক খাদ্য। খাদ্যের স্নেহ এবং শর্করাকে বলা
হয় শক্তি উৎপাদক খাদ্য এবং আমি যুক্ত খাদ্যকে বলা হয় দেহ গঠনের খাদ্য।
ভিটামিন খনিজ লবণ ও পানি দেহ সংরক্ষক খাদ্য উপাদান এগুলো দেহের রোগ
প্রতিরোধে করতে সাহায্য করে থাকে।
আরো পড়ুন: ১০টি পুষ্টিগুণ খাবার যা আমাদের শরীরের নিত্য প্রয়োজনীয়
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং পুষ্টি গুরুত্ব
শর্করা হচ্ছে মানুষের প্রধান খাদ্য। কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন নিয়ে
শর্করা তৈরি হয়। শর্করা বর্ণহীন, বর্ণহীন এবং অল্প মিষ্টি স্বাদ যুক্ত। সরকার
আমাদের শরীরে কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং তাপ শক্তি উৎপাদন করে। বেশ কয়েক ধরনের
রয়েছে এবং এদের উৎস ভিন্ন ভিন্ন যেমন-
উদ্ভিদ উৎস
শ্বেতসার বা স্টার্চ: ধান, গম, ভুট্টা এবং অন্যান্য শস্য দানা স্টার্চের প্রধান উৎস। এছাড়া আলু, রাঙা আলু বা কচুতে শ্বেতসার বা স্টার্চ পাওয়া যায়।
গ্লকোজ: এটি চিনির তুলনায় মিষ্টি কম। এই শর্করাটি আঙ্গুর, আপেল,
গাজর, খেজুর ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
ফ্রকটোজ: আম, পেঁপে, কলা, কমলা লেবু প্রগতি মিষ্টি ফলে এবং ফুলের মধুতে ফ্রকটোজ থাকে। একে ফল শর্করাও বলা হয়ে থাকে।
প্রাণিজ উৎস
ল্যাকটোজ বা দুধ শর্করা: গরু ছাগল এবং অন্যান্য পানির
দুধে এই শর্করা থাকে।
গ্লাইকোজেন: পশু ও পাখি জাতীয় যেমন-মুরগি কবুতর প্রভৃতি প্রাণীর যকৃতে এবং মাংসপেশী তে গ্লাইকোজেন শর্করাটি থাকে।
পুষ্টির গুরুত্ব
আমাদের শরীরের পুষ্টিতে শর্করার অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।
শর্করা শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং তাপ শক্তি উৎপাদন করে।
জীবদেহে বিপাকীয় কাজের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয়, সেটি কার্বোহাইডেট
জাতীয় খাদ্য জারণের ফলে উৎপন্ন হয়। গ্লাইকোজেন পানি দিয়ে খাদ্য ঘাটতিতে বা
অধিক পরিশ্রমের সময় শক্তি সরবরাহ করে। সেলুলোজ একটি অপাচিত প্রাকৃতির শর্করা,
এটি আঁশযুক্ত খাদ্য এবং এটি আমাদের দৈনন্দিন মলত্যাগের সাহায্য করে এবং
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া খাদ্য প্রোটিন কিংবা ফ্যাটের অভাব
হলে শর্করা থেকে এগুলো সংশ্লেষ বা তৈরি হয়। শর্করা অভাবজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে
আমাদের প্রতিদিন প্রয়োজনীয় শর্করা জাতীয় খাদ্য খেতে হয়। খাদ্যে শর্করার
পরিমাণ আবার চাহিদার তুলনায় বেশি হলে অতিরিক্ত শর্করা শরীরের মেদ হিসেবে জমা
হয়।
আমিষ বা প্রোটিন শরীরের প্রয়োজনীয়তা
কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন এই চারটি মৌলের সমন্বয়ে আমিষ তৈরি হয়। শরীরে আমি পরিপাক হওয়ার পর সেগুলো অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয়। অর্থাৎ বলা যায় একটি নির্দিষ্ট আমিষের পরিচয় হয় কিছু এমাইনো এসিড দিয়ে। মানুষের শরীরে এ পর্যন্ত বিশ ধরনের অ্যামাইনো এসিডের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং এই এমাইনো এসিড হচ্ছে আমিষ গঠনের একক। উৎস দিয়ে বিবেচনা করতে গেলে আমিষ দুই প্রকার প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ্জ। পানি থেকে যে আমিষ পাওয়া যায় তা প্রাণিজ আমিষ। যেমন-মাছ-মাংস ডিম দুধ ছানা এগুলো প্রাণিজ আমিষ। উদ্ভিদ থেকে যে আমিষ পাওয়া যায় তা উদ্ভিজ্জ আমিষ যেমন-ডাল, সিমের বিচি, মটরশুঁটি বাদাম এগুলো হচ্ছে উদ্ভিজ্জ আমিষের উদাহরণ।
২০ টি অ্যামােইনো এসিডের মধ্যে ৮এসিড কে অপরিহার্য অ্যামােইনো এসিড বলা হয়। এই ৮ টি অ্যামােইনো এসিড ছাড়া অন্য সবগুলো অ্যামােইনো এসিড বেশি থাকে বলে এর পুষ্টিমূল্য বেশি। উদ্ভিজ্জ খাদ্যের মধ্যে ডাল, সয়াবিন, মটরশুঁটি বীজ এবং ভুট্টার মধ্যে পুষ্টিমূল্য বেশি এমন প্রোটিন পাওয়া যায়। অন্যান্য উদ্ভিজ্জ খাদ্যে অপরিহার্য অ্যামাইনো এসিড থাকে না বলে এদের পুষ্টিমূল্য কম। পানি দেহে গঠনের প্রোটিন অপরিহার্য। কোষের বেশি ভাগই প্রোটিন দিয়ে তৈরি। দেহের হাড়, পেশী, লোম, পাখির পালক, নখ, পশুর শিং এগুলো সবই প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। পানি দেহের শুষ্ক ওজনের প্রায় ৫০% হচ্ছে প্রোটিন।
আরো পড়ুন: কমলা লেবু খাওয়ার উপকারিতা কি
স্নেহ পদার্থ অভাব জনিত রোগ ও প্রতিরোধ
ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারলের সমন্বয়ে স্নেহ পদার্থ গঠিত হয়। আমাদের খাবারের প্রায় 20 ধরনের খ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। কঠিন স্নেহ পদার্থ গুলোকে চর্বি বলে। চর্বি হচ্ছে সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। সাধারণ তাপমাত্রায় এগুলো কঠিন অবস্থায় থাকে। যেমন-মাছ কিংবা মাংসের চর্বি। যে সব স্নেহ পদার্থ তরল, সেগুলোকে তেল বলে, তেল হচ্ছে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। সাধারণ তাপমাত্রায় এগুলা তরল থাকে। যেমন সয়াবিন তেল সরিষার তেল ইত্যাদি। উৎস অনুযায়ী স্নেহ পদার্থ দুই প্রকার যথা-
- প্রাণিজ স্নেহ: চর্বিষহ মাংস, মাখন, ঘি ,পনির, ডিমের কুসুম এগুলো হচ্ছে প্রাণিজ স্নেহ পদার্থের উৎস।
- উদ্ভিজ্জ স্নেহ: বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিজ্জ তেল স্নেহ পদার্থের উৎস।সরিষা, সয়াবিন, তিল, তিসি, ভুট্টা, নারকেল, সূর্যমুখী, পাম্প এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে স্নেহ পদার্থ পাওয়া যায়।
স্নেহ পদার্থের কাজ
- খাদ্যবস্তুর মধ্যে স্নেহ পদার্থের সবচেয়ে বেশি তাপ এবং শক্তি উৎপন্ন করে
- দেহের পুষ্টি এবং বৃদ্ধির জন্য স্নেহ পদার্থ অতি গুরুত্বপূর্ণ
- স্নেহ পদার্থ দেহ থেকে তাপের অপচয় বন্ধ করে এবং ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য ভান্ডার হিসেবে কাজ করে
- ত্বকের মসৃণতা এবং সজীবতা ধরে রাখে এবং চর্মরোগ প্রতিরোধ করে
- যেসব ভিটামিন নিউ জাতীয় পদার্থ দ্রবণীয়, সেগুলো শোষণে সাহায্য করে।
অভাব জনিত রোগ ও প্রতিরোধ
স্নেহ পদার্থের অভাবে চর্মরোগ, একজিমা ইত্যাদি দেখা দেয়। ত্বক শুষ্ক এবং খসখসে
হয়ে সুন্দর্য নষ্ট হয়। দীর্ঘদিন স্নেহ পদার্থের অভাব হলে শরীরের সঞ্চিত
প্রোটিন ক্ষয় হয় এবং দেহের ওজন কমে যায়। আবার শরীরে অতিরিক্ত স্নেহ পদার্থ জমা
হলে দেহে রক্ত চলাচলের ব্যাঘাত ঘটে এবং এ কারণে মেদবহুল দেহ সহজে রোগ আক্রমণ
করে।
খাদ্য পান বা ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা
খাদ্যে পরিমাণ মতো শর্করা, আমিষ এবং স্নেহ পদার্থ থাকার পরেও জীবের স্বাভাবিক
বৃদ্ধি এবং পুষ্টির জন্য বিশেষ এক ধরনের খাদ্য উৎপাদনে প্রয়োজন হয়। ওই খাদ্য
উৎপাদনকে ভিটামিন বলে। ভিটামিন পানির স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য
অপরিহার্য। ভিটামিন হচ্ছে জৈব প্রাকৃতির যৌগিক পদার্থ। আমরা যদি প্রতিদিন খাবার
থেকেই প্রয়োজনীয় ভিটামিন পেয়ে যেতে পারে। কয়েকটি ভিটামিন স্নেহজাতীয়
পদার্থের সঙ্গে দ্রবীভূত হয় যেমন-ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই , এছাড়াও
পানিতে দ্রবীভূত হয় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন সি
স্নেহের দ্রবণীয় ভিটামিন
- ভিটামিন এ: প্রাণিজ উৎসের মধ্যে ডিম, গরুর, দুধ ,মাখন ,সানা ,দই, ঘি, যকৃত, ও বিভিন্ন তেল সমৃদ্ধ মাছ বিশেষ করে কড মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ পাওয়া যায়। উদ্ভিজ্জ মধ্যে ক্যারোটিন সমৃদ্ধ শাকসবজি যেমন-লাল শাক ,কচু শাক, পাট শার্ট, কলমি শাক, ডাটা শাক, পুদিনা পাতা, গাজর ,মিষ্টি কুমড়া ,ঢেঁড়স, বাঁধাকপি ,মটরশুটি এবং বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন-আম ,পাকা পেঁপে, কাঁঠাল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে
- ভিটামিন ডি: একমাত্র প্রাণিজ উৎস থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।ে এই ভিটামিন সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশির স্বাদ যে মানুষের ত্বকে সংশ্লেষিত হয়। ডিমের কুসুম, দুধ এবং মাখন ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস। বাঁধাকপি, যকৃত এবং তেল সমৃদ্ধ মাছে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে, যা হাড় তৈরি কাজে লাগে। ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেট রোগ হতে পারে। দৈনিক চাহিদা থেকে বেশি পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে শরীরের ক্ষতি হয়।
- ভিটামিন ই: সব রকম উদ্ভিজ্জ তেল বিশেষ করে পাম তেল ভিটামিন ই এর ভালো উৎস। প্রায় সব খাবার এই কমবেশি ভিটামিন ই আছে। তাছাড়া শস্যদানার তেল, তুলা বীজের তেল, সূর্যমুখী বীজের তেল, ইত্যাদিতে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। মানুষের শরীরে ভিটামিন ই হলো এন্টি অক্সিডেন্ট, যেটি ধমনীতে চর্বি জমা রোধ করে এবং সুস্থতন বজায় রাখে। এছাড়া ভিটামিন ই কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং মানুষ এবং অন্যান্য পানির বার্ধক্য দূর করে।
আরো পড়ুন: সুস্থ জীবনের স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা
পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন
- ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: পানিতে দ্রবনীয় ১২ টি ভিটামিন বি রয়েছে। ভিটামিনের এই গুচ্ছ কে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বলা হয়। দেহের স্বাভাবিক সুস্থতার জন্য খাবারে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেহের বৃদ্ধি, স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কাজ, দেহকোষে বিপাকীয় কাজ, প্রজনন ইত্যাদি সম্পন্ন করার জন্য খাদ্যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের উপস্থিতি অতি আবশ্যক।
- ভিটামিন সি: টাটকা শাকসবজি এবং টাটকা ফলের ভিটামিন ছি পাওয়া যায়। শাক সবজির মধ্যে মুলা শাক, লেটুস পাতা, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, করোলা ইত্যাদিতে ভিটামিন সি আছে। ফলের মধ্যে, আমলকি, লেবু, কমলা লেবু, টমেটো, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদি ভিটামিন সি এর উৎস। শুকনো ফল ও বীজে এবং তিন জাত খাদ্যে এই ভিটামিন থাকে না। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের ত্বক , হাড়, দাঁত, ইত্যাদি কোর্সসমূহকে পরস্পরের সাথে জোড়া লাগিয়ে মজবুত গাঁথুনি তৈরি করে। শরীরের ক্ষত পুনর্গঠনে কাজে সাহায্য করে এবং দাঁত ও মারি শক্ত রাখে। স্নেহ আমিষ ও অ্যামাইনো এসিডের বিপাকীয় কাজের ভিটামিন সি এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
খনিজ পদার্থ এবং পানির চাহিদা
জীবদেহে স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টির জন্য ভিটামিনের মত খনিজ পদার্থ বা খনিজ
লবনই খুবই প্রয়োজনীয়। খনিজ পদার্থ প্রদানত কোষ গঠনে সাহায্য করে। প্রাণীরা
প্রধানত উদ্ভিজ্জ খাদ্য থেকে খনিজ পদার্থ পায়। আমরা শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম
মাছ এবং পানীয় জলের মাধ্যমে আমাদের খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করি। শরীরের
প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগত গুরুত্ব এবং অভাবজনিত সমস্যা গুলো কি কি তা
নিম্নরূপ-
লৌহ:লৌহ রক্তের একটি প্রধান উপাদান। প্রতি 100ml রক্তে লৌহের পরিমান পায় ৫০ mg। যকৃত, প্লীহা, অস্থিমঞ্জা এবং লোহিত রক্তকণিকায় এটি সঞ্চিত থাকে।লৌহের উদ্ভিজ্জ উৎস হচ্ছে ফুলকপির পাতা, নোটে শাক, নিমপাতা, ডুমুর, কাঁচা কলা, ভুট্টা, গম, বাদাম, বজরা ইত্যাদি।
ক্যালসিয়াম: এটি পানিদের হাড় এবং দাঁতের একটি প্রধান উপাদান।
মানুষের শরীরের মোট ওজনের শতকরা দুই ভাগ হচ্ছে ক্যালসিয়াম। খনিজ পদার্থের মধ্যে
দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। অস্থি এবং দাঁতে ফসফরাস ও
ম্যাগনেসিয়ামের সাথে যুক্ত হয়ে এর নব্বই শতাংশ শরীরে সঞ্চিত থাকে। রক্তে এবং
লসিকাত এর উপস্থিতি লক্ষণীয়। ক্যালসিয়ামের উদ্ভিজ্জ উৎস হচ্ছে ডাল, তিল,
সয়াবিন, ফুলকপি, গাজর, পালং শাক, কচুরশাক, লাল শাক, কলমি শাক, বাঁধাকপি এবং
ফল।
ফসফরাস: দেহে পরিমাণের দিক থেকে খনিজ লবণ গুলোর মধ্যে ক্যালসিয়ামের পরে ফসফরাসের স্থান। ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের মতোই হাড়ের একটি প্রধান উপাদান। ফসফরাস হাড়, যকৃত এবং রক্ত রসে সঞ্চিত থাকে। নিউক্লিক অ্যাসিড, নিউক্লিয় প্রোটিন তৈরি এবং শর্করা বিপাকের দ্বারা শক্তি উৎপাদনে ফসফরাস প্রধান ভূমিকা রাখে।
পানি: পানি খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান। মানবদের জন্য পানি অপরিহার্য। পানি ছাড়া চলতে পারে না। আমাদের দৈহিক ওজনের৬০%-৭০% হচ্ছে পানি। আমাদের রক্ত, মাংস, স্নায়ু, দাঁত, হাড় ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানির প্রয়োজন। দেহকোষ গঠন এবং কোষের যাবতীয় শরীরাবৃত্তির প্রক্রিয়া পানি ছাড়া কোনভাবেই সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়। পানির মাধ্যমে শরীর গঠনে নানা প্রয়োজনীয় উপাদান শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পরিবাহিত হয়। এটি জীবদেহের দ্রাবকের কাজ করে, খাদ্য উপাদানের পরিপাক ও পরি শোষণে সাহায্য করে।
উপসংহার
উপরোক্ত বিষয় হতে আমরা জানলাম সুস্থ দেহ পেতে খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা। বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে কাজ করে যাচ্ছে। এবং শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন ফসফরাস আমিষ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সুস্থ শরীর এবং সুস্থ দেহ পেতে সাহায্য করে আসছে। আমাদের সুস্থ শরীর পেতে স্নেহ পদার্থ বা খনিজ পদার্থের ভূমিকা ও অপরিসীম। এছাড়া ও খাদ্য উৎপাদন উৎপাদনে যে সকল বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে এ সকল বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি।
No comments:
Post a Comment