কিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ -এবং দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশল
বন্য, ঘূর্ণিঝড়, খরা ইত্যাদি নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশ লেগে আছে। কখনো কখনো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জনগণের নানারকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তার মধ্যে মূল সমস্যা হচ্ছে নেটওয়ার্কিং সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়।
দুর্যোগে জনমালের অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতিও আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় অন্তরায়। পরিবেশের ওপর মানুষের নানারকম হস্তক্ষেপের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পত্তি কালে মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
পোস্ট সূচিপত্র:কিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ -এবং দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশল
- ভূমিকা
- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
- দুর্যোগ সৃষ্টির কারণ প্রতিরোধ মোকাবিলার কৌশল
- মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশের গুরুত্ব
- প্রকৃতি রক্ষণশীলতার তাৎপর্য কি
- প্রকৃতির রক্ষণশীলতার বিভিন্ন কৌশল
- উপসংহার
ভূমিকা
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রতিটি স্থানে এখন পরিবেশগত সমস্যায় জর্জরিত। আমরা সকলেই এরকম সমস্যাগুলো অনুধাবন করতে পারছি। নানারকম পরিবেশগত সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। একদিকে যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা আবার অনেক পরিবেশগত সমস্যার মূল কারণ। আমরা সকলেই জানি বর্তমানে সারা বিশ্বে জনসংখ্যা প্রায় ৭ বিলিয়ন।
বর্তমানে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে করে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১০ বিলিয়ন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে 1950 সালের পর থেকে শুধু শুধু জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শতকরা প্রায় 80 ভাগ বনভূমি উজাড় হয়ে গেছে। সাথে সাথে হাজার হাজার বনজ গাছপালা এবং জীবজন্তুর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খোদ বাংলাদেশী হাজার হাজার একর আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে। এটি স্বাভাবিক কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যবস্ত্র বাসস্থান ইত্যাদি সব রকমের চাহিদা বেড়ে যায় এবং কর্মসংস্থানের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। কর্মসংস্থানের চাপ সামলানোর জন্য নতুন নতুন শিল্প কারখানা তৈরি করতে গিয়ে আবাদি জমি এবং বনভূমি পর্যন্ত উজাড় হয়ে যাচ্ছে এগুলো প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের নানারকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
আরো পড়ুন: সুস্থ জীবনের স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
আবহাওয়া জলবায়ু এবং তাদের পরিবর্তনের কারণে সম্পর্কে জানা দরকার। এখন আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল ও তার প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারি। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এর মাঝেই লক্ষণীয় পর্যায় চলে এসেছে নিচে তা উল্লেখ করা হলো-
ঋতুর পরিবর্তন: বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ এবং একসময় প্রতিটি ঋতুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এই ছয় ঋতুচক্রের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে দেখা যাচ্ছে। আসার ও শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল হলেও দেখা যাচ্ছে যে আশ্বিন মাসেও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে, শুধু তাই নয় তা অসময়ে বন্যার কারণে হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে শীতকালে ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এটিও লক্ষণীয় যে গ্রীষ্মকালে অনেক বেশি গরম পড়ছে এবং মাঝে মাঝে দেশের কোন কোন এলাকায় দিনের তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৪৮° সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। অন্যদিকে শীতের সময় কখনো কখনো অনেক বেশি কমে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক এই গরম আর শীতের কারণে কোথাও কোথাও পাননি পর্যন্ত ঘটছে।
বন্যা: নদীমাতৃক বাংলাদেশে বর্ণ একটি স্বাভাবিক ব্যাপার এবং অনেকাংশেই দরকারি। বন্যার ফলে জমিতে পলি পরে, যা জমির উর্বরতা বাড়ায় এতে ফসল উৎপাদন ভালো হয়। কিন্তু সম্প্রতিককালে জলবায় জনিত পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন এবং অসময়ে বন্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিগত দিনেও এ ধরনের বন্যা যে হয়নি তা নয় তবে এত ঘন ঘন হয়নি ১৯৮৮, ১৯৯৫, ১৯৯৮, ২০০৫ সালে বাংলাদেশে প্রলংয়করী বন্যায় জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের যে সকল অঞ্চল বন্যা প্রবণ নয়, যেমন যশোর, ঢাকা সে সকল অঞ্চলেও মাঝে মাঝে এখন বন্যায় প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে।
খরা: কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় খরা বাংলাদেশের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, যা বৃষ্টিপাতের উপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলছে। কোন কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত একেবারে কমে গিয়ে খরার সৃষ্টি করছে জলবায়ুজনিত সৃষ্ট করায় বাংলাদেশের ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
বনাঞ্চল: বাংলাদেশে একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন হল সুন্দরবন, যা শুধু যে জীববৈচিত্র পরিপূর্ণ এক বা তা নয়, এটি আমাদের মহামূল্যবান সম্পদ। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়াও এই অঞ্চলে সাইক্লোন, হারিকেন, প্রতিরোধে এই সুন্দরবন রক্ষা কবজ হিসেবে কাজ করে। ধরে এর বড় একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সমুদ্রের পানির উচ্চতা যদি 45 সেন্টিমিটার বাড়ে, তাহলে আমাদের একমাত্র এই ম্যানগ্রোভ বনের ৭৫% পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আর যদি সমুদ্রপৃষ্ঠে উচ্চতা এক মিটার বাড়ে, তাহলে প্রায় পুরো সুন্দরবন এবং এর চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।
সামুদ্রিক প্রবাল ঝুঁকি: সামুদ্রিক প্রবাল তাপমাত্রার প্রতি খুব সংবেদনশীল। সাধারণত ২২-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রবাল এর জীবন যাপনের জন্য উপযোগী। এই তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি বেড়ে গেলে তা প্রবালের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে কাজ করে। এক গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৬০ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যে পরিমাণ প্রবাল ছিল, ২০১০ সালে তার প্রায় ৭০% বিলীন হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি ছাড়াও না থাকার এর অন্যতম কারণ।
দুর্যোগ সৃষ্টির কারণ প্রতিরোধ মোকাবিলার কৌশল
বাংলাদেশের বন্যা একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই বন্যায় দেশের কোন না কোন অঞ্চলে ফসল, গাবাধি পশুর সহ এবং অন্যান্য সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হয়, যা মাঝে মাঝে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯০, ১৯৯৫, ২০০৪ এবং ২০০৭ সালের বন্যায় দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ১৯৭৪ সালে এই ক্ষতির মাত্রা এত বেশি ছিল যে সেটি বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই ভয়াবহ দুর্যোগ হওয়ার পেছনের কারণ কি বন্যা হওয়ার পিছনে বেশ কিছু জটিল কারণ আছে। যার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে নদ নদী গুলো পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া। ব্যবস্থাপনা সহ নানা কারণে নদ নদী ভরাট হয়ে যাওয়া নদ নদী গুলো পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। যে কারণে ভারী বর্ষণ বা উজানের অববাহিকা থেকে আসা পানি খুব সহজে সাগরে যেতে পারে না এবং নদীর ঝাঁপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট জোয়ারের কারণে উজানের পানি অনেক সময় নদ নদীর মাধ্যমে সাগরে যেতে পারেনা। ফলে নদনদী ও আশেপাশে এলাকায় বন্য সৃষ্টি হয়।
বন্যার পূর্বভাস ও সতর্কবাণী: বন্যা সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস এবং সতর্কবাণী প্রচার করেই বন্যা জনিত ক্ষতির পরিমাণ অনেকখানি কমানো যেতে পারে। বাংলাদেশের ৫৮টি নদীর উপস্থিতি স্থল হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটান। তাই সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। কাজেই আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে, যেন আগে থেকে এই সংক্রান্ত সব তথ্য পাওয়া যায় এবং তার ওপর ভিত্তি করে একটি ফল প্রশূ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এছাড়া নিচু এবং বন্যা প্রবল এলাকায় যেন জনবসতি গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য ভূমি ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বন্য নিয়ন্ত্রিত এবং করনীয় সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা বন্যা মোকাবেলায় অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। তাই এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভয়াবহ বন্যা হলে সরকারি উচু ভবন কিংবা স্থাপনা যেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সাময়িক আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করতে পারে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আবার উঁচু স্থানে আশ্রয় কেন্দ্র বা মালামাল সংরক্ষণ কেন্দ্র উঁচু রাস্তাঘাট উঁচু স্থানে বাজার কিংবা স্কুল ইত্যাদি তৈরি করে বন্যা মোকাবেলা করার যায়।
আরো পড়ুন: সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার উপকারিতা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা
সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়: সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো কয়েল অফ স্নাক্স বা সাপের কুণ্ডলী। সাইক্লোন স্যাটেলাইট ছবি থেকে দেখা যায় প্রচন্ড গতিবেগ সম্পূর্ণ বাতাস কুন্ডলিও আকারে ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থাৎ নিম্নচাপের কারণে যখন বাতাস প্রচন্ড গতিবেগে ঘুরতে থাকে তখন সেটাকে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলে। দক্ষিণ এশিয়াতে আমরা যেটাকে সাইক্লোন বলি আমেরিকাতে সেটাকে হ্যারিকেন এবং দূর পাচ্ছে দেশগুলোতে টাইফুন বলে।
সাইক্লোন সৃষ্টির কারণ ও করনীয়: যেহেতু সাইক্লোন সৃষ্টি হয় গভীর সমুদ্রে তাই এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সহজ সাধ্য নাই। তবে যে দুটি কারণ মূলত সাইক্লোন সৃষ্টি তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হলো নিম্নচাপ এবং উচ্চতা তাপমাত্রা। সাধারণত সাইক্লোন তৈরি হতে সাগরের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হতে হয়। দুর্ভাগ্যবশত বঙ্গোপসাগরে প্রায় সারা বছরই এই তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে। সমুদ্রের উত্তপ্ত পানি বাষ্পীয় ভবনের ফলে উপরে উঠে যখন জলকণায় পরিণত হয় তখন বাষ্পীয় ভবনের পাশে ছেড়ে দেয়। সে কারণে বাতাস উত্তপ্ত হয় এবং বাষ্পীয় ভবন আরো বেড়ে যায়, ফলে বায়ুমণ্ডল অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। সাইক্লোনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কি উপায়ে রয়েছে এ ব্যাপারে বলতে গেলে সাইক্লোন অত্যন্ত শক্তিশালী। একটি দুর্বল সাইক্লোন শক্তিতে মেগাট্রন শক্তির কয়েক হাজার পারমাণবিক বোমার সমান। তাছাড়া যেহেতু সাইক্লোন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাই এটি প্রতিরোধ করা প্রায় অসাধ্য। সাম্প্রতিক আমেরিকাতে ঝড়ের সময় সিলভার আয়োডাইড নামক রাসায়নিক দ্রব্য বাতাসে ছড়িয়ে পানিতে শীতল করে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ কমানোর চেষ্টা করা হলেও নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার কারণে এটি ঠিক ভাবে কাজ করেনি। ভবন কমিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা ভাবনা করা হয়। তবে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করা কখনোই বাস্তব ভিত্তিক নয়
মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশের গুরুত্ব
আমাদের জীবন ধারণের জন্য যে উপাদান আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাতাস। ছাড়া আমরা কতক্ষণ বাঁচতে পারি খুব বেশি হলে দুই কিংবা তিন মিনিট। পদার্থ ক্ষুদ্র করা থাকে তবে অক্সিজেনের সাথে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং প্রাণঘাতী ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো নানারকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে। একইভাবে এই রাসায়নিক পদার্থ গাছপালা, মাটি এবং অন্যান্য পানির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাতাসের মত পানিও আমাদের জীবন ধারণের জন্য খুবই জরুরী একটি উপাদান। নদ নদীর পানি দূষিত হলে সেখানে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে এবং পরিবেশ ভারসাম্য নষ্ট হবে। এবং পানির মতো পরিবেশের প্রতিটি আমাদের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। তাই এই পরিবেশ যদি না হয় তাহলে একসময় সেটি জিওবৈচিত্রের জন্য বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে এবং একসময় আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এই ব্যাপারে আমাদের নিজেদের যেমন সচেতন হতে হবে ঠিক সেরকম আশপাশে সবাইকে সচেতন করতে হবে।
প্রকৃতি রক্ষণশীলতার তাৎপর্য কি
আমাদের প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা। আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে বাতাস, পানি ,মাটি ,গাছপালা, প্রাণিজ সম্পদ ,সম্পদ তেল ,গ্যাস ইত্যাদি। আমাদের জীবন ধারণের জন্য প্রতিটি সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ। বাতাস পানি না থাকলে বা ধ্বংস হলে আমরা যেমন বাঁচতে পারব না, তেমনি তেল গ্যাস আর গাছপালা ছাড়াও বেঁচে থাকা অসম্ভব। আমরা যদি আমাদের প্রকৃতির সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা না নিয়ে গাছপালা বনজ সম্পদ নিধন বন্ধ না করি, বাতাস, পানি ইত্যাদি দূষণ বন্ধ না করি, তাহলে আমাদের এই প্রকৃতির এক সময় আর বসবাসযোগ্য থাকবে না এবং আমরা আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবো না।
প্রকৃতির রক্ষণশীলতার বিভিন্ন কৌশল
প্রকৃতিরক্ষণশীলতার বেশ কয়েকটি কৌশল রয়েছে তা নিম্নরূপ-
সম্পদের ব্যবহার কমানো: আমরা পরিমিত সম্পদ ব্যবহার করে সম্পদ রক্ষা করতে পারি। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক বাজার থেকে কিছু কিনে আনলে একটি নতুন প্যাকেট দেওয়া হয়। আমরা যদি একটি প্যাকেটে বারবার ব্যবহার করি তাহলে সম্পদের ব্যবহার সীমিত করা সম্ভব। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমরা শিশু ন্যাপকিন ব্যবহার করি। একটু খানি সতর্ক হলে এগুলোর ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া সম্ভব।
আরো পড়ুন: কিভাবে ফেসবুক থেকে ইনকাম করা যায়
দূষণ থেকে সম্পদ রক্ষা করা: আমাদের প্রকৃতি বা সম্পদ দূষিত হলে সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো নদ নদীর পানি। নদীর কথা বলা যেতে পারে, দূষণের ফলে এমন অবস্থা হয়েছে যে আজ আর বুড়িগঙ্গা নদীতে মাছ তো দূরের কথা কোন জলজ প্রাণী খুঁজে পাওয়া কঠিন। বাংলাদেশের অনেক নদী দূষণের শিকার হয়েছে। এসব দূষণ রোধ করা না গেলে এমন এক সময় আসবে যখন নদ নদীতে মাছই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনিয়ন্ত্রিত কল কারখানা যানবাহনের ধোয়া ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশের অনেক শহরে বিপদজনকভাবে বায়ু দূষণ হচ্ছে। বায়ু দূষণে পৃথিবীর প্রথম ১০০ টি শহরের মধ্যে বাংলাদেশের আটটি শহরের নাম রয়েছে।
ব্যবহৃত জিনিস ফেলে না দিয়ে তা থেকে নতুন জিনিস তৈরি করা: পুরাতন জিনিস একেবারে ফেলে না দিয়ে তা থেকে নতুন জিনিস তৈরি করে প্রকৃতি সংরক্ষণ করা যায়। আমাদের কালচারে সেটি আমরা বহু আগে থেকেই করে আসছি, কাথা হচ্ছে তার উদাহরণ। পুরাতন কাপড় বা শাড়ি ফেলে না দিয়ে সেগুলো দিয়ে কাঁথা তৈরি করা হতো। ঠোঙ্গা টায়ার থেকে স্যান্ডেল কিংবা গৃহস্থালি বর্জ্য থেকে জৈব সার এবং এ ধরনের নানা রকম জিনিসের কথা বলা যেতে পারে।
প্রাকৃতিক সম্পদ পুরোপুরি রক্ষা করা: প্রকৃতি রক্ষণশীলতার একটি অন্যান্য উপায় হল এর বিরোধিতা না করে একে রক্ষা করা এবং এতে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ না করা। অনেক দুষ্কৃতকারীরা সুন্দরবনে হরিণ, বাঘ এগুলো শিকার করে বা চুরি করে গাছ কাটে। শীতের পাখিকে ধরে বাজারে বিক্রি করে, সমুদ্র উপকূলে অনিয়ন্ত্রিত অপরিকল্পিত জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প গড়ে তোলে সমুদ্রের পানিকে দূষিত করা। এসব কার্যক্রম বন্ধ করাই হলো প্রকৃতি সংরক্ষণ। সুন্দরবনের খুব কাছে কলকারখানা বসে বায়ু দূষণ করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র নষ্ট করে। অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ অনেকাংশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, যা রোধ করা অতি আবশ্যক হয়ে পড়ছে।
উপসংহার
উপরোক্ত বিষয় হতে আমরা জানলাম কিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এবং আমরা কিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে পারি। এছাড়াও আমাদের প্রাকৃতিক যে সম্পদ গুলো রয়েছে এগুলো সুষ্ঠু ব্যবহার করে কিভাবে প্রকৃতি রক্ষা করা যায়। এবং বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় এবং সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার কার্যক্রমক ক্ষমতা আমাদের কিভাবে তৈরি করতে হবে। এছাড়াও দুর্যোগ মোকাবেলায় কি সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সঠিকভাবে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করতে পারব এবং দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম হব।
No comments:
Post a Comment